গল্প | উড়ান মেঘের দেশে - পর্ব-১২ | Oran megher deshe - Part-12
লেখিকা-ওয়াসিকা নুযহাত

একেকটি মূহুর্ত যেন অসহ্য দীর্ঘ! মুখে কাপড় বাঁধা থাকায় রাশিকা কথা বলতে পারছে না, জিব নাড়াতে পারছে না। গাল বেয়ে ঝরঝর করে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুজল। বোবা জন্তুর মতো একটা চাপা গোঙ্গানির শব্দ বেরিয়ে আসছে কণ্ঠ দিয়ে।
টানা অনেকটা সময় কব্জিতে বাঁধা দড়ি খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। হাসিখুশি, উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত এক তরুণী মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে এমন করুণ পরিণতির শিকার হবে এমনটা ভাবাই যায় না। এতো ভয় লাগছে! মনে হচ্ছে যেন হৃৎপিণ্ডটা জড়পদার্থ হয়ে আটকে গেছে কণ্ঠনালিতে। হাতে পায়ে গা শিউরে ওঠা কম্পন। এতক্ষণ পা দিয়ে মেঝের ওপর নিরবচ্ছিন্ন দাপাদাপি করছিল। একজন লোক এসে দুই পায়ের গোড়ালি দড়ি দিয়ে বেঁধে দিয়ে গেছে। ঘরটা বদ্ধ, স্যাঁতস্যাঁতে এবং অন্ধকার। রাশিকার মাথাটা গলার সাথে এমন ভাবে ঝুলে আছে যেন যেকোনো মুহূর্তে কাটা মুণ্ডুর মতো খসে পড়বে। মন উৎকর্ণ হয়ে আছে কারো পদধ্বনি শুনতে পাবার আশায়। কিন্তু তিন চারঘন্টা হয়ে গেছে কেউ এদিকে আসেনি। কী হবে কেউ যদি কখনও এখান থেকে তাকে উদ্ধার না করে? এই পাতালঘরের অন্ধকারেই মরে পঁচে থাকবে তার দেহ? এখানেই শেষ? আর কোনদিন কি তবে দেশে ফেরা হবে না? বাবা মায়ের সাথে দেখা হবে না? বাবা বারণ করেছিল বাবুর্চির চাকরি নিয়ে বিদেশ যেতে। বাবার শখ ছিল মেয়ে নিজের মতো ডাক্তার হবে। কিন্তু রাশিকার রান্নার প্রতি প্রবল ঝোঁক। রান্নার মধ্যে সে সৃষ্টিসুখের আনন্দ খুঁজে পায়। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়য়ে বিবিএ পড়ছে। পাশাপাশি নিজের রান্নার স্কুল আছে। ঢাকা শহরের নামীদামী ফাইভ স্টার হোটেলে বেশ কবার তার ডাক পড়েছে। কিন্তু সে যায়নি। রান্নাটা তার নেশা। পেশা নয়। এই ভালোলাগা নিয়ে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে চায় সে। কখন কী রান্না হবে সেই ফরমায়েশ দ্বিতীয় পক্ষের কাছ থেকে এলে রান্নায় কোনও আনন্দ বজায় থাকে না। ছোটবেলা থেকেই সমুদ্রকুঞ্জের প্রতি এক ধরণের অবসেশন কাজ করত। আর তুর্যয়ের ছবি দেখার পর মনে হয়েছিল এই অসাধারণ যুবকটির সাথে একটিবার দেখা করতে না পারলে জীবন বৃথা। ভুলেও কখনও ভাবেনি বহু আকাঙ্ক্ষিত এই স্বপ্নভূমিতে এসে জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। কী করবে এখন? এই বদ্ধ ঘরে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে থেকে মৃত্যুর প্রহর গুনবে? মৃত্যুর আগে কী করা উচিৎ মানুষের? তার বাবা মা হিন্দুধর্মের অনুসারী। সে নিজে কখনও ধর্ম কর্ম মন দিয়ে করেনি। এই কারণেই কি ঈশ্বর আজ তাকে এমন কঠিন শাস্তি দিচ্ছে? হায় ঈশ্বর! আমার মা বলে তুমি দয়ালু। এই অসহায় মেয়েটার প্রতি করুণা করো। আর কয়টা দিন এই মেয়েটাকে বাঁচতে দিলে কী এমন ক্ষতি হবে? রাজবাড়ি থেকে কি কেউ তার খোঁজ করবে না? এই মাটির নিচের আঁধার প্রকোষ্ঠেই একটা জীবন প্রদীপ সম্পূর্ণ নিভে যাবে, কিন্তু কেউ কোনদিন জানবে না!একটার পর একটা মিনিট কাটতে লাগল। পায়ের গোড়ালির কাছে পোকার মতো কী যেন কিলবিল করছে। রাশিকা পোকামাকড় ভয় পায়। সামান্য তেলাপোকা দেখলে লাফঝাঁপ দিয়ে পলায়ন করে অন্যত্র। এই মুহুর্তে সে টের পাচ্ছে সরীসৃপ একটি কীট কিলবিল করে পাজামার ভেতরে ঢুকে পড়েছে। সে হাত পা বাঁধা অবস্থায় কয়েকবার লাফানোর চেষ্টা করল। কোনো লাভ হলো না। অসহ্য ভয়, যন্ত্রণা আর অস্বস্তিতে দম আটকে আসার উপক্রম। ক্রমশ ঝাপসা হয়ে এলো চারপাশ। মাথার ভেতর এলোমেলো ভাবনার তুফান। হঠাৎ একটা মুখ ভেসে উঠল সামনে। নিষ্ঠুর এক যুবকের মুখ। এতো পাষণ্ড মানুষ হতে পারে? রাশিকা যদি ঈশ্বরের কৃপায় একটাবার এই নরক থেকে মুক্তি পায়, তবে তার প্রথম কাজ হবে ওই পাষণ্ড রাজকুমারকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া।
কতক্ষণ পেরিয়েছে জানে না রাশিকা, হঠাৎ পায়ের আওয়াজ কানে এলো। দরজার নব কেউ একজন ঘোরাচ্ছে। সেকেন্ড না গড়াতেই বিশ্রী একটা শব্দ করে দরজাটা হাট করে খুলে গেলো। দুটো ছায়ামূর্তি প্রবেশ করল অন্ধকার ঘরে। একটা ঘোলাটে আবছা আলো জ্বালানো হলো। রাশিকার হৃৎপিণ্ড তখনও গলার কাছে ঝুলে থেকে শ্বাসপ্রশ্বাসের যাতায়াত স্থগিত করে রেখেছে। যে দুজন ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছে তাদের একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ, অন্যজন তরুণ। এরাই কি বিকেল বেলার সেই ঘোড় সাওয়ারি কিনা রাশিকা তা এখন কিছুতেই মনে করতে পারছে না। তবে যে তরুণটি নিজেকে রাজপুত্র বলে পরিচয় দিয়েছিল সে এখানে উপস্থিত নেই। মধ্যবয়স্ক লোকটার গলায় একটা মাফলার জড়ানো।ঠোঁটে পান। রাশিকা কুঁইকুঁই শব্দে মাথা নেড়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। পুরুষ দুজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে মজা দেখছে। একজন অসহায় নারীর করুণ দশায় তারা আনন্দিত। তাদের মুখে পাশবিক হাসি। রাশিকার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল গড়িয়ে পড়ছে। চুল আর কপাল ঘামে জবজবে। তার পরনে এখনও রান্নার অ্যাপ্রন। চুলগুলো ঘাড়ের ওপর ছড়ানো। মধ্যবয়স্ক পুরুষটি তার মুখের সামনে ঝুঁকে বলল, ‘কী? কিছু বলতে চাও?’
অগাধ রাগ, অপমান আর কষ্টে রাশিকার মনে হল মস্তিষ্কের নার্ভ ছিঁড়ে যাবে। কণ্ঠনালী থেকে বেরিয়ে এলো বোবা গোঙানির আওয়াজ। মধ্যবয়স্ক পুরুষ পান খাওয়া ঠোঁট টেনে বিশ্রী ভাবে হাসল। তারপর রাশিকার মুখের বাঁধন আলগা করল। চিবুক আর ঠোঁট রক্তবরণ ধারণ করেছে। কম্পন মিশ্রিত কণ্ঠে কোন রকমে বলতে পারল,
- ‘প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি অন্য দেশের লোক। রাজবাড়িতে চাকরি নিয়ে এসেছি। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সবাই আমার খোঁজ করছে।’
তরুণ ছেলেটি এই কথা শুনে এমন ভাবে হেসে উঠল যেন এতো মজার কৌতুক আর হয় না। মধ্যবয়স্ক লোকটা রাশিকার পায়ের বাঁধন খুলতে লাগল। তার চোখের দৃষ্টি যেন কেমন বিশ্রী। ক্ষুধিত একটা ভাব। বুভুক্ষের মতো চেয়ে থেকে সে দৃষ্টি দিয়ে রাশিকার সারা দেহ গ্রাস করে নিচ্ছে। ভয় করছে রাশিকার ...প্রচণ্ড ভয়! হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে পৃথিবটাকে যত সহজ আর সুন্দর ভেবেছে এতকাল ততটা সুন্দর তো নয়ই বরং এর প্রকৃত রুপ অতিশয় কদাকার এবং কুৎসিত। পাশে দাঁড়ানো তরুণটি খুব সম্ভবত মদ্যপ। তার চোখের দৃষ্টি অস্থির। অবিন্যস্ত পদক্ষেপ। ঠিক সেই সময় লাইটহাউজের ঘড়িতে রাত আটটার ঘণ্টা বাজল। পাতালপুরীর বাসিন্দাদের কানে ক্ষীণ ভাবে প্রবেশ করল ঘণ্টাধ্বনি। মদ্যপ তরুণটি এগিয়ে এসে রাশিকার হাতের গিঁট খুলে দিল। বন্ধন্মুক্ত হবার সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো রাশিকা। পাজামার ভেতর পোকাটা এখনও উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। কিন্তু সে এখন জানে, পোকার চাইতে মানুষ বেশি ভয়ঙ্কর। ছুটে পালানো সম্ভব না জেনেও একটা পা বাড়িয়ে দিল সামনে। অমনি মধ্যবয়স্ক লোকটা খপ করে ওর বাহু জড়িয়ে ধরল। একটা রুদ্ধশ্বাস আর্তনাদ ছুটে এলো গলা দিয়ে , ‘ছাড়! ছাড় আমাকে!’
লোকটা ছাড়ল না, উপরন্তু বলপ্রয়োগ করে জোরপূর্বক তাকে মেঝেতে শুইয়ে দিল। একটা বীভৎস চিৎকারে ফেটে পড়ে উঠে বসার চেষ্টা করল রাশিকা। লাভ কিছুই হলো না। লোকটা ততক্ষণে জানোয়ারের মতো হামাগুড়ি দিয়ে ওর দেহের ওপর উঠে এসেছে। শরীর অতিশয় দুর্বল এবং ক্লান্ত। দুর্বল শরীর নিয়েই সে প্রাণপণে ধ্বস্তাধস্তি করে যাচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় পুরুষটি যখন দুপাশ থেকে হাত চেপে ধরল তখন শুধু বলির পাঁঠার মতো আর্তনাদে ফেটে পড়া ছাড়া আর কিছুই করার রইল না। খানিক বাদে সেই সামর্থ্যটুকুও রইল না। একটা শক্ত হাত চেপে বসল তার মুখের ওপর।
------ ----------------------------------------
অজয় নিজ প্রাসাদে ফিরেছে সন্ধ্যের পর। আজ রাজভবনে পারিবারিক নৈশভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল। সে কাজের বাহানায় ভোজন পর্ব এড়িয়ে গেছে। বাবা মশাই কাজের বৃত্তান্ত জানতে চেয়েছেন। জানতে চাওয়ার ভঙ্গিটাই প্রমাণ করে যে তিনি শতভাগ নিশ্চিত অজয় একজন পুরোদস্তুর অকাজের মানুষ। তার মতো নিষ্কর্মা লোকের গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ থাকতেই পারে না। ধারণাটা একেবারে ভুল নয়। আদতেই তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই এই মুহূর্তে। শিল্পী শাহেদ আলি আসার কথা। তাকে অন্য সময় আসতে বলে দিলেই হত। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। অজয় তো স্বাভাবিক মানুষের মতো খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে না। অবস্থা যে এতটা মারাত্মক তা পরিবারের লোকদের জানায় কী করে? তার স্বভাবটা তুর্যয়ের মতো সপ্রতিভ নয়। ছোটবেলা থেকেই সে একটু মুখচোরা গোছের। নিজেকে গুটিয়ে রাখার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলা তার কম্ম নয়। আজকেও পিতার কাছে কাজের বৃত্তান্ত খুলে বলতে পারল না। আমতা আমতা করে পাশ কাটানো উত্তর দিল, ‘একটা মিটিং আছে।’ পিতা উত্তর শুনে গোমড়া মুখে বললেন, ‘বেশ তো! খুব ব্যস্ত মানুষ হয়ে গেছ তুমি। মিটিং ফিটিং করে বেড়াচ্ছ। আর রাজকোষের পয়সা উড়াচ্ছ।’
অজয় প্রত্যুত্তরে কিছু না বলেই বেরিয়ে পড়ল। ছোট ভাই বোনের সামনে অপমান জনক কথা বলতে কখনওই পিছপা হন না পিতৃদেব। পিতার চোখে সে সর্বদা নিজের জন্য অবহেলা প্রত্যক্ষ করে এসেছে। বড় ভাই যে স্নেহ, মমতা এবং গুরুত্ব পেয়ে এসেছে পরিবারের কাছ থেকে, অজয় তার কানাকড়িও পায়নি। মা তাকে ভালোবাসে এ কথা ঠিক। মাঝে মাঝে মনে হয় তুর্যয়ের চাইতেও তাকেই বেশি ভালোবাসে, কিন্তু সেই ভালোবাসাতেও যেন যথাযোগ্য সম্মানের টানাপোড়ন আছে। মাও তাকে নিরেট নিষ্কর্মা মনে করে, বাবারই মতো। পড়াশোনায় তেমন একটা ঝোঁক নেই এ কথা ঠিক। কিন্তু সে একজন পাকা খেলোয়াড়, পাকা সাঁতারু, দক্ষ শিকারি এবং অশ্বারোহী। তার স্বপ্ন একদিন সাঁতারু হিসেবে অলিম্পিকে যোগদান করা। বাবামশাইকে জানাতেই তিনি বলেছেন, এসব খেলাধুলার ভূত মাথা থেকে নামাও। লেখাপড়ায় মন দাও। উচ্চশিক্ষিত হয়ে রাজ্যের উন্নতি সাধন করো।
চিত্রশিল্পী শাহেদ আলি মহলের ছাদের ওপর বসেছে। অজয় বসেছে তার মুখোমুখি চেয়ারে। আজকের বাতাস ভ্যাপসা গরম। ছাদের ওপর নানা জাতের ফুলের সমাহার। বাতাস না থাকলেও ফুলের সুগন্ধি টের পাওয়া যাচ্ছে। অজয়ের ডানপাশে একজন দেহরক্ষী দণ্ডায়মান। সে ইশারায় দেহরক্ষীকে প্রস্থান করতে বলল।
-’ইয়ে হুজুর ...আমি যে একজন মডেলের কথা বলেছিলাম। আপনার কি স্মরণে আছে?’
-’কার কথা বলেছিলেন?’ অজয়ের মেজাজটা বিনা কারণেই খিটখিটে হয়ে আছে। এই লোকটাকে অন্ধকারে ডেকে নিয়ে আসার কারণ হল সে তার চেহারা কাউকে দেখাতে চাইছে না। এমনকি আয়নার সামনে দাঁড়াতেও ভয় হচ্ছে। আজ রাতে বন্ধুদের সাথে নাইট ক্লাবে যাবার কথা ছিল। একটু আগে ফোন করে প্ল্যান ক্যান্সেল করেছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই তাকে সমাজ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হবে। এই সমস্যার প্রতিকার কী? যে রোগের কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা নেই, পৃথিবীর কোনও ডাক্তার কি সেই রোগের চিকিৎসা করতে পারবে?
শাহেদ আলি গদগদ গলায় বলল, ‘আমি যার কথা বলেছিলাম তিনি রাজবাড়িতেই কাজ করেন। আপনি অনুমতি দিলে এখুনি তাকে এখানে হাজির করার ব্যবস্থা করতে পারি। খবর পেয়েছি এই মুহূর্তে তিনি রাজবাড়ির হেঁশেলখানায় উপস্থিত আছেন।’
হেঁশেলখানার কথা উঠতেই, অজয়ের হঠাৎ বিকেলবেলার সেই অ্যাপ্রন পরা, শেফহ্যাট ওয়ালা আজব চিড়িয়াটার কথা মনে পড়ল। আচ্ছা, সেই চিড়িয়া এখন কোথায় আছে? বন্দি করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু কোনও হালনাগাদ তো জানায়নি কেউ। বন্দিদের সাধারণত এই মহলের পাতাল ঘরে এনে রাখা হয়। মেয়েটা বলেছিল তার চেহারা নাকি রাক্ষসের মতো। এতটা খারাপ মন্তব্য এর আগে কোনও মানুষ তাকে নিয়ে করেনি। মেয়েটার এতো বড় স্পর্ধা হলো কী করে? একবার পাতাল ঘরে গিয়ে দেখলে কেমন হয়, কিম্ভূত চিড়িয়াটা করছে কী এখন? এলোমেলো ভাবতে ভাবতে সে ভ্রু কুঁচকে শাহেদআলিকে বলল, ‘কার কথা বলছেন? নাম কী?’
শাহেদ আলি পকেট থেকে ফোন বের করে অজয়ের মুখের দিকে তাক করে বলল, ‘ইনার ছবি পাওয়া দুষ্কর কাজ। তবে আমি একটা যোগাড় করেছি অনেক কষ্টে।’
মোবাইলের পর্দায় যে নারীর ছবি ভেসে উঠেছে তাকে অজয় খুব ভালো মতোই চেনে। ছবিটা দেখামাত্র তার চোখমুখ শক্ত হয়ে উঠল।
-’ইনাকে আপনার কেন প্রয়োজন?’
শাহেদ আলি প্রশ্নের কাঠিন্যতা টের পেয়ে একটু অপ্রস্তুত হলো।
-’না মানে ...ঐযে মডেলের ব্যাপারে কথা হয়েছিল না আপনার সাথে? ভাস্কর্যের মডেল।’
অজয়ের গলাটা বেশ চড়ে গেলো।
-'ইনি রাজবাড়ির পাঠশালার শিক্ষিকা। আমার টিচার। মা বোনের পরে এই একজন নারীকেই আমি মন থেকে সম্মান করি। আপনার এতবড় সাহস হয় কী করে?’
শাহেদআলি তাৎক্ষণিক ভাবে ফোনটা সরিয়ে নিল। চতুর গলায় বলল, ‘শিল্প জিনিসটাই তো সম্মানের হুজুর। কারো সৌন্দর্যের যথাযথ মূল্য দেয়াটা অসম্মানের কিছু নয়। ‘
অনেকক্ষণ হলো অজয়ের হাত দুটো নিশপিশ করছে। মন চাইছে কোন জীবন্ত প্রাণীর ঘাড় মটকে রক্ত চলাচল করা জ্যন্ত শিরায় দাঁত বসিয়ে দিতে। আপাতত আশেপাশে কেউ নেই। এই সুযোগে শাহেদআলির ঘাড়খানা মটকে দিলে কেমন হয়? নিজের ভাবনায় নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে। মাথাটা এলোমেলো লাগতে থাকে। বসা থেকে উঠে পড়ে বলে, ‘আপনি এখন আসুন। যার ছবি দেখালেন, তার দিকে ভুলেও আর কখনও নজর দিয়েন না। খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি। অন্য মডেল যোগাড় করতে পারলে কাজ হবে, নইলে নয়।’
অজয় ছাদ থেকে বেরিয়ে এলো। দেহরক্ষী এবং দুজন ভৃত্য তাকে অনুসরণ করছিল। সে মাছি তাড়াবার মতো হাত নেড়ে ভাগিয়ে দিল ওদের। ব্যক্তিগত শোবার ঘর দোতলায়। অজয় ঘরমুখী হলো না। লম্বা করিডোর পেরিয়ে সিঁড়িঘরে এসে দাঁড়ালো। এদিকের দেয়ালে একটি বিশাল লম্বা মণিমুক্তো খচিত তলোয়ারের খাপ শোভা পাচ্ছে। তার পাশে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির দুটি চিত্রকর্ম। মোনালিসা এবং দ্যি লাস্ট সাপার। শ্বেতপাথরে মোড়ানো সিঁড়িটি বড়ই নান্দনিক। ধাপগুলো সুপ্রশস্ত। দুধারের মোটা রেলিং এর গায়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে গ্রিক পুরানের দেবদেবীদের ভাস্কর্য মূর্তি। অজয়ের প্রপিতামহ ছিলেন বেজায় শৌখিন লোক। পারস্য এবং ফ্রান্স থেকে বিখ্যাত ভাস্কর শিল্পীদের ভাড়া করে এনেছিলেন।
ঘুরানো সিঁড়ির ছাদ থেকে বিশাল আকারের কয়েকটা ঝাড়বাতি ঝুলছে। এই ঝাড়বাতি বৈদ্যুতিক নয়। ইউরোপীয় ঘরানার প্রাচীন ক্যান্ডেল শ্যান্ডেলিয়ার। সন্ধ্যে হতে না হতেই এসব ঝুলন্ত মোমদানিতে আগুন ধরানো হয়। লালচে আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে চারপাশ। সাধারণত এরকম সময় অজয় বাড়িতে একলা থাকে না। বন্ধুবান্ধব আসে। নানা রকম ইন্ডোর খেলাধুলা হয়। গান বাজনা এবং মদের আসর বসে। সে কথা বলে কম, শোনে বেশি। যারা আসে, তাদের কেউই তার প্রকৃত বন্ধু নয়। ওরা তার ব্যক্তিসত্তাকে নয় , বরং রাজকুমার উপাধিটাকেই ভালোবাসে। তবে চেনা অচেনা বিপুল সংখ্যক তরুণ তরুণীর দ্বিধাহীন আনুগত্য সে এতকাল প্রাণ ভরে উপভোগ করে এসেছে। আজকাল মাঝে মাঝে সবকিছু ফাঁকা মনে হয়। এতো প্রাচুর্য, সম্মান এবং মনোযোগের মধ্যেও যেন সত্যিকারের ভালো লাগা বলে কিছু নেই। শুধুমাত্র খেলাধূলা করে যে শান্তিটা পাওয়া যায়, কোনও মানুষের সাথে কথা বলে সেই শান্তি পাওয়া যায় না।
তার পরনে একটা সাদা রঙের পাতলা টিশার্ট, কালো ট্রাউজার। চুল গুলো ঘাড়ের ওপর এলোমেলো ছড়ানো। চিন্তিত ভঙ্গিতে সে কিছুক্ষণ সিঁড়িঘরে হেঁটে বেড়ালো। তারপর কী মনে করে যেন তরতর করে নামতে লাগল সিঁড়ি বেয়ে। পাতালঘরে নামার সুড়ঙ্গপথটা বাগানের শেষপ্রান্তে। চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার। অজয় পাতালঘরের সুড়ঙ্গ মুখে এসে দাঁড়াতেই লাইট হাউজের ঘড়িতে ঢং ঢং করে রাত আটটার ঘণ্টা বাজল। সুড়ঙ্গর ঢাকনাটা খুলে ফেলল। খোলা মাত্র একটা অস্পষ্ট আর্তনাদের শব্দ ভেসে এলো ভেতর থেকে।
---------------------------------
মেহেরু বাড়ি ফিরল বেশ রাতে। মা ঘুমিয়ে পড়েছে। ছোট বোন মিথিলা জেগে আছে এখনও। আগামীকাল পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়াশোনা করা তার অভ্যাস।
এই বাসায় দুটো মাত্র শোবার ঘর। একটি ঘরে মায়ের সাথে মেহেরু থাকে। অন্যটি বোনের জন্য বরাদ্দ। তার পড়াশোনার যেন কোনও ক্ষতি না হয় সেই উদ্দেশ্যেই আলাদা ঘরের বন্দোবস্ত করা। মিথিলা খাবার গরম করছিল চুলায়। একটা মাইক্রোওয়েভ কেনার পরিকল্পনা করছিল মেহেরু বিগত বেশকিছুদিন যাবৎ। প্রতিমাসে নানারকম উটকো খরচ উড়ে এসে জুড়ে বসে। এই মাসে গাড়িটা মেরামত করতে হবে। তাই মাইক্রোওয়েভ এবারেও হচ্ছে না। মেহেরু হাতমুখ ধুয়ে টেবিলে আসতেই মিথিলা বলল, ‘আপা, প্রিন্সের সাথে দেখা হয়েছে?’
মেহেরু বোনের দিকে তাকালো। ওই মুখে একটা লাজুক হাসি। চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বলল, ‘আমার সাথে দেখা হবে কী করে? আমি কি কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নাকি?’
-‘আপা শোনো, আমাকে একবার প্রিন্সের সাথে দেখা করার সুযোগ করে দেবে? প্লিজ? একটা সেলফি তুলব শুধু। ফ্রেন্ডদের দেখাব। প্লিজ আপা!’
মেহেরু বিরক্ত বোধ করল। এমনিতেই দুশ্চিন্তায় তার ভেতরটা তেঁতো হয়ে আছে। ক্লান্তিময় একটা দিনের শেষে এসব অনর্থক সস্তা আবদার ভালো লাগে? সে প্লেটে খাবার তুলে নিয়ে চিন্তাডুবি গলায় বলল, ‘দেখি।’
তখন উর্মিলা তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলেছিল, ‘শোনো মেহেরু, তুমি আমার অনেক পুরনো এবং বিশ্বস্ত লোক। তোমার মতো মানুষ পাওয়া কঠিন ব্যাপার। আমি কিছুতেই তোমাকে হারাতে চাই না।’
মেহেরু নতমস্তকে বিনয়ী কণ্ঠে বলেছে, ‘হারাবেন কেন রানিমা, আমি তো রাজবাড়িতেই আছি। আপনার যেকোনো প্রয়োজনে পাশে পাবেন।’
-’জরুরি কথা বলে নেই। কাল খুব সকালে একবার গণক মশাইয়ের গ্রামে যেতে হবে তোমার। উনাকে এখানে নিয়ে এসে তারপর তুর্যয়ের সাথে দেখা করবে। বুঝেছ?’
-’জি ...সকাল বলতে ঠিক কটায়?’
-’ছটার দিকে চলে যেও।’
-’ঠিক আছে।’
-’আরেকটা বিষয় হলো, তুর্যয়ের ধারণা ওই গণক মশাই ভণ্ড। ভাগ্য গণণার ব্যাপারটা কুসংস্কার মনে করে সে। তাই খেয়াল রেখো ওর কানে যেন কিছুতেই এসব খবর না যায়।’
-’আপা, রাজবাড়িতে কি এবার বলরুম ড্যান্স হবে? প্রিন্স করোনেশনের পর?’
মিথিলার প্রশ্নে ঘোর ভাঙল। ভাত চিবোতে চিবোতে বলল, ‘কী জানি!’
-’আপা, আমার না একবার রয়্যাল বলরুম ড্যান্স অ্যাটেন্ড করার খুব শখ!’
মেহেরু গম্ভীর ভাবে বলল, ‘এইসব শখ মনের মধ্যে পুষে রেখো না। রয়্যাল ড্যান্স পার্টিতে দাওয়াত পায় রাজ্যের সব এলিট মানুষজন। আমাদের জন্য এসব স্বপ্ন দেখাও পাপ।’
মিথিলার মুখ থেকে দপ করে আলো সরে যায়। মেহেরুর মনটা খারাপ হয় ছোটবোনের বিষণ্ণতা টের পেয়ে। সে নরম গলায় বলে, ‘শোন মিথি, পৃথিবীটা বহুদূর এগিয়ে গেছে। আজকের পৃথিবীতে বিদ্যার জোর থাকলে সব সম্ভব। তুমি পড়াশোনা করে অনেক বড় হবে। তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। একজন আধুনিক শিক্ষিতা মেয়েকে রয়্যাল সেরেমনি অ্যাটেন্ড করার স্বপ্ন বুকে নিয়ে বসে থাকা মানায় না। তুমি নিজেই তোমার জীবনের হিরো হবে। আমাদের হিরো হবে। তোমাকে নিয়ে আমার অনেক আশা। বুঝতে পেরেছ? আর ...তোমার পড়াটা শেষ হলে আমরা সমুদ্রকুঞ্জ ছেড়ে চলে যাব।’
-’সেতো বুঝেছি আপা। কিন্তু যাবার আগে সমুদ্রকুঞ্জের রয়্যাল লাইফটা একবার কাছ থেকে দেখতে চাই। তুমি তো অনেক দেখলে।’
মেহেরু চোখ তুলে তাকালো বোনের দিকে। কথাটা কি একটু ঠেসমারা ছিল? মিথিলা কি ভাবছে রাজবাড়ির চাকর হওয়াটা বেজায় আনন্দের বিষয়?
-’এসব কাজের মধ্যে কোনও কৃতিত্ব নেই, সম্মানও নেই। এই অসম্মানের জীবনের ইতি টানার সময় এসে গেছে। মিথি, তুমি পড়াশোনাটা শেষ কর খুব দ্রুত। আমার রাজবাড়ির চাকরি করতে আর ভালো লাগছে না।’
মেহেরু খুব দ্রুত খাবারের পালা চুকিয়ে উঠে পড়ল। কাল খুব ভোরে বেরিয়ে পড়তে হবে। লং ড্রাইভ! ঠিক দশটায় তুর্যয়ের অফিসে পৌঁছুতে পারবে কিনা কে জানে! বিছানায় মায়ের পাশে শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ইন্দিরা নামের মেয়েটির কথা মনে পড়ল। কে এই ইন্দিরা? কী হয়েছে তার? মেহেরুর সাথে এই মেয়ের যোগসূত্রটাই বা কোথায়?
খোলা জানালা দিয়ে ঘরের ভেতর মেঘ ঢুকে পড়েছে। সাদাটে ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে মেহেরুর হঠাৎ মনে হলো, তুর্যয়ের অভিমান বা রাগ দুটোই বড় সাংঘাতিক। ওর রাগটা এখনও কাটেনি। রাজ্যের সবচেয়ে উঁচু আসনে বসে থাকা মানুষটার সাথে তার মতো অতি সাধারণ ছাপোষা মহিলার মান অভিমান খেলা বড়ই বেমানান। তুর্যয় এতো বুদ্ধিমান হওয়া সত্ত্বেও এই বাস্তব সত্যটুকু কেন অনুধাবন করতে পারছে না?
সেদিন পদ্মপুকুরে তুর্যয়ের মুখে রবি ঠাকুরের কবিতাটা শুনতে পেয়ে মেহেরু কেমন যেন বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। কদিন যাবত টের পাচ্ছিল যে, আজকাল তাদের একান্তে কাটানো সময়গুলোতে একটা অন্যরকম ভালো লাগা ভর করেছে। জীবন এবং জগতের খুঁটিনাটি প্রতিটি বিষয়কে এই বয়সেই তুর্যয় যেভাবে অনুভব করতে পারে, কোনও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকেও মেহেরু কখনও এতটা গভীর হতে দেখেনি। এই সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুণটির প্রতি তার মুগ্ধতা দিনদিন বেড়ে চলেছে। এরকম আগে হতো না, এখন হয়। এই যেমন কথা বলতে বলতে হঠাৎ দুজনে চুপ করে যায়। একজন আরেকজনের দিকে চেয়ে থাকে নির্নিমেষ। আশেপাশে কেউ থাকে না। শুধু দুটি মানব মানবী সম্পূর্ণ নির্জনতার স্বাদ অনুভব করে।
আগে তুর্যয় মেহেরুকে 'মিস' বলে সম্বোধন করত। এখন পারতপক্ষে কিছুই ডাকে না। যখন আদিগন্ত পৃথিবী জুড়ে কেবলমাত্র ওদের দুজনের অস্তিত্ব বিরাজ করে, সেইসব ব্যক্তিগত নির্জন সময়ে তুর্যয় মেহেরুকে ‘জলপরী’ নামে ডাকে।
বয়সে ছোট হলে কী হবে, মেহেরুর চেয়ে সে অধিকতর ধারালো এবং স্পষ্টভাষী। কোনও কথা রাখঢাক করে বলতে শেখেনি। কবিতা শেষ করে মেহেরুর নির্বাক মুখের দিকে চেয়ে ফট করে বলে বসল, ‘তুমি কি ভয় পাচ্ছ?’
মেহেরু একটা বিব্রত ঢোঁক গিলে বলল, ‘ভয় পাব কেন?’
তুর্যয়ের কোলের ওপর একটা কিছু একটা রাখা ছিল। এতক্ষণ খেয়াল করেনি মেহেরু। এখন চেয়ে দেখল একটি ঝিনুকের মালা। কদিন আগে কথায় কথায় বলেছিল সাগর পাড় থেকে ঝিনুক কুড়িয়ে নিজ হাতে একটা মালা গাঁথতে মন চায়। সময়ের অভাবে হয়ে উঠছে না। তুর্যয় কথাটা মনে রেখেছে।
-’কোথায় পেলে?’ মেহেরুরু কণ্ঠে খুশির ঝংকার বেজে ওঠে।
তুর্যয় হাসে, ‘এইতো ...যোগাড় করলাম। সমুদ্রকুঞ্জের জলপরীর ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যাবে। এটা তো হতে পারে না।’
মেহেরু হাত বাড়িয়ে মালাটা নেয়ার চেষ্টা করতেই, তুর্যয় চট করে একটু দূরে সরে গেলো।
-উঁহু ...এভাবে নয়।’
-’মানে?’
তুর্যয়ের ঠোঁটে একটা কুণ্ঠা মিশ্রিত হাসি। ধূসর চোখে কী যেন এক অব্যক্ত বাসনার এলোমেলো ঝিকিমিকি। তার বিশ বছরের শরীরে এখন যৌবনের সদর্প উপস্থিতি প্রতীয়মান। গৌরবর্ণের দীর্ঘকায় বাহু, প্রশস্ত বুক, নির্মেদ কোমর। অজয়ের মতো ছয় ফিট না হলেও তার উচ্চতা পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চিতে এসে থেমেছে। কদিন হলো দাড়ি কামানো শুরু করেছে সে। তার হাসি থেকে এখনও কৈশোরের কমনীয়তা মুছে যায়নি। তবুও মেহেরুর মনে হল এমন ঐকান্তিক সুপুরুষ সে জীবনে আর দ্বিতীয়টি দেখেনি। কয়েকটা সেকেন্ড কেউ কোনও কথা বলল না। চুপচাপ পরস্পরের দিকে চেয়ে রইল। একটা সময় ঘোর ভাঙল তুর্যয়ের, বলল,
-’এই মালা তোমার দাম দিয়ে কিনে নিতে হবে জলপরী!'
মেহেরু হাসে , ‘সিরিয়াসলি? রাজার কুমার কিনা আমার কাছে ঝিনুকের মালা বিক্রি করবে? তা কত দাম শুনি?’
তুর্যয় হাতে ধরা অলঙ্কারটির দিকে বঙ্কিম চোখে তাকায়। দুর্বোধ্য হাসে।
-‘একটি চুম্বন!’
আঁতকে ওঠে মেহেরু, ‘কী?’
তুর্যয় ঠোঁটে দুর্বোধ্য হাসিটা বজায় রেখেই ভারী স্মার্ট ভঙ্গিতে বলে, ‘এই মালাটির বিনিময় মূল্য একটি মাত্র চুম্বন!’
No comments