গল্প | অশরীরি প্রেম - পর্ব-১২
লেখক | সোহেল রানা

দুই পরিবার আলোচনা করে অবশেষে ভুল বুঝাবুঝিটা অবসান করল। তারা সিদ্ধান্ত নিল, বিয়েটা তাড়াতাড়ি দেবে। বেশি দেরি করা যাবেনা। এই বিয়েতে মারিয়া খুব খুশি। কিন্তু শিহাব খুশি কিনা তা তার মুখ দেখে বুঝা গেলনা। বেচারা সারাদিন মন খারাপ করে থাকে। কি যেন ভাবে। হয়তো ইভার কথা-ই ভাবে.......
__________ব্ল্যাক ম্যাজিক________
ডিনার শেষে শিহাব তার রুমে প্রবেশ করল। দেখল, ইভা আগে থেকেই আছে। জানলা দিয়ে সে একদৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে উদাসীন হয়ে। গালে হাত দিয়ে কি যেন চিন্তা করতেছিল সে। বড় মায়া হল শিহাবের। শিহাব নরমকণ্ঠে ডাক দিল: "ইভা........."
দু'চোখ মুছে ঘুরে তাকাল ইভা। এতক্ষণ সে কান্না করেছে, শিহাব বুঝতে পারল। ইভা সেটা লুকাতে গিয়েও লুকাতে পারল না.....
--এতক্ষণ কান্না করছিলে??"
--কই না তো.....
-তোমার চোখের কোণে এখনও জল জমে আছে।"
ইভা আবারও চোখ মুছে বলল: কই? ও কিছু না....
--আমার কাছে লুকাতে চাইছ???
ইভা এইবার দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল শিহাবকে। কাঁদতে কাঁদতে বলল: শিহাব, খুব ভালোবাসি তোমাকে।
--ভালোবাস? তো নিজের ভালোবাসাকে আরেকজনের হাতে তুলে দিতে চাইছ কেন?
--কি করব? আমি তো অশরীরী। তোমার আমার মিল তো হবেনা পৃথিবীতে।
--মরার পর তো মিল হবে। আমাকে তো মরতেও দিচ্ছনা তুমি।
--চুপ! ও কথা আবার বললে কিন্তু আমি এখনই চলে যাব।
--আচ্ছা, বলবনা।
ইভা শিহাবকে বেডে শুয়ে দিয়ে নিজে তার বুকে শুইল। শিহাবের মুখে হাত বুলাতে বুলাতে বলল:- এই বুকটাতে কয়েকদিন পর মারিয়া থাকবে। তোমাকে আদর করবে, ভালোবাসবে, আমার কথা মনে পড়বে শিহাব?
--অনন্তকাল তুমি এই হৃদয়ে বেঁচে থাকবে। ইভা, একটা কথা বলব?
--হুমমমম.......
--মারিয়ার দেহে যদি তোমার আত্মা থাকে, তাহলে তো সব সমস্যার সমাধান। তুমি আর আমি পৃথিবীতে সুখে দিন কাটাতে পারব।
--এটা অন্যায় শিহাব। নিজের বোনের প্রতি এতবড় অন্যায় আমি করতে পারবনা। সে-ই ভালোবাসতে পারে, যে ত্যাগ করতে পারে। আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারিনা শিহাব। আমি বরং দূর থেকেই তোমাদের সুখের দিনগুলো দেখব.......
কথা শেষ না হতেই ইভা কি যেন যন্ত্রনায় চিৎকার করে উঠল।
--কি হল ইভা?" জিজ্ঞেস করল শিহাব।
--শিহাব, শিহাব রে, আমার বুঝি খুব বিপদ। কেউ ব্ল্যাক ম্যাজিক করে আমার আত্মাকে ডাকতেছে। এ নিশ্চয়ই সাদিয়ার কাজ......" বলতে বলতে ইভা অদৃশ্য হয়ে গেল। বুকভরা ঘৃণা নিয়ে শিহাব উচ্চারণ করল একটা নাম: সাদিয়া....
শিহাব এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারলনা। এই মুহূর্তে কিছুই করা যাবেনা। যা করার শহরে গিয়ে করতে হবে। চিন্তা করতে করতে সারারাত ঘুমাতে পারল না সে।
পরদিন শিহাব মারিয়াকে নিয়ে শহরে গেল। আর কখনও এখানে আসবেনা বলে চলে গিয়েছিল। আবারও আসতে হল। নিয়তি কাকে যে কোনদিকে টানে বলা মুশকিল।
শিহাব মারিয়াকে নিয়ে ইভাদের বাসায় গেল। তারপর ডাক দিল: আংকেল! আন্টি!
ইভার বাবা-মা বের হল। প্রথমেই তাদের চোখ পড়ল মারিয়ার উপর। চমকে উঠল তারা মারিয়াকে দেখে। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তারা মারিয়াকে। তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল: ইভা, মা আমার......
--আন্টি ও ইভা না। আপনাদের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে শিখা।
--শিখা!! আমাদের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে শিখা!" দু'জনে অবাক হয়ে মারিয়ার গালে হাত বুলাতে লাগল। শিখা তার বাবা-মাকে চিনতে পারেনি ঠিক, তবুও রক্তের টান বড় টান! জড়িয়ে ধরল শিখা তার বাবা-মাকে। অজান্তেই চোখ বেয়ে তার অশ্রু নেমে এল। শিহাব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল এই পুনর্মিলন।
আর সময় নেই হাতে। ইভার আত্মাকে বাঁচাতে হবে। শিহাব ভাবতে লাগল কাছাকাছি কোন তান্ত্রিককে সাদিয়া হাত করতে পারে। কয়েকজন তান্ত্রিকের লিস্ট করল শিহাব। প্রথম তিনজনের সাথে সাদিয়া যোগাযোগ করেনি খুঁজ নিয়ে জানা গেল।
চতুর্থ তান্ত্রিকের আস্তানায় গেল শিহাব এবং মারিয়া। চুপিচুপি দেয়াল টপকে ঢুকল তারা। দেখল তান্ত্রিক মশায় এর সামনে বৃত্তাকারে অনেক গুলো মোমবাতি জ্বলছে। তান্ত্রিক মশায় কি যেন ধ্যান করতেছে। তার একটু দূরে বসে শয়তানি হাসি হাসছে সাদিয়া।
শক্তি দিয়ে এই মুহূর্তে কাজ হবেনা। যা করার কৌশলে করতে হবে। আসার সময় মারিয়া ইভার মতো করে সেজেছিল। সাদা শাড়ি আর খোলা চুল। মারিয়া চোখ দুটো বড় বড় করে ধীরে ধীরে এগোতে লাগল তান্ত্রিকের দিকে।
মারিয়াকে দেখে তান্ত্রিক এবং সাদিয়া দু'জনেই একসাথে চমকে উঠল। তারা ভাবল ইভা দুইটা হয়ে গেল। একটা বন্দী, আরেকটা মুক্ত। তান্ত্রিকের দিকে যতো এগোচ্ছে মারিয়া, তান্ত্রিক ততো ভয় পাচ্ছে।
তার জানা যতো তন্ত্র মন্ত্র আছে সব পড়তে লাগল আত্মা বশ করার জন্য। কিন্তু মারিয়া তো কোন আত্মা না, সে মানুষ। তাই তান্ত্রিকের বিদ্যা কাজে আসলনা। এদিকে তান্ত্রিক মারিয়াকে বশ করতে ব্যস্ত, আর অন্যদিকে পেছন থেকে চুপিচুপি এল শিহাব।
সজোরে আঘাত করল সে তান্ত্রিকের মাথায়। তান্ত্রিক জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল। শিহাব এবং মারিয়া দুজনে মিলে তান্ত্রিককে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধল। তারপর শিহাব সাদিয়ার মুখোমুখি দাঁড়াল।
"ঠাস" করে একটা চড় বসাল সে সাদিয়ার গালে। বলল:- আর কত নিচে নামবে তুমি?? আমি তো তোমার জীবন থেকে সরে গেছি, তবে তুমি কেন এসব করছ?
সাদিয়া বলল:- তুমি আর ইভার কারণে আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি, আমার স্বামীকে হারিয়েছি......
--ওরা ওদের পাপের শাস্তি পেয়েছে। ইভা ভালো মানুষের ক্ষতি করেনা। তোমাকেও মেরে ফেলত, শুধু আমি ভালবাসতাম বলে এখনও বেঁচে আছ তুমি। শুধু আমি ভালোবাসতাম বলে তোমাকে ইভা বিপদ থেকে রক্ষা করেছিল সেদিন।
অথচ এর জন্য তুমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ না। ছি! এতো নিচু মনের মেয়ে তুমি..... এখন তোমাকে শুধু ঘৃণা করি আমি।"
শিহাবের শেষ কথাটা সাদিয়ার কানে কয়েকবার ঝঙ্কার তুলল। ভাবল, কি করে এতো বদলে গেল শিহাব। যে তাকে এতো ভালোবাসত, সে আজ তাকে ঘৃণা করে! করবেই তো! ভালোবাসার মতো কি করেছে সাদিয়া। অর্থের মোহে পড়ে সে শিহাবকে ধোকা দিয়েছিল, এইটাই তার পাওনা ছিল।
নিচু হয়ে থাকল সাদিয়া। ঐদিকে তান্ত্রিকের জ্ঞান ফিরল। সাদিয়া তান্ত্রিককে বলল: তান্ত্রিক মশায়, ইভার আত্মাকে বশমুক্ত করে দেন। আমি আর চাইনা এই রেষারেষি।
শিহাব তান্ত্রিকের বাধন খুলে দিল, তারপর তিনি ইভার আত্মাকে বশমুক্ত করলেন। মুক্ত হয়ে ইভা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল শিহাবের দিকে। খুব ইচ্ছে করছিল তার শিহাবকে একবার জড়িয়ে ধরতে। পাশে মারিয়াকে দেখে আর জড়িয়ে ধরলনা।
কয়েকদিন পর ওর সাথেই তো শিহাবের বিয়ে হতে যাচ্ছে। শিহাব মারিয়াকে দেখিয়ে সাদিয়াকে বলল: সাদিয়া, ও মারিয়া। ইভার যমজ বোন। কয়েকদিন পর ওর সাথে আমার বিয়ে হবে।"
বোবার মতো তাকিয়ে থাকল সাদিয়া শিহাবের দিকে। কিছুই বলতে পারলনা। শিহাব মারিয়াকে নিয়ে চলে যেতে লাগল, তাদের পাশাপাশি হাটছে অশরীরি ইভা। কিছুদূর গিয়ে ঘুরে তাকাল শিহাব। সাদিয়া তখনও মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে তার অশ্রু ঝরছে..........
চলবে.............
#অশরীরি_প্রেম_পর্ব_১২
#banglastory143
Next plz porte oi mon chai
ReplyDeleteok brother
Delete