গল্প | অশরীরি প্রেম - পর্ব-১১

লেখক | সোহেল রানা



_________সারপ্রাইজ________


শিহাব পাত্রী দেখতে গেল বাবার সাথে। পাত্রীর বাবা মার সাথে তারা সামনের রুমে বসে কথা বলতেছিল, একটু পর পাত্রীকে সাজিয়ে আনা হল। ঘোমটা পরা ছিল, তাই পাত্রীর মুখ দেখা যাচ্ছিলনা। পাত্রীর মুখ দেখার ইচ্ছেও নেই শিহাবের। এই মুহূর্তে তার ইভার কথা মনে পড়ছে শুধু, তার চেহারা ভেসে উঠছে চোখের সামনে। 



শিহাবের বাবা বলল: মামনি, ঘোমটাটা একটু সরাও তো মা.......



পাত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটা মেয়ে তার ঘোমটা সরাল। বেরিয়ে এল একটা লজ্জাবতী মুখ। চমকে উঠল শিহাব। একদৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকল সে পাত্রীর মুখের দিকে। এ তার অপরিচিত কেউ নয়। বহুদিনের পরিচিত মুখ এটি। যাকে সে হৃদয়ে ঠাই দিয়েছে। যাকে ছাড়া তার জীবন বৃথা। অজান্তেই মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল শিহাবের: ইভা!!!!!!



পাত্রীর বাবা বলল: ইভা??? কে ইভা??? ওর নাম মারিয়া.....



শিহাব বলল: ও মারিয়া হতে পারেনা, ও ইভা.....



এইবার পাত্রী মুখ খুলল: হ্যালো মিষ্টার, আমি মারিয়া, আমি কোন ইভা না, এই নামে কাউকে চিনিওনা......



পাত্রীর বাবা-মা এইবার মেয়েকে শিহাবের সাথে বিয়ে দিতে নারাজ। শিহাবের নিশ্চয়ই ইভা নামে কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। তাই তারা সরাসরি মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেনা বলে "না" করে দিল। 



বাসায় ফিরে শিহাব চিন্তিত হয়ে পড়ল। মারিয়া বলছে সে ইভা না,  তাহলে ইভার চেহারা সে পেল কি করে? তাহলে কি যমজ বোন ওরা? কিন্তু যমজ হলে মারিয়ার তো ইভাদের বাসায় থাকার কথা। আর তাদের বাবা-মাও তো ভিন্ন!

 


ব্যাপারটা নিয়ে রাতে ইভার সাথে আলোচনা  করতে বসল শিহাব। আলোচনা করে যা জানতে পারল, তা এরকম: ইভার একটা জমজ বোন ছিল। নাম শিখা। ছোটবেলায় হারিয়ে যায় সে মেলা দেখতে গিয়ে। তারপর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। 



ইভা জিজ্ঞেস করল: মারিয়া কি তোমাকে বিয়ে করতে চাইনি?



শিহাব উত্তর দিল: ওর ফ্যামিলির কেউ রাজি না। ইভা নামে অন্য কোন মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক আছে তাই......



--তুমি তাদেরকে বলনি কেন, পৃথিবীতে ইভার কোন অস্তিত্ব নেই। সে মৃত।



--সে কথা আমি বলতে পারবনা কখনো।  তোমাকে আমার মৃত বলে মনে হয়না। তোমার সাথে তো প্রতিরাতেই কথা হয় আমার।



--সে তো আমার আত্মা। 



--তোমার আমার মিলনের কি কোন উপায় নেই?



--আছে। সেটা হল মৃত্যু।



--তাহলে আমি মারতে চাই......



ইভা তাকে বাধা দিয়ে বলল: এ কথা আবার বললে আমি আর কখনো আসবনা। 



--তো আমি কি করব?



--মারিয়াকে বিয়ে কর।



--আমি পারবনা।



--কেন পারবেনা? সেও আমার মতো দেখতে.....



--তবুও তো সে ইভা না, যে আমাকে তার প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। 



--তুমি তাকেই বিয়ে করবা, আর কোন কথা না.......আমার কসম!"



অভিমানের দৃষ্টিতে শিহাব ইভার দিকে তাকাল। জমে থাকা চাপা নিঃশ্বাসটা বাতাসে ছেড়ে দিয়ে শিহাব বলল: ঠিক আছে। কিন্তু ওরা তো রাজি না......



--রাজি হবে। তুমি থাক আমি আসছি.......



--কোথায় যাচ্ছ.......



--একটা কাজে, বলা যাবেনা" কথাটি বলে ইভা দুষ্টামির হাসি হাসল। তারপর অদৃশ্য হয়ে গেল। 



রাতে ঘুম আসছিলনা মারিয়ার। তাই বাসার ছাদে উঠে আকাশের চাঁদ দেখতেছিল সে। আর শিহাবের কথা ভাবতেছিল। ছেলেটা মন্দ ছিলনা। হ্যান্ডসাম দেখতে।



ওর মুখে অন্য মেয়ের নাম শুনে কিছুটা রাগ হয়েছিল মারিয়ার। তাই তখন সে সিনক্রিয়েট করেছিল। কিন্তু ইভা তো তার কোন বান্ধবীর নামও হতে পারত। কিছু না জেনে অপমান করাটা মোটেও উচিৎ হয়নি। আর শিহাব তাকে দেখে ইভা বলল কেন? ইভাটা কে? 



"মারিয়া......"



মেয়েলী কণ্ঠে কারও মুখে তার নাম শুনে চমকে উঠল মারিয়া। পিছনে ফিরে দেখল, একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে হুবহু তারই মতো।


--কে? কে তুমি?" ভীতকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল মারিয়া।



--আমি ইভা।


--ইভা!!!!!!!


--হুমম.....তোমার বোন ইভা।


--বোন??? আমার তো কোন বোন নেই।



--ছিল মারিয়া। আমি আর তুমি যমজ বোন ছিলাম। ছোটবেলায় মেলা দেখতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলে তুমি।



--কি বলছ এসব?



--ঠিকই বলছি মারিয়া, তোমার আসল নাম শিখা। 


--শিখা??



--হুমমম.....তুমি তোমার বর্তমান বাবা-মার কাছে জিজ্ঞেস করলে সব জানতে পারবে।



--আচ্ছা মানলাম.... কিন্তু তুমি এখানে এলে কিভাবে?



--আমার পক্ষে এটা অসম্ভব না। আমি মানুষ না। আমি আমি অশরীরি।



--হেয়াট????? অশরীরী??????" চমকে উঠল মারিয়া।



--হ্যা, আমি মারা গেছি, আত্মা হয়ে কথা বলতেছি।



--এটা কিভাবে সম্ভব??



--সম্ভব।  কারন আমি অতৃপ্ত হৃদয় নিয়ে আত্মহত্যা করেছিলাম।  তাই একটু তৃপ্তি পেতে ফিরে এসেছি। আমি শিহাবকে ভালোবাসতাম, তাকে না পেয়ে আত্মহত্যা করেছিলাম।" সবকিছু খুলে বলল ইভা।



তারপর বলল: এখন শিহাব তার ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু এখন একটা আত্মাকে ভালোবেসে কি হবে? আমি তো মৃত। তুমি প্লিজ শিহাবকে বিয়ে কর। তোমার মৃত বোনের কথাটি রাখ প্লিজ।



--আচ্ছা, আমি শিহাবকেই বিয়ে করব।


 

--আচ্ছা ঠিক আছে, আসি বোন। 



চোখভরা জল নিয়ে ইভা হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। মারিয়ার কাছে সবকিছু স্বপ্ন মনে হল এতক্ষণ যা ঘটেছে। সে নিচে নেমে তার বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করল সবকিছু।



তারপর মারিয়া জানতে পারল সবকিছু।  এরা তার আসল বাবা-মা না। ছোটবেলায় এরা তাকে কুড়িয়ে পেয়েছিল অজ্ঞান অবস্থায়।  জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর সে কিছুই মনে করতে পারতেছিলনা। তখন তারা তাকে নতুন নাম দেয় 'মারিয়া।' 



আর নিজেদের যেহেতু কোন সন্তান ছিলনা, তারা নিজেদের সন্তানের মতো লালন পালন করে তাকে। কিন্তু মারিয়া এতকিছু জানল কিভাবে? জিজ্ঞেস করতেই মারিয়া সবকিছু খুলে বলল তার বাবা-মাকে। শুনে তো এরা অবাক! একটা অশরীরি এসে এতদিনের না জানা রহস্যটার সমাধান করে দিল। কিন্তু এটা জেনে কষ্ট হল যে ইভা আর বেঁচে নেই। তারা সিদ্ধান্ত নিল শিহাবের সাথেই মারিয়ার বিয়ে হবে.......



চলবে...............

#অশরীরি_প্রেম_পর্ব-১১

#oshoriri_prem_part_11

#banglastory143

#bangla_story_143

3 comments:

Powered by Blogger.