গল্প | অশরীরি প্রেম - পর্ব-১০


লেখক | সোহেল রানা



সকালে ঘুম থেকে উঠে শিহাব রান্নাঘরে গেল। রান্না সব করাই আছে। নিশ্চয়ই ইভার কাজ এটা। ইভার কথা আর কেউ জানেনা।



তার বাবা মনে করেছে শিহাব নিজেই রান্না করে। তো সেদিন তিনি শিহাবকে ডাকলেন। তিনি বললেন: বাবা শিহাব, তোর মা তো আমাদের ছেড়ে চলে গেল, বাড়ির রান্নাবান্না করার জন্য তো একটা মেয়ে মানুষ দরকার। ভাবছি তোর একটা বিয়ে দেব এবার.......



শিহাব মাথা নিচু করে বলল:- বাবা, আমার এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। তুমি আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ.......



--কেন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই? দেখ, আমিও হার্টের রোগী। যেকোন মুহূর্তে তোর মায়ের কাছে চলে যেতে পারি, তাই বলছিলাম......



শিহাব বাবাকে বাধা দিয়ে বলল: ও কথা বলোনা বাবা....... সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি আমি। তোমাকেও হারাতে চাইনা।" শিহাব হাটুগেড়ে বসে তার বাবার কোলে মাথা রাখল। বাবা তার মাথায় হাত বুলাতে লাগল।



কতদিন তিনি তার ছেলের মাথায় হাত বুলাননি! সেই ছোট্ট থাকতে ছেলেকে কাঁধে নিয়ে ঘুরতেন তিনি। তারপর ছেলে বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের সম্পর্কের মাঝেও দূরত্ব হতে লাগল। সেই ছোট্ট ছেলেটি তার কতবড় হয়েছে! কতদিন ভালো করে খেয়াল করেননি তিনি তার এই ছেলেকে। আজ কাছে পেয়ে ইচ্ছে করতেছে পৃথিবীর সব আদর ছেলেকে দিয়ে দিতে। মাকে হারিয়ে বড্ড একা হয়ে গেছে ছেলেটা। 



--মা'র কথা মনে পড়তেছে শিহাব??? 



--হ্যা বাবা, খুব মনে পড়তেছে.......আচ্ছা বাবা বলতে পার, আমার ভালোবাসার জিনিসগুলো কেন এভাবে হারিয়ে যায়? আমি কোন কিছু আঁকড়ে ধরে রাখতে পারিনা বাবা। 



--তুই একটা বিয়ে কর, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর বউ তোর অসুস্থ বাবাকে দেখে রাখতে পারবে।"



বাবার মুখের দিকে তাকাল শিহাব, বড্ড মায়া হল তার। কেন জানি আজ খুব ইচ্ছে করতেছে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে ইচ্ছেমতো কান্না করতে। সে বাবাকে জড়িয়ে ধরল। তারপর চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল: হ্যা বাবা, আমি বিয়ে করব। তুমি পাত্রী দেখ........



শিহাব নিজের রুমে এসে সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকল একা একা। ইভা নেই। সে দিনে আসেনা। রাতে আসবে। আজ মায়ের কথা খুব মনে পড়তেছে তার। মায়ের কবরে একবার যেতে হবে আজ। 



শিহাব রেডি হয়ে মায়ের কবরে যেতে যেতে রাত হয়ে গেল। পূর্ণিমা রাত। চারদিক স্পষ্ট দেখা যায়। কবরস্থানটা গ্রামের দক্ষিণদিকের শেষ মাথায়।



শিহাব কবরস্থানের গেইট দিয়ে ঢুকে মায়ের কবরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ চমকে উঠল সে। তার মায়ের কবরে কে যেন ঝুকে আছে। দূর থেকে দেখতে মানুষ মনে হয়। শিহাব কাছে গিয়ে বলল: কে? কে তুমি?



ভয়ংকর চেহারা নিয়ে একটা দানবটা তার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে অনেক বড় সে। দানবটার হাতে তার মায়ের লাশ। কবর থেকে তুলে দানবটা তার মায়ের লাশ অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে। কি বীভৎস দৃশ্য!  শিহাব ইভার নাম ধরে চিৎকার করে উঠল: ইভা...আ....আ....আ........



কোন সাড়া নেই ইভার। দানবটা তার মায়ের লাশটা ফেলে দিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। এইবার জীবন্ত মানুষ খাবে সে। শিহাব পিছু যেতে লাগল। দানবটা তার লম্বা লম্বা হাত বাড়িয়ে দিল শিহাবকে ধরার জন্য। 


হঠাৎ একটা আলোর ঝিলিক এসে দানবটার চারপাশে ঘূর্ণির মতো ঘুরতে লাগল। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল দানবটা। আলোর ঝিলিকটা ঐ দানবটাকে শূন্যে তুলে ফেলল। তারপর অনেক উপর থেকে ছেড়ে দিল। "ধপ" করে একটা শব্দ হল। উপর থেকে মাটিতে পড়ল দানবের বিশাল দেহ।



শিহাব উপর দিকে তাকাল। দেখল, উপর থেকে পরীর মতো নেমে আসছে ইভা। বাতাসে তার সাদা শাড়ির আঁচল উড়তেছে। মাটিতে নেমে এল ইভা। দানবটাও উঠে দাঁড়াল। যেন সেও দমবার পাত্র নয়। অনেক্ষণ চলল দানব আর অশরীরীর যুদ্ধ।



শিহাব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সে জানে এই যুদ্ধে তার প্রিয়তমা ইভা-ই জিতবে। কারন সে একবার মারা গেছে, দ্বিতীয়বার মরার প্রশ্নই আসেনা। ইভা তার খুরের মতো লম্বা লম্বা নখ বের করে দানবটার পেটে ঢুকিয়ে দিল। দানবটার পেটের ভেতর শিহাবের মায়ের মাথাটা ছিল, যেটা সে একটু আগে গিলেছিল।  ইভা দানবটার পেটের সবকিছু বের করে আনল। এক গগনবিদারী আর্তনাদ করে মারা গেল সেই বিশাল দানব।



তারপর ইভা আর শিহাব দুজনে মিলে আবারও কবর দিল মায়ের লাশ। শিহাব তার মায়ের কবরটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। ইভা তার মাথায় হাত রেখে বলল: শিহাব, চল.........




বাসায় এসে শিহাব গোসল করে, খেয়েদেয়ে, রুমে এসে শুয়ে পড়ল। ইভা আছে তার বুকের উপর। সে জিজ্ঞেস করল: মন খারাপ?


--হুমমম.....


--কেন?


--বাবা বলছে বিয়ে করতে। কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবনা।



--পাগল একটা। অশরীরীকে কেউ বিয়ে করে পাগল?



--কিন্তু আমি তো তোমাকে ছাড়া এখন অন্য কাউকে কল্পনা করতে পারিনা। 



--সেটা অসম্ভব শিহাব। তুমি তোমার বাবার কথা শুন। তোমার বাবাকে তোমার জন্য সুন্দর একটা বউ আনতে বল, যার রুপ দেখে আমাকে ভুলে যাবে।



--বলা সহজ, করা কঠিন। তোমাকে আমি জীবনেও ভুলতে পারবনা ইভা। অশরীরির সাথে প্রেম করতে পারলে অশরীরিকে বিয়ে করা যাবেনা কেন?



--অশরীরিকে বিয়ে করা যাবেনা কেন, সেটা তুমি ভালো করেই জান। পৃথিবীতে আমার কোন অস্তিত্ব নেই শিহাব। তোমার বাবাকে কাল থেকে পাত্রী দেখতে বল.....


--কিন্তু.....


--কোন কিন্তু না।" ইভা হাত রাখল শিহাবের মুখে। তারপর বলল: আমি তো সবসময় আছি তোমার এই হৃদয়ে, আজীবন থাকব। কিন্তু তোমাকে তো সংসার করতে হবে। সংসার করার জন্য একটা বউ লাগবে তোমার।


--আমি কিছু ভাবতে পারতেছিনা। এই মুহূর্তে আমি অন্য কিছু ভাবতে পারছিনা। শুধু তোমার ভালোবাসা পেতে চাই।


--তাই??


--হুমমম......


--এই তো আমি তোমার বুকে শুয়ে আছি, তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।


--আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধর.....


--ব্যথা পাবেনা তো??


--নাহ, আমি তোমার সাথে মিশে যেতে চাই।



--পাগল....." মিষ্টি একটা হেসে দিল ইভা। পাগল করা সেই হাসি। শিহাবের নাকে তার নাকটা ছুয়ে দিল সে। তারপর বলল: জান, বেঁচে থাকতে স্বপ্ন দেখতাম, তোমার আমার বিয়ে হবে, আমাদের ছোট্ট একটা বাবু হবে। ঐ বাবুটাকে তুমি মানুষ করবে, আর আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসব....... স্বপ্নটা হয়তো একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল, তাই বিধাতা পূরণ করেনি।" একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ইভা......



--আমার একটা ভুলের জন্য আজ এতকিছু। সেদিন কেন তোমার এই পবিত্র ভালোবাসা আমার চোখে পড়েনি?? বড় আফসোস হয় আমার।" বলতে বলতে  শিহাব দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে নিল ইভাকে। 



ইভা বলল: তবে এখন আমার আর কোন দুঃখ নাই। বেঁচে থাকলে তো তোমার ভালোবাসা পেতামনা। মরার পরই তো তোমার ভালোবাসা পেয়েছি....... এইটায় আমার জন্য পরম পাওয়া, আর কি চাওয়ার আছে আমার। তোমার একটুখানি ভালবাসায় আমি পাগল হয়ে যায়..... অনেক রাত হয়েছে, ঘুমাও শিহাব.....



--তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাব।



--ঠিক আছে। আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।" বলতে বলতে ইভা শিহাবের মাথায় হাত বুলাতে লাগল। হাতে যেন তার যাদু আছে। একটু পর ঘুমিয়ে পড়ল শিহাব.......



চলবে..........

#অশরীরি_প্রেম_পর্ব-১০

#banglastory143

#oshoriri_prem_part_10

No comments

Powered by Blogger.