গল্প | অশরীরি প্রেম - পর্ব-০৯

লেখক | সোহেল রানা


শিহাবের দেহ থেকে ইভার আত্মা বের হয়ে গেল। শিহাব একদম স্বাভাবিক আছে। ইভা হঠাৎ শিহাবকে জড়িয়ে ধরল। কাঁদতে কাঁদতে বলল: আ'ম স্যরি শিহাব.... অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ.......



--আরে না, কিসের কষ্ট?? তোমার কারণে আমাদের এলাকা আজ অভিশাপমুক্ত হয়েছে। ধন্যবাদ তোমাকে।



--সত্যি তো? কোন কষ্ট হয়নি তো? তোমার কষ্ট হলে, এই আত্মাটা ছটফট করে। ভালোবাসি তো তোমায়।"  ইভার  চোখে অশ্রুকণা জ্বলজ্বল করতে লাগল। অপূর্ব লাগতেছে তাকে। শিহাব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল তার দিকে।



--ওভাবে কি দেখছ?" ইভা জিজ্ঞেস করল।



--তোমাকে।" বলল শিহাব।



--আমার লজ্জা করে তো।



--লজ্জা পেলে তোমার লাজুক মুখটাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে।



--শিহাব......" লজ্জামাখা কণ্ঠে শিহাবের নামটি উচ্চারণ করে ইভা ঝাপিয়ে পড়ল শিহাবের বুকে। শিহাব অশরীরি ইভার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল: ঐ সাদিয়ার মাঝে আমি কি পেয়েছিলাম তখন তোমার এই রূপ আমার চোখে পড়েনি? এখন মনে হচ্ছে সাদিয়ার সাথে কাটানো দিনগুলো ছিল বৃথা।



--থাক ওসব কথা, জান....আমি সাদিয়াকে বাঁচিয়ে রেখেছি শুধু তুমি ভালোবাসতে বলে। না হলে তাকেও মেরে ফেলতাম। তার কারণেই তুমি এত কষ্ট পেয়েছ.......



--ভালো হয়ছে, সে তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করুক। বাসায় চল এবার......



--না শিহাব, তুমি একা যাও.....আমার আজ রাতে আরও একটা কাজ আছে।



--কি কাজ??



--সৈয়দ তারেকের বাড়িতে কয়েকটা যুবতী মেয়ে আটকা পড়ে আছে। তাদেরকে মুক্ত করতে হবে।



--আমিও চলি তোমার সাথে.....



--না শিহাব....তুমি বাসায় যাও। একটু পর আমি তোমার বুকে ফিরে আসতেছি........



________নতুন অপারেশন________


সৈয়দ তারেকের দু'তলা বাড়ি। উপরের তলায় কয়েকজন মেয়ে চিৎকার করতেছে, সাউন্ড প্রুফের কারণে তাদের আওয়াজটা বাহিরে যাচ্ছেনা। তাদেরকে পাহারা দিচ্ছে বাড়ির দারোয়ান আর দু'জন কাজের লোক।



বাড়ির কর্তাকে এত রাতেও ফিরে আসতে না দেখে তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নিল কর্তার ভাগে ভাগ বসাবে। তিনজনে একসাথে ঢুকল সাউন্ড প্রুফ রুমে। দরজা বন্ধ করে দিল। 



তারপর তিনজনে তিনটা মেয়েকে আক্রমণ করল তাদের কামনা মেটাতে। মেয়েগুলো চিৎকার শুরু করল। কিন্তু তাদের চিৎকারে কেউ সাড়া দিলনা। তাদের চিৎকার রুমের ভেতরেই আটকে আছে। হঠাৎ দারোয়ান এর আর্তচিৎকার শুনা গেল। কাজের লোক দুটি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করল: কি হল ভাই? এভাবে আর্তনাদ করে উঠলে কেন?



দারোয়ান কোন উত্তর দিলনা। সে চিৎকার করতে লাগল। আর তার বুকটা চিরে দুইভাগ হয়ে যাচ্ছে আপনাআপনি।  পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাচ্ছে। কাজের লোক দুটি তা দেখে ভয় পেয়ে গেল।



হঠাৎ ইভা ভয়ংকর রুপে উদয় হল তাদের সামনে।  কাজের লোক দুটি পালাতে চাইল। ইভা তাদেরকে ধরে তার দু'হাতের লম্বা লম্বা নখগুলো দু'জনের পেটে ঢুকিয়ে তাদেরও নাড়িভুঁড়ি বের করে আনল।



দু'জনেই ছটফট করতে করতে মারা গেল। দারোয়ানটা তাদের আগেই মারা গেছে। তারপর ইভা ভয়ংকর রূপ ছেড়ে মেয়েগুলোর সামনে গেল। মেয়েগুলোও তখন ভয়ে কাঁপতেছিল। ইভা তাদেরকে বলল: ভয় নেই। আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করবনা।



মেয়েগুলো কাঁপতে কাঁপতে বলল: কিন্তু তুমি কে?



--আমি? আমিও একসময় মানুষ ছিলাম। কিন্তু এখন অশরীরী।  ভাল মানুষদের ক্ষতি করিনা আমি। তোমরা এখন মুক্ত। চলে যাও তোমরা এখান থেকে। বলতে বলতে ইভা অদৃশ্য হয়ে গেল।



শুয়ে শুয়ে অপেক্ষা করতে লাগল শিহাব ইভার জন্য।   হঠাৎ ইভাকে তার বুকে দেখে চমকে উঠল সে।



ইভা দুষ্টামি মাখা হাসি দিয়ে বলল:- কি? ভয় পেলে নাকি? 



--তো ভয় পাব না? এভাবে আস কেন তুমি?



--কি? আমাকে তুমি ভয় পাও?  ঠিক আছে, চলে যাচ্ছি আমি। আর আসবনা।" চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল ইভা। শিহাব তার হাত ধরে বলল:- কোথায় যাবে আমাকে ছেড়ে?



--না, আমি চলে যাব। ছাড় আমাকে। 


--আর ভয় পাবনা। হয়ছে এবার??



--না হয়নি।" জেদ করল ইভা। "একবার তো ভয় পেয়েছ, আবার যে ভয় পাবেনা তার কি বিশ্বাস আছে? আমি চাইনা তুমি ভয় পাও" ইভা অদৃশ্য হয়ে গেল। শিহাব কয়েকবার ইভার নাম ধরে ডাক দিল: এই ইভা......ইভা....ইভা......


কোন সাড়া নাই ইভার।


--ইভা, কোথায় তুমি? প্লিজ সামনে আস.......


আবারও কোন সাড়া দিলনা ইভা। 



--ইভা, কই তুমি? প্লিজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে সামনে আস......" বলতে বলতে কাঁদতে লাগল শিহাব। হঠাৎ সে শুনল, কেউ যেন তার কানে কানে বলছে: এই পাগল, কোথায় যাব তোমাকে ছেড়ে? ভালোবাসি তো তোমায়......



--তাহলে সামনে আস.....



ইভা সামনে এল। ঠোটে তার লেগে আছে সেই দুষ্টামি মাখা হাসি। শিহাবের চোখের জ্বল মুছে দিয়ে সে বলল: পাগল একটা......



শিহাব ইভাকে জড়িয়ে ধরে বলল: এভাবে কষ্ট দিলে কেন আমাকে? অনেক ভালোবাসি তোমায়। 



--আর কষ্ট দেব না তোমায়।



--সত্যি তো?


--হুমমম.....


--ছেড়ে যাবেনা তো??



--না, যাবনা। এবার আমাকে বুকে নাও। তারপর ঘুমাও.......



শিহাব ইভাকে বুকে নিল। ইভা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল শিহাবকে। একটু পর শিহাব ঘুমিয়ে পড়ল। ইভা তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ভাবতে লাগল এর পরিণতি কি হতে পারে।



সে জানে সে চিরদিন এখানে থাকতে পারবেনা। সে একটু তৃপ্তি পেতে এসেছে। তার হৃদয়টা এখন শিহাবের ভালোবাসা পেয়েছে। তাকে তো এবার চলে যেতে হবে। কিন্ত পাগলটা তাকে খুব ভালবেসে ফেলেছে।



সে চলে গেলে শিহাব থাকবে কি করে? শিহাবের অনেক কষ্ট হবে তখন।  আর শিহাবের কষ্ট ইভা সহ্য করতে পারবেনা। কি করবে সে এখন? কিছুই বুঝতে পারলনা। ঘুমন্ত শিহাবের বুকে শুয়ে তার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইভা।কপালে তার আলতো করে একটা চুমো খেল সে।



বেঁচে থাকতে যদি শিহাব তাকে এভাবে ভালবাসত, তাহলে আজ এতকিছু হতোনা। আফসোস করল ইভা। ঘুমন্ত শিহাবের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে সারারাত কাটিয়ে দিল সে। দু'চোখ বেয়ে তার অশ্রু নেমে এল।



একটিই আফসোস তার, বেঁচে থাকতে তার প্রতি শিহাবের এই ভালোবাসা কোথায় ছিল তখন???



চলবে.....

#অশরীরি_পেম_পর্ব-০৯

#oshoriri_prem me

#banglastory143

No comments

Powered by Blogger.