গল্প | অশরীরি প্রেম - পর্ব-০৮

লেখক | সোহেল রানা




--চল ফিরে যায় শিহাব" অনুনয়ের সুরে বলল ইভা।



--কেন? তুমি কি তাকে ভয় পাচ্ছ?



--না, আমি তোমার জন্য ভয় পাচ্ছি..... আমি একা হলে ভয় ছিলনা।



--হুমমম....চল।



বাসায় ফিরে শিহাব অশরীরী ইভাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।



সকালে কান্নার শব্দ আর লোকজনের চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল তার। রুম থেকে বের হয়ে দেখল তার মায়ের মৃতদেহ পড়ে আছে।



ঘটনা আর কিছু না, পানি ফুরিয়ে গেলে তার মা পানি আনতে যায় কুয়াতে খুব ভোরবেলায়। তারপর কুয়াতে পড়ে মারা যায়। শিহাব বুঝতে পারল পুরো ঘটনাটা, কাল রাতে যদি একটু সাবধান হত, তাহলে তার মাকে এভাবে জীবন দিতে হতনা। মায়ের লাশের পাশে বসে কাঁদতে লাগল সে......



মাকে হারিয়ে শিহাব খুব ভেঙে পড়ল। পৃথিবীতে সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসত তার মাকে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! তার ভালোবাসার মানুষগুলো এভাবে হারিয়ে যায় কেন?



সারাদিন খুব কষ্টে কাটল শিহাবের। রাতে ইভা আসার পর একটু স্বস্তি পেল। ইভা জিজ্ঞেস করল:- মন খারাপ?



--ইভা, আমার জীবনটা কেন এমন বলতে পার?" চোখের কোণে জলকণা দেখা দিল শিহাবের। ইভা তা মুছে দিয়ে বলল: মন খারাপ করোনা শিহাব, মনে কর এই এলাকায় এইটাই শেষ মৃত্যু ঐ অশরীরীর হাতে। ওকে আমি শেষ করে দিব।



--কিন্তু তোমার যদি কিছু হয়?



--আমার কিছু হবেনা। কারণ ওর শক্তির চেয়ে আমার শক্তি বেশি। আমি মারা গেছি ভালোবাসা না পেয়ে আত্মহত্যা করে, আর ও খুন হয়েছে। ওকে খুন করে ঐ কুয়ায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ওদের শক্তির চেয়ে আমাদের শক্তি বেশি হয়। কিন্তু একটা সমস্যা আছে।



--কি সমস্যা??



--ঐ কুয়ার ভেতরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। ওকে কূয়া থেকে বের করতে হবে।



--এটা কিভাবে করবে।



--আমি একটা উপায় বের করেছি।



--কি উপায়?



--আমি তোমার দেহের ভেতর প্রবেশ করব। তারপর ঐ কুয়াতে যাব। মানুষের অস্তিত্ব ঠের পেয়ে তখন ঐ অশরীরি কুয়া থেকে বের হয়ে আমাকে মারতে চাইবে। তারপর ওকে শেষ করব।



শিহাব ইভাকে বিশ্বাস করে। তাই আপত্তি করলনা। ইভা শিহাবের দেহে প্রবেশ করল। এই মুহূর্তে শিহাবের আর কোন অস্তিত্ব নেই, কারণ একটি দেহে দুটি আত্মা থাকতে পারেনা। ইভার আত্মা বের হয়ে গেলেই তারপর শিহাব স্বাভাবিক মানুষ হবে।



শিহাবের শরীর নিয়ে ইভা ঐ কুয়ার পাশে গেল। মানুষের অস্তিত্ব বুঝতে পেরে কূয়া থেকে বের হল আরেক অশরীরি। ভয়ংকর তার চেহারা। ভয়ংকর গর্জন করতে লাগল সে।



ইভা তাকে বলল: দাড়াও তয়া, আমি ইভা। আমি শিহাবের দেহ থেকে তার আত্মাকে আলাদা করে দিয়েছি। এখন তাকে আমি আপন করে পাব।



অশরীরি তয়া বলল: এই কাজটা তুমি এত সহজে কিভাবে করলে?



--কারন ও আমাকে খুব বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল।



--তুৃমি তো ওকে অনেক আগে মেরে ফেলে ওকে তোমার কাছে নিয়ে আসতে পারতে, তা করলেনা কেন?



--আমি তাকে কষ্ট দিতে চাইনি। ভালোবাসি কিনা তাকে। যাইহোক, এবার তোমার প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। তোমাকে যে খুন করে এই কুয়াতে ফেলে দিয়েছিল তাকে এবার শেষ করতে হবে।"



ইভার কথা শেষ হতে না হতেই দুই অশরীরী মিলে অট্টহাসি হাসতে লাগল। তাদের এ হাসিতে আকাশে-বাতাসে কম্পন সৃষ্টি হল।



গ্রামের একদম শেষ মাথায় একটা দু'তলা বিল্ডিং আছে। সৈয়দ তারেক এর বাড়ি এটা। একা সে চাকর-বাকর নিয়ে থাকে এই বাড়িতে। বিয়ে করেনি এখনও। তবে সারাক্ষণ মেয়ে মানুষ নিয়ে মত্ত থাকে। জীবনে দুটো নেশা তার। মেয়ে মানুষ আর মদ।



আজও সে গভীর রাতে মদ খেয়ে বাসায় ফিরতেছিল। দিনটা আজ তার খারাপ গেছে। কারণ মেয়ে মানুষের সংস্পর্শে যেতে পারেনি সে আজ।



হঠাৎ একটা মেয়েমানুষকে তার বাসার সামনে কাঁদতে দেখে থমকে দাঁড়াল। আহ! এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি! সৈয়দ তারেক ধীর পায়ে মেয়েটির কাছে গেল। কি অপূর্ব এক মেয়ে!



--কি ব্যাপার, তুমি কাঁদছ কেন?" সে জিজ্ঞেস করল মেয়েটিকে।



--আমাকে একটা লোক তাড়া করেছে, আমি এদিকে পালিয়ে আসি।" মেয়েটি জবাব দিল।



--কি? এত বড় সাহস কার? আমার এলাকায় আমার চেয়ে বড় শয়তানটা কে? চল দেখি......



--আসুন আমার সাথে।



দু'জন হাটতে লাগল। অনেক্ষণ হাটার পর তারেক জিজ্ঞেস করল:- আর কতদূর?



--এই তো সামনে একটা কূয়া। ওখানে ছিল সে.....



--আচ্ছা চল।



কুয়ার পাশে এল দুজন। কুয়ার দিকে তাকাতেই চমকে উঠল তারেক। কুয়া থেকে উঠে আসছে তয়া। যাকে সে কয়েকবছর আগে ইজ্জত লুটে খুন করে এই কুয়া তে ফেলে দিয়েছিল।



ভয় পেয়ে দৌড় দিতে চাইল সে। একটা লোকের সাথে ধাক্কা খেল সে। যে মেয়েটার সাথে এসেছে, সেই মেয়েটাকে কোথাও দেখতে পেলনা সে। দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে সে বলল: ভাই আমাকে বাঁচাও ঐ অশরীরির হাত থেকে।



মেয়েলি কণ্ঠে লোকটা বলল:- তোকে তো বাঁচাব বলে এখানে নিয়ে আসিনি। তোকে মারব বলে নিয়ে এসেছি। আমি নিজেও অশরীরি।" ইভা আর তয়া একসাথে হা হা করে হাসতে লাগল। তারপর তারেককে ধরে খুন করল দু'জনে। কুয়াতে ফেলে দিল তার লাশ। আবারও অট্টহাসি হেসে উঠল দু'জন।



একটু পর ইভা হাসি থামিয়ে তয়াকে জিজ্ঞেস করল: তয়া, তোমাকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছিল দেখাবে?



--দেখবে? চল...... কিন্তু একটা কথা আমি কবরের কাছে যেতে পারবনা। কাছে গেলেই আমি আমার সব শক্তি হারাব। আমি আর এই এলাকাকে ধ্বংসস্তুপ বানাতে পারবনা।



--আরে তা তো আমি জানি। নিজের কবরের কাছে গেলে আমিও আর আত্মা হয়ে ঘুরতে পারবনা।



--হুমমম.... আচ্ছা চল, আমার কবরটা তোমাকে দেখিয়ে নিয়ে আসি।



দু'জনে কবরস্থানে এল। তয়া তার কবর থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে একটা কবরের দিকে ইঙ্গিত করে বলল:- ঐটা আমার কবর।



--ঐ যে ওটা??



--হুমমম....ওটা।



--তাহলে তুই তোর কবরের সাথে মিশে যা পাপিষ্ঠা আত্মা।" বলতে বলতে ইভা ধাক্কা দিল তয়াকে। তয়া গিয়ে পড়ল তার কবরের উপর। তয়া তখন ধোয়া হয়ে বাতাসে মিশে যেতে লাগল। একটা অদৃশ্য কণ্ঠ শুনা গেল তার: ইভা, তুই আমার সাথে বেইমানি করলি?



-ইভা বলল:- বেইমানি না,, এটা আমার ভালোবাসার প্রমাণ। তারপর হেসে উঠল সে।



চলবে...........

#অশীরি_প্রেম_পর্ব-০৮

#oshoriri-prem 

#banglastory143

No comments

Powered by Blogger.