গল্প | অশরীরি প্রেম - পর্ব-১৩
লেখক | সোহেল রানা

__________বিপদ__________
গভীর রাত। ইভা বসে আছে জানলার পাশে। দৃষ্টি তার জানলার বাইরে। আর শিহাব বেডে শুয়ে আছে। সে ডাক দিল:- ইভা......দূরে কেন???"
দৃষ্টি ফিরিয়ে ইভা তাকাল সরাসরি শিহাবের বুকের দিকে। চোখদুটো তার অশ্রুসিক্ত। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল সে, তারপর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল: দূরেই তো থাকার কথা আমার। কাছে এসে কি করব? ঐ বুক তো মারিয়ার সম্পদ। আমি তো অশরীরি। আর অশরীরিদের তো কোন সম্পদ থাকেনা।"
বড় করুণ শুনাল ইভার কথাগুলো। শিহাব বিছানা থেকে নেমে ইভাকে কাছে টেনে নিল। তারপর বুকের সাথে চেপে ধরে শুয়ে পড়ল। ইভাও সব অভিমান ভুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল শিহাবকে। তারপর ডুকরে কেঁদে উঠল।
অনেক্ষণ কান্না করল সে শিহাবকে জড়িয়ে ধরে। তারপর ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল:- মানুষের জীবনটা বড় অদ্ভুত, তাইনা শিহাব? সত্যিকারের ভালোবাসাগুলো আড়ালে থেকে যায় কেন?? কেন মানুষ সত্যিকারের ভালোবাসা দেখতে পাইনা??
আমার বড় আফসোস হয় জান, বেঁচে থাকতে তোমায় কেন পেলামনা?? কেনইবা অশরীরি হয়ে তোমার ভালোবাসা পেতে হল??" ইভার কান্নার বেগ বেড়ে গেল।
শিহাব বলল:- ইভা, তুমি এমন করলে কিন্তু আমি মারিয়াকে বিয়ে করবনা।"
শিহাবের এ কথায় ইভা কান্না থামাল। দু'চোখ মুছে ফেলল। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল সে শিহাবের মুখের দিকে। আলতো করে একটা চুমু খেল শিহাবের কপালে। তারপর বলল: আমার সাথে একটু বাইরে যাবে? খুব ইচ্ছে করতেছে তোমার কাঁধে মাথা রেখে, তোমাকে দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে চাঁদের আলোতে হাটতে।
শিহাব ইভাকে নিয়ে বাইরে এল। ইভা দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল শিহাবকে, আর মাথা রাখল তার কাঁধে। তারপর দু'জন চুপচাপ হাটতে লাগল। অনেক্ষণ নিরবতায় কাটল সময়। নিরবতা ভেঙে হঠাৎ শিহাব বলল:- ইভা আমি মরতে চাই। আমি আর পারছিনা। আমি তোমার কাছেই যেতে চাই।
থমকে দাঁড়াল ইভা। শিহাবকে ছেড়ে দিয়ে বলল:- কি বললা তুমি? তুমি কি চাও আমি এক্ষুণি চলে যাই?
--নাহহহ,, চাইনা.....
--তাহলে আর মরার কথা বলবেনা।
--কিন্তু, আমি তো আর পারছিনা।
--ঠিক আছে, আমি আর কান্না করবনা। এইবার তো হল। মারিয়াকে বিয়ে করে তুমি সুখে জীবন কাটাবে। আর তুমি ওর মাঝেই আমাকে খুঁজে নিও। জান, ছোট থাকতে মারিয়া আমার জিনিসগুলোর জন্য আবদার করত, দেখনা- বড় হয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটাও সে পেতে যাচ্ছে। বড় ভাগ্যবতী মেয়ে সে। আমিই কেবল পোড়াকপালি। শিহাব......
--হুমমম......
--আমাকে একটু কোলে নিবা প্লিজ?? খুব ইচ্ছে করতেছে।শিহাব ইভাকে পাঁজাকোলা করে নিল। ইভা শিহাবের গলা জড়িয়ে ধরল, আর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল শিহাবের মুখের দিকে। শিহাব ইভাকে কোলে নিয়ে হাটতেছে। হাটতে হাটতে গ্রামের শেষ মাথায় চলে এসেছে। ভালোই লাগছে তার। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে ওরা।
হঠাৎ ইভা চমকে উঠে বলল:- শিহাব, আমাকে নামিয়ে দাও তাড়াতাড়ি। শিহাব ইভাকে নামিয়ে দিয়ে বলল:- কি হয়েছে শিহাব??
--শিহাব, আমি এখানে চারটা অশরীরি আত্মার অস্তিত্ব অনুভব করতেছি।
--মানে?
--সৈয়দ তারেকের বাড়িতে চারটা অশরীরী আত্মা। ওরা আত্মা হয়ে ফিরে এসেছে শিহাব।
--এখন কি হবে?
--ওদেরকে তাড়ানো সহজ না। তুমি সাদিয়ার সাথে যোগাযোগ করে সেই তান্ত্রিকের কাছে যেতে বল তাকে। এখন চলে যাও তুমি এখান থেকে। আমি যাচ্ছি সৈয়দ তারেকের বাড়ি।
ইভা সৈয়দ বাড়ির দু'তলায় গেল। দেখল, সৈয়দ তারেক, দুইজন কাজের লোক আর দারোয়ান এর আত্মা, চারটা আত্মা মিলে মদ পান করতেছে। গ্রামের যুবতী মেয়েগুলো ধরে এনে তারা আটকে রেখেছে, তাদের তৃপ্তি মেটানোর জন্য। মেয়েগুলোকে বাঁচাতে হবে, ইভা সিদ্ধান্ত নিল।
সে দেরি করলনা। সবগুলো মেয়েকে একসাথে তুলে নিয়ে জানলা ভেঙে লাফ দিল। তারপর মেয়েগুলোকে ছেড়ে দিল। কিন্তু নিজে আটকা পড়ে গেল ঐ চারজনের হাতে। ঐ চার আত্মা ইভাকে ধরে নিয়ে গেল সেই বাড়িতে।
ইভা তাদের শত্রু। তার জন্যেই ওদেরকে মরতে হয়েছে। এইবার তারা ইভাকে দিয়েই সব তৃপ্তি মেটাবে। ইভা অনেক্ষণ লড়াই করল ওদের সাথে। কিন্তু চারজনের বিরুদ্ধে সে একা কতক্ষণ আর লড়াই করবে। ইভার উপর ঝাপিয়ে পড়ল চারজন একসাথে।
ইভার শাড়িটা তারা টেনে ছিড়ে ফেলতে যাবে, ঠিক তখনই চারটা আত্মা একসাথে গগনবিদারী গর্জন করে উঠল। ইভা মুক্ত হল। আর ঐ চার আত্মা অদৃশ্য হয়ে গেল। ইভা বুঝল, কেউ ঐ চার আত্মাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক করে নিয়ে গেছে। এ নিশ্চয়ই ঐ তান্ত্রিককের কাজ। শেষ পর্যন্ত সাদিয়া তাকে বাঁচাতে সাহায্য করেছে। মনে মনে কৃতজ্ঞ হল ইভা সাদিয়ার উপর।
ইভা সৈয়দ তারেকের পুরো বাড়িটা মুহূর্তেই ভেঙে দিল। তারপর শিহাবের কাছে ফিরে এল। শিহাব এতক্ষণ চিন্তায় অস্থির ছিল। ভাগ্যিস সাদিয়াকে কল করে বুঝাতে পেরেছে। সে তান্ত্রিকের সাথে যোগাযোগ করেছে, নইতো ইভার উপর দিয়ে অনেক বড় বিপদ বয়ে যেত।
ইভাকে পেয়ে শিহাব যেন প্রাণ ফিরে পেল বুকে। দৌড়ে গিয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরল তারা। ইভা শিহাবের নাম ধরে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল......
চলবে.............
#banglastory143
#অশরীরি_প্রেম
No comments