গল্প | অশরীরি প্রেম -পর্ব-১৪

লেখক | সোহেল রানা



________আবারও বিভীষিকা_______


এলাকার প্রভাবশালী লোক রাজ চৌধুরী। বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে বলে ভেবেছিলেন আর কখনও বিয়ে করবেননা। কিন্তু হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে উনার মানসিকতা পাল্টে যায়। বিয়ে তিনি করবেন, এবং এই মেয়েকেই করবেন। অটুট সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।



ঐ মেয়ের সব খোঁজখবর নিলেন তিনি। নাম মারিয়া। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে, বংশ মর্যাদাও তাদের কম না। কিন্তু শুনেছেন শিহাব নামে একটা ছেলের সাথে তার বিয়ে হতে যাচ্ছে।  এটা তিনি মেনে নিলেননা। যেভাবেই হোক মারিয়াকে তার চাই। 



তিনি গ্রামে তার লোকদের দিয়ে প্রচার করে দিলেন শিহাব পাগল হয়ে গেছে,  তাকে একা একা কথা বলতে দেখা যায়, অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায়। গ্রামের অনেকেই দেখেছে তাকে পাগলামি করতে দেখে।



শিহাব বাড়ি থেকে বের হতে পারেনা, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তার পিছু নেয়, তার উপর পাথর ছুড়ে। এদেরকেও রাজ চৌধুরী লেলিয়ে দিয়েছেন তার পেছনে।



শিহাব ঘরে বসে আছে। একটু পর কয়েকজন লোক এল মানসিক হাসপাতাল থেকে। শিহাবকে জোর করে ধরে নিয়ে গেল পাগল বলে। রাজ চৌধুরী মানসিক ডাক্তারকে অনেক টাকা দিল, যাতে শিহাবকে পুরোপুরি পাগল বানায়।



এদিকে মারিয়াকে তুলে নিয়ে গেলেন তিনি। একটা রুমে আটকে রাখলেন তাকে। রাজ চৌধুরী ডুকলেন সেই রুমে। মারিয়ার সামনে গিয়ে বসলেন। মারিয়া মুখ ফিরিয়ে নিল ঘৃণায়।



রাজ চৌধুরী পরোয়া না করে বললেন: মারিয়া, আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ.....



মারিয়া বলল: আঙুর ফল টক মনে করে আমার জীবন থেকে সরে যান.....



--দেখ মারিয়া, আমি তোমাকে কখনো কষ্টে রাখবনা, আমাকে বিয়ে করলে তুমি সুখে থাকবে।



--আমার সুখের ঠিকানা আমি পেয়ে গেছি।



--মারিয়া...মারিয়া...মারিয়া...." উত্তেজিত হয়ে উঠলেন রাজ চৌধুরী। "মারিয়া, তোমার সেই সুখের ঠিকানা আমি নষ্ট করে দেব। শিহাব পুরোপুরি পাগল হয়ে যাবে। সেই ব্যবস্থা করে রেখেছি।



--শিহাবের একটু ক্ষতি যে করবে সে বাঁচতে পারবেনা। তার উপর রক্ষাকবচ হিসেবে আছে অশরীরি ছায়া। 



--অশরীরী!!



--হুমমম.....কেউ বাঁচতে পারবেনা তোমরা।"



মারিয়ার কথা শুনে রাজ চৌধুরী "হা হা হা" করে হেঁসে উঠলেন। বললেন: এসব আজগুবি কথা রাখ। মনে হচ্ছে শিহাবের মতো তুমিও মানসিক সমস্যায় ভুগছ। যাইহোক,  একটু ভাব, আমাকে বিয়ে করবে কিনা। আমি আবার আসব।" বলতে বলতে রাজ চৌধুরী বের হয়ে গেলেন রুম থেকে।



মারিয়া চিন্তা করতে লাগল এখন সে কি করবে। এখন একমাত্র ইভা ছাড়া আর কেউ বাঁচাতে পারবেনা তাকে আর শিহাবকে। 



রাতে আবারও  রাজ চৌধুরী এলেন। মারিয়ার রুমে ঢুকতে যাবে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন।  মারিয়া ড্রেস বদলাল কিভাবে??  এখানে মেয়েদের পোশাক নেই। অথচ ড্রেস পাল্টিয়ে একটা সাদা শাড়ি পড়ে আছে মারিয়া।



ব্যাপারটাকে এতটা গুরুত্ব না দিয়ে রাজ চৌধুরী রুমে ঢুকলেন। মারিয়ার সামনে বসে সরাসরি মূল কথায় চলে গেলেন: মারিয়া, ভেবে কিছু পাইছ? কি? বিয়ে করবে তো আমাকে?



--না।



--শেষবারের মতো বলছি, রাজি হও। নইলে কিন্তু ইজ্জত হারাবে।



--কখনো রাজি হবনা। ইজ্জত  নিয়ে দেখা......



মারিয়ার কথাটি রাজ চৌধুরীর প্রেস্টিজে আঘাত করল। তিনি উঠে মারিয়ার উপর ঝাপয়ে পড়লেন হায়েনার মতো। বিয়ে করতে না পারলে ইজ্জতও রাখবেনা তিনি মারিয়ার। 


মারিয়ার শাড়ির আঁচল ধরে টান দেবার মুহূর্তে রাজ চৌধুরী চমকে উঠলেন।  ভয়ে পিছিয়ে এলেন। মারিয়া হঠাৎ এত ভয়ংকর রুপ ধারণ করল কি করে?



ভয়ে ভয়ে বললেন: কে?  কে তুমি?



--ইভা....অশরীরী ইভা"



রাজ চৌধুরী ভয়ে দৌড় দিলেন দরজার দিকে। দেখলেন আসল মারিয়া দরজা আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মারিয়া রাজ চৌধুরীকে ধাক্কা দিল ইভার দিকে। ইভা তখন প্রতিশোধের নেশায় উত্তেজিত হয়ে আছে। দেরি করলনা সে। তার হাতের লম্বা লম্বা নখগুলো আগে থেকেই বেরিয়ে আছে শত্রুর পেট ভেদ করার জন্য। 



সে লম্বা লম্বা নখগুলো রাজ চৌধুরীর পেটে ঢুকিয়ে দিল। মারিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলল। দেখতে পারলনা সে এই বীভৎস দৃশ্য।  যখন চোখ খুলল সে, দেখল রাজ চৌধুরীর লাশ নিচে পড়ে আছে। নাড়িভুঁড়ি সব বের হয়ে আছে। আর তার পাশে বিজয়িনীর বেশে দাঁড়িয়ে আছে ইভা। এই মুহূর্তে তার প্রথম কাজ শিহাবকে বাঁচানো।




মেন্টাল হসপিটাল, পাবনা। একটা কেবিনে শুয়ে আছে শিহাব। একটু আগে জ্ঞান ফিরেছে তার। ইনজেকশন দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছিল। জ্ঞান ফেরার পর সে দেখল তার হাত পা বাঁধা।



একটু পর ডাক্তার শাহরিয়ার এলেন কয়েকজনকে নিয়ে তার কর্তব্য পালন করতে। রাজ চৌধুরীর কাছ থেকে যে টাকা গুলো নিয়েছেন, তার বিনিময়ে এই কাজটা তো করে দিতে হবে। ডাক্তার শাহারিয়ার তার সাথে যারা এল, তাদেরকে আদেশ করল শিহাবের হাত পা ভাল করে ধরে রাখতে।



তারা তাই করল। শিহাব নড়াচড়া করতে পারলনা, শুধু দেখল ডাক্তারের হাতে একটা ইনজেকশন।  শিহাব বুঝতে পারল, এটা তাকে পাগল করার জন্য।  নইলে এভাবে তাকে ধরে রাখতনা।



ইনজেকশনটা দেওয়ার জন্য ডাক্তার শাহারিয়ার দু'হাত এগিয়ে নিয়ে গেলেন শিহাবের কোমরের দিকে। হঠাৎ বিল্ডিংটা কেঁপে উঠল। ভয়ংকর নারীকণ্ঠে একটা আওয়াজ শুনা গেল: ডাক্তার.......



ডাক্তার শাহারিয়ার ভয় পেয়ে হাতটা সরিয়ে নিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ডাক্তার আবারও ইনজেকশন দিতে গেলেন, আবারও কেঁপে উঠল বিল্ডিং।  আবারও ভয়ংকর কণ্ঠে শুনা গেল: ডাক্তার.......



ডাক্তার শাহারিয়ার আবারও ভয়ে পিছিয়ে এলেন। চিৎকার করে উঠলেন তিনি: কি হচ্ছে এসব? কে "ডাক্তার ডাক্তার" বলে গর্জন করে উঠে হঠাৎ?



ডাক্তারের সঙ্গীরা শিহাবকে ছেড়ে দিয়ে বলল: কিছুই তো বুঝতে পারছিনা স্যার।"



হঠাৎ কেবিনের আলো নিভে গেল। দরজা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল। কেবিনের ভেতর বয়ে চলেছে এক দমকা হাওয়া। একটা আলোর ঝিলিক ঘূর্ণিপাকের মতো ঘুরতে লাগল ডাক্তার শাহারিয়ার এর চারপাশে।



সেই আলোর ঝিলিকের ভেতর ধীরে ধীরে উদয় হল একটা মেয়ে। পরনে তার সাদা শাড়ি,  চুলগুলো উড়তেছে বাতাসে। দেখে শিহাবের মুখে হঠাৎ হাসি ফুটে উঠল। অস্ফুটে একটা শব্দ করল সে: ইভা......




চলবে................

#banglastory143

#অশরীরি_প্রেম

No comments

Powered by Blogger.