গল্প | অশরীরি প্রেম - শেষ পর্ব-১৫
লেখক | সোহেলা রানা

সাদিয়ার রুমে সাদিয়া একা বসে আছে। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সে। বাইরের প্রকৃতি তার চোখ লাগছেনা। সে ভাবছে অন্য কথা। আজ শিহাবের বিয়ে। অথচ চাইলেই সে শিহাবের বউ হতে পারত। ফেলে আসা মুহূর্তগুলো সাদিয়ার চোখের সামনে ভেসে উঠল।
কত্ত পাগল ছিল শিহাব তার জন্য। একদিন তাকে দেখতে না পেলে শিহাব পাগল হয়ে যেত যেন। সেই শিহাব আজ মারিয়াকে আপন করে নেভে। সাদিয়ার চোখদুটো অশ্রুতে ভরে গেল। একটু পর পর চোখ বেয়ে টুপ টুপ করে অশ্রু ঝরতে লাগল তার।
মিথ্যে মিথ্যে হলেও তো সে শিহাবকে ভালোবেসেছিল। এখন বুঝতেছে সে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা কোথায়? অর্থের মোহ তাকে অন্ধ করে দিয়েছিল। অর্থ যে প্রকৃত সুখ দিতে পারেনা, হাড়ে হাড়ে ঠের পাচ্ছে সাদিয়া।
আগের দিন শিহাব ফোন করেছিল সাদিয়াকে, বিয়েতে যাওয়ার জন্য। সাদিয়া হ্যা/না কিচ্ছু বলেনি। ফোনে শিহাবের কণ্ঠ শুনে নিরবে শুধু কেঁদেছিল। এই কণ্ঠটা তাকে কতবার যে "ভালোবাসি" কথাটা বলেছিল, সেই একই কণ্ঠ তাকে বিয়ের দাওয়াত দিল। ভাবতেই অবাক লাগে। জীবন কীভাবে পাল্টে যায়!
একটি ভুল! হ্যা, শুধুমাত্র একটি ভুলই সাদিয়ার জীবনটাকে আজ তছনছ করে দিয়েছে। না পেয়েছে সুখ সে, না পেয়েছে ভালবাসা। যাবেনা সে শিহাবের বিয়েতে। নিজের চোখে ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারো হয়ে যেতে দেখতে পারবেনা সে।
এখন তার শুধু কান্না করার সময়। আফসোস! কেন বুঝলনা সে আগে! হয়তো এতক্ষণে শিহাব আর মারিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। সমানগতিতে অশ্রু ঝরতে লাগল সাদিয়ার দুই চোখ বেয়ে.......
একটু পর শিহাব বাসর ঘরে ঢুকবে। মুখটা মলিন তার। মারিয়া হয়তো বাসরঘরে অপেক্ষা করতেছে তার জন্য। ইভার সাথে দেখা না হলে সে বাসর ঘরে ঢুকবেনা। দুইদিন আগে দেখা হয়েছিল ইভার সাথে। এরপর আর দেখা হয়নি। ইভা কি তবে চলে গেছে? নাহহ, এটা হতে পারেনা। ইভার সাথে দেখা না হলে সে বাসর ঘরেই ঢুকবেনা।
হঠাৎ কেউ যেন তার কানে কানে বলল: শিহাব, একটু বাইরে আসবে?
শিহাব আনন্দে লাফিয়ে উঠল। যেন হাজার বছর পর আজ সে প্রেয়সীকে দেখতে পাবে। চারদিকে তাকাল শিহাব। অতিথিরা সব চলে গেছে। শিহাব চুপিচুপি বের হল। বাইরে তখন একটা সুনসান বাতাস বইতেছিলি। বাতাস যেন একটা করুণ সুরে গান গাইছে। বাতাসও যেন বুঝতে পেরেছে আজ তাদের বিদায় হবে।
বাইরে এসে শিহাব দেখতে পেল ইভা দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা তার কালো। শিহাবকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। অনেক্ষণ কাঁদল দু'জন। তারপর ইভা বলল: শিহাব, শেষবারের মতো আমার হাত ধরে একটু হাটবে কি প্লিজ?
শিহাব ইভার হাতটা ধরল। শীতল হাত তার। হাটতে লাগল দু'জন পাশাপাশি। ইভা বলল: খুব ইচ্ছে করতেছে শিহাব তোমার কোলে উঠতে। শেষবারের মতো একটু আমাকে কোলে নিয়ে হাটবে প্লিজ।"
শিহাব ইভাকে কোলে তুলে নিল। তারপর হাটতে হাটতে বলল: আর কি কি ইচ্ছে করতেছে তোমার? সব ইচ্ছে পূরণ করব।
--তোমার বউ হতে চেয়েছিলাম বেঁচে থাকতে। আমাকে কি একবার মিথ্যে মিথ্যে করে হলেও বউ ডাকবে?
শিহাব বলল: বউ.....
শিহাবের মুখে "বউ" কথাটি শুনে ইভা ডুকরে কেঁদে উঠল। শিহাবের গলাটা আগে থেকেই জড়িয়ে ধরে আছে সে। এবার তার বুকে মুখটা চেপে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল।
শিহাব করুণ কণ্ঠে বলল: মারিয়াকে বিয়ে করেছি, কিন্তু আমি মনে করব তুমিই আমার বউ। মনে করব আমি তোমার সাথেই সংসার করতেছি। ইভা আমি কখনও ভুলতে পারবনা তোমাকে।"
ইভার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল। কাঁদতে কাঁদতে বলল: কেন এমন হল আমার জীবনটা? কেন? কেন? কেন? আমি তো এটা চাইনি.... আমি শুধু চেয়েছিলাম একটু ভালোবাসা। কেন আমি পাইনি?"
--আমি দুঃখিত ইভা। আমি তখন বুঝতে পারিনি। আমার কারণেই আজ তুমি পৃথিবীতে বেঁচে নেই।"
ইভা নিজেকে সামনে নিল। দুইচোখ মুছে বলল: শিহাব, তুমি চলে যাও। মারিয়া হয়তো অপেক্ষা করতেছে।
--কিন্তু তোমাকে ছেড়ে তো যেতে ইচ্ছে করতেছেনা।
--যেতে তো হবে শিহাব। আমিও চলে যাব। আর হয়তো দেখা হবেনা।" ইভার কণ্ঠটা খুব বেশি করুণ শুনাল। শেষবারের মতো শিহাবকে জড়িয়ে ধরে আবারও কাঁদতে লাগল। তারপর বলল: আমাকে নামিয়ে দাও শিহাব.....
শিহাব ইভাকে নামিয়ে দিল। ইভা বলল: মারিয়াকে কখনও কষ্ট দিওনা শিহাব। আর নিজের শরীরের যত্ন নিও।
শিহাব কোন কথা বলতে পারলনা। যেন বোবা হয়ে গেছে। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এই মুহূর্তে তার শুধু কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
ইভা আবরও করুণ কণ্ঠে বলল: বিদায় শিহাব, ভালো থেকো।
শিহাব নির্বাক হয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল। ইভা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। বাতাসে তার সাদা শাড়ির আঁচল উড়ছে। আর ধীরে ধীরে দূরে চলে যেতে লাগল ইভা। শিহাব অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে সেদিকে। একসময় অদৃশ্য হয়ে গেল ইভার অশরীরী আত্মা।
🔰🔰🔰 সমাপ্ত 🔰🔰🔰
Valoi silo golpo ta 😍😍😍
ReplyDelete