গল্প | বাড়িওয়ালীর মেয়ে - পর্ব-১৫ | Bariwalir Meye - Part-15

লেখা| অনিক হাসান



১৪ তম পর্বের পর থেকে.......


আমি বললাম,"তিথী তুমি আমাকে এমন রিকুয়েষ্ট করতে পারো না যে যেটা করতে লাগলে নিজের ভালোবাসা হারাতে হবে। আমি এমন রিকুয়েষ্ট রাখতে পারবো না।


তিথীর কান্না বেড়েই চলেছে। আচমকা তিথী আমাকে জড়িয়ে ধরে আরও কান্না করতে লাগলো।


আমি বললাম,"এই পাগলি এভাবে কান্না করো না। আমি তো আছি।


---কান্না করবো না তো কি করবো বলো? নিজের ভালোবাসার মানুষ ছোটবোনের বর হবে। এর চেয়ে কষ্ট কি হয় বলো?


---তুমি আমাকে ভালোবাসো। তাহলে এই ভুল করলে কেন?


---বিথী বলছে তোমাকে না পেলে সুইসাইড করবে। বাধ্য হয়ে আমি আব্বু আম্মুকে রাজি করিয়েছি।


---আমি আন্টি আঙ্কেলের সাথে কথা বলে উনাদের সব বিষয় বুঝিয়ে বলবো।


---প্লিজ তুমি এমন করো না। আমার হয়তো কিছুদিন কষ্ট লাগবে। পরে নিজেকে মানিয়ে নিবো। কিন্তু তুমি বিথীর না হলে আমার বিথীকে হারাতে হবে। আমি জীবনেও নিজেকে মাফ করতে পারবো না।


---তুমি শুধু নিজের দিকটাই ভাবছো। আমার কথাটা একবার ভাবতে। আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে সারাজীবন থাকতে হবে।


---অনিক তুমি যদি আমার কথা না রাখো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে বলে দিলাম বলে চলে গেল।


---কি বিপদে পড়লাম। একদিকে নিজের ভালোবাসা। অপর দিকে ভালোবাসায় মানুষের কথা রক্ষা করা। তিথীর কথা না রাখলে ওর মরা মুখ দেখতে হবে। আমার জন্য তিথীকে মরতে দিবো না। আমার জন্য তিথীর কিছু হলে কখনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। দরকার হলে আমি বিথীকে বিয়ে করবো। হ্যাঁ আমি বিথীকে বিয়ে করবো। অন্তত এজন্য তিথী রক্ষা পাবে না।


আস্তে আস্তে ছাদ থেকে নেমে আসলাম।


রাতে আর খেলাম না। উল্টাপাল্টা চিন্তায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারলাম না।


সকালে কে যেন বলল,"এই ওঠো, তোমার জন্য কফি আনছি।"


---ধুর এতো সকাল সকাল কেডা ঘুম ভাঙ্গালো। চোখ খুলে দেখি বিথী দাঁড়িয়ে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললাম,"ওই তুমি আমার রুমে কেন? আম্মু দেখলে কি মনে করবে? যাও বলছি।"


---আরে পাগল শ্বাশুড়ি আম্মু আমাকেই এখানে পাঠিয়েছে আপনাকে ঘুম থেকে তোলার জন্য।


---ওই ফাজিল মেয়ে তুমি আমার আম্মু কে শ্বাশুড়ি বলছো ক্যান? লজ্জা করে না এসব বলতে?


---উনি তো কয়েকদিন পর আমার শ্বাশুড়ি হবে। তাই আগে থেকে বলার অভ্যাস করছি। আপনি এতো রাগ করছেন কেন?


---কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলছো? তোমার মাথা ঠিক আছে তো?


---আমার মাথা ঠিকই আছে। শোনেন বিকেলে আপনার সাথে ঘুরতে যাবো। রেডি হয়ে থাকবেন কেমন। আর হ্যাঁ আপনার মনে নিশ্চয়ই অনেক প্রশ্ন জাগছে। আমি এসবের উওর দিতে পারবো না। সব কিছু আমার শ্বাশুড়ি আম্মু বলবে। আমি এখন যাই। 


গতকাল তিথী বলল বিথীকে বিয়ে করার কথা। কিন্তু এ কথা আমার আম্মু এতো তারাতাড়ি জেনে রাজি হয়ে গেল কিভাবে?


---আম্মু ও আম্মু।


---হারামজাদা ষাঁড়ের মতো ডাকছিস ক্যান?


---বাসায় এসব কি চলছে আমি তো কিছুই বুঝছি না।


---তোর কিছু বোঝা লাগবে না। খালি এটাই মনে রাখ আর সাতদিন পর তোর আর বিথীর বিয়ে।


---আম্মু আমি এ বিয়ে মানি না।


---থাপ্পড় দিয়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিবো। মায়ের কথায় অবাধ্য হচ্ছিস। জানিস আমার কথা না মানলে তোর কি অবস্থা করবো একবার ভাবছিস?


---এমনিতেই আম্মু কে ভয় পাই। আবার ভয় দেখাচ্ছে। কি যে করি। কিছু না বলে ড্রইং রুমে গিয়ে টিভি দেখতে লাগলাম।


একটু পর নাস্তা করে ভার্সিটি গেলাম। হারামি আকাশ আজকে আসে নি। ক্লাস শেষ করে বাসায় আসতে লাগলাম।এমন সময় রিকশার সামনে একটা কার এসে থামলো।


কার থেকে বিথীর আব্বু বের হয়ে আসলো। উনি আমাকে বলল,"অনিক রিকশা থেকে নেমে কারে এসে বসো।"


যদি না বসি তাহলে অভদ্র মনে করবে। তাই রিকশা ভাড়া দিয়ে কারে বসলাম।


---বাবা অনিক তোমাকে না জানিয়ে তোমার আব্বু আম্মুর সাথে মিলে তোমার আর বিথীর বিয়ে ঠিক করেছি। আসলে আমার মেয়েটা অনেক জেদি। যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি।দুদিন ধরে বায়না করছে ওর সাথে তোমাকে বিয়ে না দিলে সত্যি সত্যি সুইসাইড করবে। এজন্য আমি অপারগ হয়ে এই কাজ করেছি। আমি কোনো ভুল করলে মাফ করে দাও।


আমার লাইফের বারোটা বাজিয়ে এখন মাফ চাইতে আসছে।মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে আবার ওসব বলে তিথীর কথা মনে করিয়ে দিলো। ধুর ভাল্লাগে না।


---কি হলো বাবা কথা বলছো না কেন?


---আসলে আঙ্কেল একটা কথা ছিল। বড় মেয়েকে রেখে ছোট মেয়ের বিয়ে দিলে লোকে কি বলবে বলেন তো?


---বাবা ওই ছোট মেয়ের টেনশনে সব ভুলে গেছিলাম। তুমি আমাকে ভালো কথা মনে করিয়ে দিছো। আমি আমার বন্ধু র ছেলের সাথে তিথী র বিয়ে অনেক আগে থেকে ঠিক করে রেখেছি। শুধু দিন ঠিক করা হয়নি। আমি এখনি কথা বলে তিথী আর রাহাতের বিয়ের দিন ঠিক করছি।


এই যা কি রেখে কি বলে ফেললাম। এখন আমার আগে তিথীকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তারমানে কি আমি তিথীকে পাবো না?


আঙ্কেল উনার বন্ধুর সাথে কথা বলে তিথী আর রাহাতের বিয়ের দিন ধার্য করলো। আঙ্কেল বলল,"আমার দুই মেয়ে কে একই দিনে বিয়ে দিবো। বাবা তুমি আমাকে একটা বড় ভুল করা থেকে বাঁচালে। "


একটু পর বাসার সামনে চলে আসলাম। আমাকে নামিয়ে দিয়ে আঙ্কেল বলল,"আমার একটু অফিসে যেতে হবে। তুমি বাসায় যাও।"


ধুর কি থেকে কি করে ফেললাম! আম্মু এসে বলল,"কি বাবা বিয়ের আগেই তোর শ্বশুর তো দেখছি ভালোই জামাই খাতির করছে।"


---মা মজা করো না তো। আমার ভাল্লাগছে না। একটু আমাকে একা থাকতে দাও।


আম্মু চলে গেল। আমি শুয়ে পড়লাম। বিকেলে রেডি হয়ে বিথীর সাথে ঘুরতে বের হলাম।


তাকিয়ে দেখি তিথী দোতলায় থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা শুকনো দেখাচ্ছে। আর সাতদিন পর তিথী অন্য কারো হয়ে যাবে। ভাবতেই বুকের বা পাশে কেমন করে উঠলো।


এদিকে বিথী আমার হাত ধরে বলল,"এইযে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলেন।"


আমি বিথীর সাথে বের হয়ে রাস্তায় দাড়ালাম।


এরপর একটা রিকশা ভাড়া করলাম।


বিথীকে বললাম,"কোথায় যাবে?"


---নদীর পাড়ে চলো।


রিকশাওয়ালা মামাকে বললাম,"মামা নদীর পাড়ে চলো।


বিথী আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল," এই দেখেন তো আমাকে কেমন লাগছে?"


---এতোক্ষণ ভালো করে বিথীকে দেখি নি। এবার পূর্ণ দৃষ্টি তে তাকালাম। কালো শাড়ি পড়েছে। ওর কানের পাাশের চুলগুলো বাতাসে অগোছালো হয়ে যাচ্ছে। আর বিথী ওগুলো বার বার কানের পাশে গুঁজে দিচ্ছে। এমনিতেই বিথী অনেক সুন্দরী। তারপর মুখে হল্কা মেকাপ করছে। আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। যেকোনো ছেলে এমন রূপে প্রেমে পড়তে বাধ্য। কিন্তু আমার মনে কোনো ফিলিংস আসছে না। বারবার তিথীর কথা মনে পড়ছে।


---কি হলো বললেন না যে?


---ও হ্যাঁ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।


---সত্যি! ((খুশি হয়ে বলল)


---হ্যাঁ সত্যি। 


বিথী আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। আমি কিছু বললাম না। কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে।


---একটু পর নদীর পাড়ে চলে আসলাম।


এসেই বিথী বায়না ধরলো ফুচকা খাবে। তো বিথীকে বললাম,"চলো।"


---না। আপনি নিয়ে আসেন। আর হ্যাঁ অনেক ঝাল দিয়ে বানিয়ে আনবেন।


বিথীর কথামতো অনেক ঝাল দিয়ে ফুচকা নিয়ে আসলাম।


---এখন এগুলো কোথায় বসে খাবে শুনি? (আমি)


---সামনে একটা বটগাছ আছে। ওখানে বসার যায়গা আছে।ওখানে বসে খাবো। এখন চলেন।"


বুঝলাম না ওখানে না খেয়ে এখানে খাওয়ার মানে কি? মেয়ে মানুষের মনে কখন কি হয় আল্লাহ ভালো জানে।


বিথী বসে ফুচকা খাচ্ছে আর আমি দেখছি। এই মাইয়া এতো ফুচকা কিভাবে খায়! বিথী আমাকে বলল,"এই হা করেন।"


---আমি খাবো না। তুমি খাও।


---নেন বলছি।


আমি হা করলাম। আমনি বিথী আমাকে একটা ফুচকা খাইয়ে দিলো। ও মাগো একি ঝাল! ঝালে আমার ঠোঁট পুড়ে গেল মনে হয়। আর এই মাইয়া এতো ঝাল কিভাবে খাচ্ছে। 


আমি ঝাল ঝাল বলে চিল্লাতে লাগলাম। আর বিথীকে বললাম,"ওই পানি খাওয়াও।"


---আমি এখানে পানি পাবো কোথায়?


---জানি না। আমার ঠোঁট পুড়ে গেল। কিছু একটা করো।


---কিছু করলে আবার বকবেন না তো।


---না। উফফফ মরে গেলাম ঝালে। এতো ঝাল কিভাবে খেলে?


বিথী কোনো কথা না বলে আমার ঠোঁটে কিস করা শুরু করলো। দুই মিনিট পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,"এখন ঝাল কমেছে আপনার?"


---এই তাই তো আমার ঝাল নেই। আজব বেপার ঝাল গেল কোথায়? (আর কিস করায় এতো মজা লাগে হিহি। কিন্তু বিথীকে বুঝতে দিলাম না।)


---মিষ্টির কাছে ঝাল পারে না। তাই আপনাকে মিষ্টি খাওয়াইছি। এজন্য ঝাল চলে গেছে।


---শয়তান লুচু মাইয়া আমাকে কিস করার জন্য প্ল্যান করে ফুচকায় বেশি ঝাল দিয়ে বানিয়ে আনতে বলছো।


---হিহিহি, এতোক্ষণে আপনি বুঝছেন।


---এসব কিন্তু ঠিক করছো না।


---আমার কি দোষ! আপনার অতো সুন্দর ঠোঁটে কিস করার লোভ সামলাতে পারি নি।


---বিয়ের আগে এসব আর করবে না।


---কেন? অন্য কারো থেকে নিবেন নাকি?


---সেটা তোমার না ভাবলেও চলবে। এখন চলো এখান থেকে।


---দুজন হাঁটতে লাগলাম। বিথী আমার হাত ধরে আছে।একেবারে খারাপ লাগছে না। তারপরও মনে হচ্ছে বিথীর যায়গায় তিথী হলে আরও ভালো লাগতো।


বিথী আবার আবদার করলো আইসক্রিম খাবে। তো আইসক্রিম ওয়ালাকে বললাম দুটা আইসক্রিম দিতে।


বিথী বলল," দুটা না। একটা নিলে হবে।"


এই মাইয়া এখন নিজে নিজে আইসক্রিম খাবে। আর আমাকে দিবে না। এটা মানতে পারছি না। কিন্তু ওর সামনে কিছু বললাম না।


একটা আইসক্রিম নিয়ে ওকে দিলাম। বিথী আইসক্রিম এর এক কোনায় এক কামড় দিয়ে আমার মুখের সামনে ধরে বলল,"খান একটু।"


---তোমার টা কেন খাবো?


---একসাথে খেলে ভালোবাসা বাড়ে। নেন কথা না বাড়িয়ে আইসক্রিম খান।"


জানি না খাওয়া পর্যন্ত আমাকে ছাড়বে না। তাই বাধ্য হয়ে ওর সাথে আইসক্রিম ভাগাভাগি করে খেলাম। এতোদিন যত আইসক্রিম খেয়েছি তারচেয়ে আজকে খেয়ে বেশি মজা পেলাম।


হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এসেছি। তাই বিথীকে বললাম,"চলো অনেক ঘুড়ছি। এখন বাসায় চলো।"


---বিথী বলল,"সামনে একটা সুন্দর জায়গা আছে। ওখানে চলেন না প্লিজ।"


বিথীর আবদার ফেলতে পারলাম না। যেতে লাগলাম ওর সাথে। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।


আচমকা বিথী......



চলবে.......।

No comments

Powered by Blogger.