গল্প | বাড়িওয়ালীর মেয়ে - পর্ব-১৬ | Bariwalir Meye - Part-16

লেখা | অনিক হাসান


১৫ তম পর্বের পর থেকে.......


---বিথী বলল,"সামনে একটা সুন্দর জায়গা আছে। ওখানে চলেন না প্লিজ।"


বিথীর আবদার ফেলতে পারলাম না। যেতে লাগলাম ওর সাথে। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।


আচমকা বিথী উফফ মাগো বলে বসে পড়লো।


---ওই এখানে বসলে কেন?


---দেখতে পাচ্ছেন না আমি পায়ে ব্যাথা পাইছি। উফফ কি ব্যাথা! আমি এখন কিভাবে যাবো? উহুহুহু।


---সামান্য ব্যাথা পেলে এভাবে কেউ কান্না করে নাকি?


---ব্যাথা আমার লেগেছে, আমি বুঝতেছি। আপনি তো আর আমার ব্যাথা বুঝবেন না।


বিথী ওঠে দাড়াতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। কি বিপদে পড়লাম। একে এখন নেই কিভাবে? রিকশাও পাওয়া যাবে না। রাস্তা থেকে ১০ মিনিটের মতো হেঁটে আসছি।


---এখন আমি এখান থেকে যাবো কিভাবে?((বিথী))


---চোখ কোথায় রেখে হাঁটতেছিলে হু?((আমি))


---চোখ চোখের যায়গায় ছিল। কিন্তু রাস্তা দেখা বাদ দিয়ে অন্য কিছু দেখছিলাম। ((তোমাকে দেখছিলাম কিন্তু তুমি তো আমাকে বুঝতেই চাও না))


---বিরবির করে কি বলছো?


--কই কিছু না তো।


আমি বিথীর হাত ধরে বললাম,"এবার উঠার চেষ্টা করো।"


বিথী আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,"উফফফ অনেক ব্যাথা করছে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। কিছু একটা করুন।"


---আজব আমি কি করবো?


---কি করবেন মানে আমাকে কোলে করে নিয়ে চলেন।


--- আমি কেন কোলে নিবো?


---আমি আপনার সাথে এসেছি। সো আমার কিছু হলে আপনি দেখবেন তাই না।


ধুর যাকে ভালোবাসি তাকে কোলে নিতে পারলাম না। আর একে কোলে নিতে হবে। ভাবা যায় এসব?


---ওই কোলে নিবেন নাকি আমি চেচামেচি করে লোকজন জড়ো করবো?


মাইয়া বলে কি? বলা যায় না। সত্যি সত্যি লোকজন জড়ো করতে পারে। এরচেয়ে কোলে করে নেওয়াই ভালো। তাই আর কিছু না ভেবে বিথীকে কোলে নিলাম।


বিথী আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।


---ওই আমার দিকে এভাবে বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছো ক্যান? লজ্জা করে না তোমার?


--- বরের দিকে তাকাবো না তো কার দিকে তাকাবো?


----ওই আমি তোমার এখনও বর হইনি।


---হননি তো কি হইছে। কয়েকদিন পর তো হবেন।


---চুপচাপ থাকো। নাহলে এখানে ফেলে চলে যাবো।


বিথী চুপ করে রইলো। এভাবে তিথীকে কোলে না নিয়ে ওর শয়তান ছোট বোন কে কোলে নিতে হচ্ছে। আমার কপালে তিথী কি আছে? নাকি এই আপদটা ই গলায় এভাবে ঝুলে থাকবে?


একটু পর রাস্তায় চলে আসলাম। এরপরে একটা রিকশা ঠিক করে বাসার দিকে আসতে লাগলাম। সারা রাস্তা বিথীর প্যাচালে কান ঝালা পোড়া হয়ে গেছে। যদি এর সাথে বিয়ে হয় তাহলে আমার জীবনটা নরক বানিয়ে দিবে।


যাক বাঁচা গেল। অবশেষে বাসায় চলে আসলাম।


বাসায় আসতেই আম্মু আব্বু বলল,"কালকে তোর বিয়ের শপিং করতে হবে।"


---কি আজব, বিয়ের দিন ঠিক হবার পরই শপিং। আমি এসব শপিং করতে পারবো না।


---কি বললি! আরেকবার বল তো।((ধমক দিয়ে আব্বু বলল))


ছোটবেলায় আব্বুর কথা একবার শুনছিলাম না বলে লাঠি নিয়ে সে কি দৌড়ানি দিছিলো। এখন যদি আবার অমন করে মান সম্মানের ছিটেফোঁটা থাকবে না। কি কাজ আছে শপিং করাই ভালো। এজন্য আব্বু কে বললাম,"কিছু না আব্বু, কালই শপিং করে আনবো।"


---এইতো গুড বয়।


রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।


ওদিকে তিথীর আব্বু তিথীকে ডাকলো।


তিথীঃ আব্বু কিছু বলবে?


তিথীর আব্বুঃ আমি ঠিক করেছি বিথীর বিয়ের দিন তোর ও বিয়ে দিবো।


তিথী মনে মনে ভাবলো আমার আবার কার সাথে বিয়ে দিবে?এমনিতেই অনিককে হারাচ্ছি আবার আরেকজনের সাথে বিয়ে দিবে।


----আমার বন্ধু রফিক কে তো চিনিস। ওর ছেলে রাফাতের সাথে তোর বিয়ে।


তিথীঃ আব্বু আমি এ বিয়ে করতে পারবো না।


---কেন? ছেলের নিজের বিজনেস আছে। দেখতে সুন্দর। তোকে সুখেই রাখবে। এর চেয়ে কি চাই বল?


তিথীঃ আব্বু আমি এখন বিয়ে করতে প্রস্তুত না।


---বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। আর আমি কথা দিয়েছি আমার কথার একটা মূল্য আছে।


---তাই বলে সেটার বলি আমাকে কেন হতে হবে?


---তুই ছাড়া আর কোনো মেয়ে আছে বল?


---আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না। আর যদি জোর করো তাহলে আমাকে আর পাবে না বলে দিলাম।


তিথীর আব্বু চিন্তায় পরে গেল। এখন কি করে বন্ধু কে বলবে এই কথা? আবার বড় মেয়ের বিয়ে আগে না হয়ে ছোট টার আগে হলে লোকজন নানান কথা বলবে। হুট করে এভাবে বিয়ে ঠিক করা টা ভুল হইছে। তবে এখনও সবাইকে দাওয়াত করা হয়নি। আপাতত বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে দিলেই ভালো হবে। কিন্তু অনিকের আব্বু আম্মু কি মেনে নিবে? বুঝিয়ে বললে অবশ্যই মানবে। দেরি করলে আবার দাওয়াত করে ফেলবে। এখনি কথা বলা উচিত।


আম্মুঃ রাতে আবার কে কলিং বেল বাজায়? বলে দড়জা খুললো। দেখে বিথীর আব্বু দাঁড়িয়ে। আরে বেয়াই সাহেব দাঁড়িয়ে কেন ভেতরে আসুন।


তিথীর আব্বু ভেতরে এসে সোফায় বসলো।


তিথীর আব্বুঃ অনিকের আব্বু কি বাসায় আছে? আসলে কিছু কথা আছে।


আম্মুঃ আছে। একটু দেরী করেন। আমি ডেকে আনছি।


আম্মু একটু পর আব্বু কে সঙ্গে করে আনলো।


তিথীর আব্বুঃ আসলে কথাটা কি করে বলি?


আব্বুঃ এতো ভাবাভাবির কি আছে? বলে ফেলুন।


তিথীর আব্বু সবকিছু খুলে বলল। এরপর বলল,"এখন আপাতত অনিক আর বিথীর বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে দিতে চাচ্ছি যদি আপনাদের কোনো সমস্যা না থাকে।


আব্বু একটু ভাবলো। ভেবে বলল,"এখন এসে ভালোই করছেন। নাহলে কালকেই আমার সব আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দিতাম।"


তিথীর আব্বুঃ তাহলে বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই হচ্ছে।


আব্বুঃ আচ্ছা তাই হবে।


তিথীর আব্বুঃ ধন্যবাদ ভাইজান আমাকে অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করলেন।


আব্বুঃ আপনার সমস্যা টা আমি বুঝছি। এজন্য আমার যা করা দরকার তাই করলাম। এজন্য এতো ধন্যবাদ দিতে হবে না।


তিথীর আব্বুঃ আচ্ছা ভাইজান তাহলে আমি আসি।


সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় বিথী কল করলো।


---হ্যালো..(আমি)


---এই মিস্টার আপনার ঘুম ভাঙছে? ((বিথী))


---হ্যাঁ, কিছু বলবা?


---হুমমম, বলার জন্য তো কল করছি।


---বলো কি বলবা?


---আজকে তো বিয়ের শপিং এ যেতে হবে।


---এটা তো আমিও জানি। এটা ফোন করে বলার কি দরকার?


---এভাবে কথা বলছেন কেন?


---তো কিভাবে বলবো? ধুর সকাল সকাল মুড খারাপ করে দিলো বলে কল কেটে দিলাম।


বিথী মনে মনে বলল,"মিস্টার অনিক এখন যতোই রাগ দেখাও বিয়ের পর আমার কথাই শুনতে হবে।"


তিথীঃ ওই বিরবির করে কি বলিস?


বিথীঃ আপু ওসব তুমি বুঝবে না।


তিথীঃ কি যে বুঝিস সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে।


বিথীঃ আপু ওসব কথা বাদ দাও। আজকে আমার বিয়ের শপিং করতে হবে। তুমি কিন্তু আমার সাথে অবশ্যই যাবে।


তিথীঃ অনিকের সামনে গেলে নিজের মনকে আটকাতে পারি না। এজন্য ওর থেকে দূরে থাকতে চাই। ওকে ভুলতে চাই। শুধু তোর জন্য। কিন্তু এগুলো কখনও তুই জানতে পারবি না।((মনে মনে বলল))


বিথীঃ কি হলো আপু বলো যাবে?


তিথীঃ না রে। আমার একটা কাজ আছে। এজন্য যেতে পারবো না। তুই তোর কোনো বান্ধবী কে সাথে করে নিয়ে যা।


বিথীঃ তুমি আমার সাথে না গেলে আমিও শপিং এ যাবো না বললাম।


তিথীঃ লক্ষী বোন আমার রাগ করে না। বোঝার চেষ্টা কর।আমার কাজ না থাকলে অবশ্যই যেতাম।


বিথীঃ আমার চেয়ে তোমার কাজ বেশী জরুরি হয়ে গেল?থাকো তোমার কাজ নিয়ে। আমি ও যাবো না শপিং এ। বলে চলে গেল।


তিথী ভাবতে লাগল এখন কি করি। আমি না গেলে ও সত্যি সত্যি শপিং এ যাবে না। অনেকক্ষণ ভেবে কোনো উপায় পেল না। শেষমেশ ভাবলো নাহয় যাবে শপিং এ। কিন্তু অনিকের থেকে দূরে থাকবে।


সকাল দশটা। আম্মু আমাকে বলল,"রেডি হতে এতো সময় লাগে নাকি?"


---আম্মু আর দশ মিনিট ওয়েট করো। আসছি।


তারাতাড়ি রেডি হয়ে বাহিরে রুমের বাহিরে আসলাম।


আকাশকে কল করছিলাম আমার সাথে যাওয়ায় জন্য। কিন্তু শালা এখনও আসে নি।


একটু পর আকাশ চলে আসলো।


শপিং এ যাবো আমি বিথী আকাশ আর তিথী।


শপিং এ যসওয়ার জন্য বিথীর আব্বু কার রেখে গেছে। আমি আর আকাশ সামনে বসলাম। আকাশ ড্রাইভিং সিটে আমি পাশের টায়। আর তিথী বিথী পেছনে। তিথী সাথে আসাতে আনইজি ফিল করতে লাগলাম।


কারের মাঝখানের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে তিথীকে দেখলাম।ওর চোখ জোড়া ফোলা ফোলা লাগছে। মনে হয় রাতে অনেক কান্না করছে। আমার বিয়ের দিনই ওর ও বিয়ে হবে। বিয়ের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই তিথীকে দূরে হারিয়ে ফেলছি।এদিকে বিথীও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমার তো মন তো তিথীকে চায়। তিথীকে ছাড়া কিছু বোঝে না।


কার এসে থামলো সিটি শপিংমলের সামনে। এক এক করে সবাই কার থেকে নেমে শপিংমলের ভিতরে গেলাম।


আকাশঃ আগে কনের শপিং করি। পরে বরের শপিং করা যাবে।


এক দোকানে ঢুকে কনের শাড়ি দেখতে লাগল। বিথী একের পর একটা শাড়ি দেখে যাচ্ছে। অনেক শাড়ি দেখে একটা লাল বেনারসি পছন্দ করলো। শাড়িটা তিথীকে দেখিয়ে বলল, "আপু দেখ শাড়িটায় আমাকে সুন্দর মানাবে না?


তিথী মাথা নাড়ালো।


আমি তিথীর দিকে তাকালাম। ওর চোখ ছলছল করছে। মনে হচ্ছে এখনি কান্না শুরু করবে।


তিথীর এমন অবস্থা দেখে আমার বুকটা কেঁপে উঠলো।মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি তো ওকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসি। কিন্তু আমার ভাগ্যে মনে হয় তিথী নাই।


বিথীর শপিং শেষ হলে আমার জন্য শপিং করি।


শপিং শেষ করতে করতে ২ টা বেজে গেল। আমি বললাম, "চলো সবাই, দুপুরে কিছু খাওয়া যাক।"


চারজনে একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম। তিথী আমার সামনের চেয়ারে বসেছে আর বিথী পাশের চেয়ারে। তিথী বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। ওর চাহনিতে মনে হচ্ছে আমাকে অনেক কিছু বলতে চায়। কিন্তু এখানে কোনো কথা বলা সম্ভব না।


কারণ বিথী জানে তিথী আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু এটা জানে না আমি কাকে ভালোবাসি। আমি আর ভাবতে পারছি না। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠলো।


চলবে.......।

No comments

Powered by Blogger.