গল্প| বাড়িওয়ালীর মেয়ে - পর্ব-১৩ | Bariwalir Meye - Part-13

লেখা | অনিক হাসান


১২তম পর্বের পর থেকে.......


---ওই হাসবে না। বিষয়টা আমার কাছে সিরিয়াস মনে হয়েছে তাই তোমাকে বলার জন্য ডেকেছি।


---কি কথা বলো।


---বিথীর ব্যাবহার আমার কাছে সুবিধার মনে হচ্ছে না। ওর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।

 

---দুই বোন ই একে অপরকে সন্দেহ করছে। যদি জানতে পারে দু'জন ই আমাকে প্রপোজ করছে তাহলে কি হবে? 


এমন চলতে থাকলে আরও সমস্যা বেশি হবে। এরচেয়ে দুজনকেই বলে দেওয়া ঠিক হবে। তাই সিন্ধান্ত নিলাম তিথী বিথীকে একসাথে করে এসবের সমাধান করতে হবে।


এজন্য তিথীকে বললাম,"তিথী বিকেলে ছাদে আসবে।গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। আর হ্যাঁ বিথীকে সাথে করে আনবে।"


---গুরুত্বপূর্ণ কথা আমার সাথে, বিথীকে আনার মানে বুঝলাম না।


---এখন এসব বলা যাবে না। বিকেলেই বুঝতে পারবে। 


---আচ্ছা। এখন কি বাসায় যাবে?


---হুম, চলো একসাথে যাই।


এরপর দুজনে রিকশা করে বাসায় চলে আসি।


গোসল করে খেয়ে ফোনে পাবজি গেইম খেলছি। এমন সময় বিথী এসে ফোনটা কেড়ে নিলো।


---ওই ফোন নিছো ক্যান? আমার গেম খেলা প্রায় শেষের দিকে। দাও তারাতাড়ি। 


---আপনাকে আপুর সাথে মিশতে মানা করছি। তারপরও কেন ওই ডাইনির সাথে রিকশায় করে বাসায় আসলেন?


---তোমার মাথা ঠিক আছে তো?


---আমার মাথা ঠিক ই আছে। আপনার সাথে অন্য কোনো মেয়ে সহ্য করতে পারি না।


---তিথী তোমার আপন বড় বোন।


---আমি ভালোবাসায় কোনো ভাগ দিতে পারবো না।


---এসব কথা বাদ দাও। আর শোনো তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। তোমার আপুর সাথে বিকেলে ছাদে যাইবা কেমন।


---আমার সাথে কি কথা যার জন্য আপুকেও থাকতে হবে?


---সেটা বলার সময়ই বুঝবে। আর এখন আমার ফোন দিয়ে যাও।


---বিথী ফোনটা দিয়ে দিলো।


বিথী যেতে যেতে ভাবতে লাগলো কি এমন কথা বলবে? হতে পারে আপুর সামনে আমাকে প্রপোজ করবে। কি়ংবা আপুকে যদি প্রপোজ করে তাহলে আমার কি হবে। আমি অনিককে ছাড়া কাউকে কল্পনা করতে পারি না।


বিথী রুমে ঢুকে দেখে তিথী ওর বিছানার শুয়ে ফোন টিপছে।


তিথীঃ এতোক্ষণ কই ছিলি?


বিথী মনে মনে ভাবলো বলা যাবে না অনিকের কাছে গেছিলাম। এজন্য বলল,"ছাদে গেছিলাম।"


তিথীঃ দুপুর বেলা ছাদে কেন?


বিথীঃ এমনিতেই। কিছু কি বলবে আপু?


তিথীঃ হুমমম, বিকেলে আমার সাথে ছাদে যাবি। অনিক কি যেন বলবে আমাকে।


তিথীর কথা শুনে বিথী চমকে ওঠে। অনিক আমাকে একটু আগে বলল বিকেলে ছাঁদে যেতে। এরমানে আমাকে বলার আগেই আপুকে বলছে।


অনিক আমাকে বাদ দিয়ে আপুকে ভালোবাসে না তো? না অনিক আমার ছাড়া আর কারো হবে না।


তিথীঃ ওই কি ভাবছিস?


বিথীঃ কিছু না আপু। আচ্ছা তোমার সাথে বিকেলে ছাদে যাবো কেমন। এখন যাও আমি ঘুমাবো।


তিথী উঠে চলে যায়।


বিকেলে আমি ছাঁদে যাই। দেখি তিথী বিথী দাঁড়িয়ে আছে।


আমাকে দেখে বিথী বলল," বলেন কি জন্য আমাদের দু'বোন কে একসাথে ডাকা?"


আমিঃ আসলে কিভাবে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছি না।


তিথীঃ এতো ভাবাভাবির কি আছে! যা বলবে সোজা বলে ফেলো।


আমিঃ জানিনা আমার কথাগুলো তোমারা দু'বোন কিভাবে নিবে? কিন্তু তারপরও কথা গুলো আমাকে বলতেই হবে।


তিথী ভাবতে লাগলো, "অনিক মনে হয় আমাকে ভালোবাসে।এজন্য বিথীর সামনে প্রপোজ করবে।"


বিথী ভাবছে অনিক আমার না হলে আমি বাঁচবো না।


আমিঃ দেখো তোমাদের দুজনকে একসাথে ডাকার কারণ হলো তোমরা দুই বোনই আমাকে ভালোবাসো। এমনকি আমাকে প্রপোজ ও করছো। এখন বলো আমি কাকে একসেপ্ট করবো?


আমার কথা শুনে ওরা দু'বোন একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো মনে মনে একে অপরকে গালি দিচ্ছে। 


তিথীঃ ওই বিথী তুই ছোটবেলা থেকে আমার সব পছন্দের জিনিসে ভাগ বসিয়েছিস। এখন আমি যাকে ভালোবাসি তাকেই পেলি ভালোবাসতে। দেশে আর কোনো ছেলে ছিল না মনে হয়।


বিথীঃ আমি কি জানি তুমি উনাকে ভালোবাসো। জানলে কি আর এই ভুল করতাম! ((কান্না ভেজা কন্ঠে বলল))


তিথীঃ যা করেছিস ভালো করিস নি। এখন আমি তোর বড় হয়ে বলছি অনিক রে ভুলে যা।


বিথীঃ আমাকে ভুলে যেতে বলছো কেন? তুমি নিজে পারলে ভুলে দেখো। আর আমি আমার ভালোবাসা না পেলে সুইসাইড করবো বলে দিলাম। বলে বিথী কান্না করতে করতে চলে গেল।


তিথীঃ বিথী নাহয় বাচ্চা মেয়ে ভুল করছে। তুমি ওকে বোঝাতে পারতে তো।


আমিঃ আমার চেয়ে তুমি বিথীকে বেশি চিনো। ও যেমন জেদি তেমন একরোখা। আর তুমি ওকে বাচ্চা বলছো। ও মোটেও বাচ্চা মেয়ে না। যথেষ্ট বড় হয়েছে। আমি ওকে অনেকবার না করেছি কিন্তু আমার কথা না শুনলে কি করবো তুমি বলো?


তিথী কিছু বলল না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখ দুটো ছলছল করছে। মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে ফেলবে। এমনিতে আমার তিথীকে ভালো লাগে। ভাবছিলাম তিথীকে হ্যাঁ বলবো।কিন্তু বিথীর জন্য কিছুই হলো না।


তিথী বলল," আমাকে ভাবতে দাও কি করতে হবে। এখন আমি গেলাম।"


বিথী চলে গেল।


আমি ছাঁদে একা একা দাঁড়িয়ে আছি। আর ভাবছি দুই বোন কত হাসি খুশি ছিল। আমার জন্য ওদের মাঝে ঝগড়া হলো।এসবের জন্য হয়তো আমি দায়ী। 


হঠাৎ পকেটের ফোনটা কাঁপা-কাঁপি শুরু করলো। দেখি মিমের ভাই কল করছে।


আমি সালাম দিয়ে জিজ্ঞেসা করলাম,"কেমন আছেন?"


---আলহামদুলিল্লাহ, তোমার কি অবস্থা? (মিমের ভাই)


---এইতো আলহামদুলিল্লাহ আছি ভালোই। ((কষ্ট টা চাপা রেখে বললাম))


---আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ফোন দিছি।


---কি কথা ভাইয়া?


---মিম যে ছেলের সাথে পালিয়েছে ওর সাথেই বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী শুক্রবার বিয়ে। তোমার দাওয়াত রইলো।


---ভাইয়া এসব কখন হলো?


---মিমের থেকে ছেলের বাসার ঠিকানা নিয়ে ছেলের ফ্যামিলির সাথে কথা বলছি। পরে দুই পরিবারের সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।


---ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি বিয়েতে অবশ্যই আসবো।


---আচ্ছা তাহলে রাখি। বলে মিমের ভাই কল কেটে দিলো।


রাফির জন্য কতকিছু করলাম আর শালা আমাকে কিছুই বলে নাই। ওর উপর হেব্বি রাগ হচ্ছে। 


আকাশরে ফোন করলাম।


আমিঃ রাফির বিয়ের দাওয়াত পাইছিস?


আকাশঃ রাফি তো হানিমুনে কক্সবাজার, ওর বিয়ের দাওয়াত পামু ক্যান?


আমি আকাশকে সব কিছু খুলে বললাম।


আকাশঃ আরে কিছু মনে করিস না। ও হয়তো কাজের চাপে ভুলে গেছে। দেখ ঠিকই জানাবে।


---আচ্ছা আমার ভালো লাগছে না। রাখলাম বলে কেটে দিলাম।


দড়িয়ে থাকতে থাকতে  রাত হয়ে গেছে। ছাদ থেকে নেমে আসলাম।


মাঃ এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?


আমিঃ ছাদে। আচ্ছা মা আমি রুমে গেলাম।


রুমে এসেও ভালো লাগছে না। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। 


পড়ার টেবিলেও মন বসছে না। মা এসে বলল,"তোকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করছিস নাকি?"


---না মা। এমনিতেই ভালো লাগছে না।


---আচ্ছা এক কাজ কর। তুই শুয়ে পড়। আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।


মা কিভাবে বুঝলো আমি চিন্তা করছি? আসলে মা অতুলনীয়। মায়ের ভালোবাসা অনেক সন্তান ই বুঝতে পারে না। হয়তো ওরা মনে করে এতো শাসন না করতেই পারে। কিন্তু ওরা বোঝে না। শাসনের ভেতর ই ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। এটা সবাই বুঝতে পারে না।


মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে কিছুক্ষন পর ঘুমিয়ে পড়ি।


সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটিতে গেলাম। আজকে তিথী ফোন ও দিলো না আবার ভার্সিটিতে দেখলাম না।


দুজনের আবার কি হলো উপরওয়ালা ভালো জানে।



চলবে......।

No comments

Powered by Blogger.