গল্প| বাড়িওয়ালীর মেয়ে - পর্ব-১২ | Bariwalir Meye - Part-12

লেখা |অনিক হাসান


১১তম পর্বের পর থেকে.......


---এই এতো লোকের মাঝে এসব কি করছো?


---লোক কি বলবে? আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার যত্ন নেওয়া আমার অধিকার। 


---কিন্তু আমি তোমাকে ভালেবাসি না।


---ওই চুপ! এখন কোনো কথা বলবে না।


---তিথী পাগলামি করো না।


---এখন আমার সাথে বাসায় চলো। বলে তিথী আমাকে সাথে করে বাসায় নিয়ে আসলো।


গোসল করে শুয়ে ভাবতে লাগলাম এখন আমার কি করা উচিৎ? বিথীকে হ্যাঁ বলবো নাকি তিথীকে?


নাহ! কোনো কিছু ভাবতে পারছি না। কিন্তু এর সমাধান করতেই হবে। নাহলে বড় অঘটন ঘটে যাবে।


আকাশকে ফোন দিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। কিন্তু ও কোনো সাজেশন দিতে পারলো না।


এতো চাপ নেওয়ার চেয়ে কিছুক্ষণ ঘুমানো ভালো।


বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যায় বাসায় আসলাম। 


একটু পর বিথীকে পড়াতে যেতে হবে। কিন্তু ও যে জেদি আর পাগলি, ওরে পড়ানো আমার পক্ষে কঠিন। বাড়িওয়ালির মেয়ে বলে না করে দিতে পারছি না।


কিছুক্ষণ পর বিথীকে পড়াতে গেলাম।


বিথী কে একটা হিসাববিজ্ঞানের অংক করতে দিলাম।কিছুক্ষণ পর বিথী বলল, স্যার আর পারছি না। একটু বুঝিয়ে দেন।


আমি অংক টা করে দিলাম।


বিথী বলল,"স্যার একটা কথা বলি?"


---পড়া বাদে অন্য কোনো কথা বলতে পারবে না।


---স্যার কথাটা পড়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। 


---তা তোমার কি কথা শুনি?


---আসলে স্যার আপনি সকালে বললেন আমার আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো জানলাম না।


---ওটা তো ওদের এমনি বলছি।


---ওদের যাই বলবেন কিন্তু আমাকে ব্যাবহার করলেন কেন?


---তোমাকে কখন ব্যাবহার করলাম?


---ওইযে আপনার সাথে আমার বিয়ে হবে।


---আপু ওটা বলা আমার ভুল হয়েছে। প্লিজ মাফ করে দেন।এমন ভুল জীবনেও করবো না।


---ভুলটা সত্যি করলে কেমন হবে স্যার? ((শয়তানি হাসি দিয়ে বিথী বলল))


--- কি সত্যি হবে রে বিথী? ((তিথী ট্রে তে করে চা আর বিস্কুট নিয়ে এসে বলল))


এই যা তিথী সব শুনে ফেলল না তো। শুনলে তো দুই বোন মারামারি শুরু করতে পারে।


---কি হলো বিথী কিছু বলছিস না কেন?((তিথী))


---তাকিয়ে দেখি তিথীর ধমক খেয়ে বিথীর মুখটা শুকিয়ে গেছে। যাক তিথী সঠিক সময়ে এসেছে। নাহলে বিথী আমার মাথা খেয়ে ফেলতো।


আপাতত পড়িয়ে এখান থেকে কেটে পড়লে বাঁচি। 


এজন্য আমি বললাম,"এভাবে বিথীকে ধমকাচ্ছো কেন? ও একটা বাচ্চা মেয়ে।


---আমার মুখে বাচ্চা শুনে বিথী রেগে গিয়ে বলল,"স্যার আমি মোটেও বাচ্চা না।"


---আমি বিথীকে আরও রাগানোর জন্য বললাম," ও তুমি বাচ্চা না। তুমি তো কচি খুকি।"


আমার কথা শুনে তিথী হাসতে লাগল। আর বিথী রাগ করে উঠে গেল।


তিথী বলল,"চা আর বিস্কুট গুলো খেয়ে নেন।"


আমি চা আর কয়েকটা টা বিস্কুট খেয়ে নিলাম। একটু পর বিথী এসে বলল,"স্যার আপুর সামনে আমাকে বাচ্চা বললেন কেন?"


---তোমাকে বাচ্চার মতো লাগে। তাই বাচ্চা বলছি।


---বিথী অভিমানী কন্ঠে বলল,"স্যার আমি কি সত্যি পিচ্চি? "


---আরে তুমি এতো সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছে কেন? আমি তো মজা করে বলছি।


---স্যার আপনার মুখে আমাকে বাচ্চা শুনতে একদমই ভালো লাগে না।


---বিথীকে ধমক দিয়ে বললাম,"ওই এসব কথা বাদ দিয়ে পড়তে বসো।


আরও কিছুক্ষণ পড়ানোর পর বাসায় চলে আসলাম।


রাতে খেয়ে কিছুক্ষণ ফেসবুক চালিয়ে ঘুমিয়ে পরি।


সকালে উঠলাম মায়ের বকুনি খেয়ে। কিজন্য বকলো তাও বুঝলাম না। ধুর ভাল্লাগে না।


ব্রাশ করে ছাদে গেলাম।দেখি তিথী বীথী দাড়িয়ে আছে। 


আমাকে দেখে দুজনই কেমন লাজুক স্বভাবের হয়ে গেল।


বিথীঃ আপনি এখানে?


আমিঃ কেন আসা বারন নাকি?


বিথীঃ বারণ না। আপানকে ছাদে আসা দেখি না তাই।


একবার সকালে ছাদে আসছিলাম। এজন্য কান ধরে উঠবস করিয়েছিলে। সেটা কি করে ভুলি? (মনে মনে বললাম)


বিথীঃ আচ্ছা যাইহোক গতকালের মতো আজ কিন্তু আপনার সাথে কলেজে যাবো। আমাকে নিয়ে যাইয়েন।


বীথী র কথা শুনে তিথী আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। আমি ওর তাকানো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।


আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে তিথী বলল,"ওই তুই একা কলেজে যেতে পারিস না?


বিথীঃ আপু আমি দেখেছি তুমি অনিক ভাইয়ার সাথে ভার্সিটি তে যাও। আমি তো তোমাকে কিছু বলিনি। তাহলে তুমি আমাকে বারণ করছো কেন?


তিথীঃ ওসব তুই বুঝবি না। অনিক আমার সাথে যাবে।


বিথীঃ আমি আগে বলেছি আমার সাথে সাথে যাবে।


দুই বোনের কান্ড দেখে আমি অবাক। এরা আমাকে নিয়ে কি শুরু করলো? এদেরকে না থামালে কারে কখন কি বলে ফেলবে ঠিক নাই। এজন্য আমি বললাম,"ওই দুজন চুপ করো।"


আমার ধমক শুনে দুজন চুপ হয়ে গেল।


আমিঃ এভাবে দুবোন ঝগড়া করার চেয়ে আমাকে কেটে দুভাগ করে নাও। তাহলে তোমাদের সমস্যা সমাধান হয়ে গেল।


কিছুক্ষণ পর,


 তিথীঃ নিথী,অনিক আজকে তোর সাথে যাবে। কিন্তু কাল আমার সাথে যাবে। শর্তে রাজী?


বিথীঃ আমি রাজি।


আমি আর কোনো কথা না বলে নিচে চলে আসলাম। 


এরপর রেডি হয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য নাস্তা করে রেডি হলাম। বাহিরে বের হয়ে দেখি বিথী দাঁড়িয়ে আছে।


বিথীঃ আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।


আমিঃ এতো অপেক্ষা করে হবে না। এখন চলো।


রিকশা ভাড়া করে যেতে লাগালাম।


কিছুক্ষণ পর বিথী বলল,"তিথী আপুর ব্যাবহার আমার কাছে সুবিধার মনে হচ্ছে না। আপনি আপুর থেকে দূরে দূরে থাকবেন কেমন।


আমি কিছু বললাম না বলে ভাবতে লাগলাম এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে? আমার এখন কি করা উচিৎ? 


বিথী কথা বলেই যাচ্ছে। এই মাইয়া এতো কথা কিভাবে বলে বুঝি না। একটু পর ওর কলেজ পেয়ে গেলাম।


বিথী নেমে গেল। আমি আপাতত হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।


ক্লাস করছি এমন সময় তিথী কল করলো।

ক্লাসে স্যার আছে রিসিভ করলে বকা দিতে পারে এজন্য রিসিভ করলাম না।


ক্লাসের বাহিরে বের হয়ে দেখি তিথী দাঁড়িয়ে আছে।


তিথী আমাকে বলল,"তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।ক্যান্টিনে চলো।


আমিঃ কিন্তু আমার আরও দুটা ক্লাস হবে এখন। ক্লাস শেষ করে কথা বলবো।


তিথী একটু ভেবে বলল,"আচ্ছা  ঠিক আছে।"


ক্লাস শেষ করে তিথীকে কল দিলাম।


---হ্যালো।((আমি))


---কোথায় তুমি?((তিথী))


---তিন তলায় ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের সামনে আছি।ক্যান্টিনে আসো। বলে কল কেটে দিলাম।


ক্যান্টিনে বসে আছি। একটু পর তিথী আসলো।


আমিঃ বলো কি বলবে?


তিথীঃ কথাটা কিভাবে বলবো ভেবে পাচ্ছি না।


---প্রপোজ তো ভালোই করতে পারে। আর এখন কি বলবে সেটা ভেবে পাচ্ছে না। শুনেই হাসি পাচ্ছে।😂😂


---ওই হাসবে না। বিষয়টা আমার কাছে সিরিয়াস মনে হয়েছে তাই তোমাকে বলার জন্য ডেকেছি।


---কি কথা বলো।


---বিথীর ব্যাবহার আমার কাছে সুবিধার মনে হচ্ছে না। ওর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।

 


চলবে...........

No comments

Powered by Blogger.