গল্প | বাড়িওয়ালীর মেয়ে - পর্ব-১০ | Bariwalir Meye - Part-10

Writer | Onik Hasan




৯ম পর্বের পর থেকে.......

আয়নার সামনে গিয়ে দেখি আমার নিচের ঠোঁট টা হাল্কা কেটে গেছে। শয়তান রাক্ষস মাইয়া আমার ঠোঁট টা শেষ করে দিলো।



একটা পিচ্চি মেয়ে জোর করে আমাকে কিস করছে এটা কেউ জানলে আমার মান সম্মান সব চলে যাবে।



এসব ভাবছি এমন সময় আম্মু পেছন থেকে বলল,"বিথীকে পড়ানো বাদ দিয়ে এখানে কি করিস?"



---আআআআসলে আম্মু....



---ওই তুই তোললাচ্ছিস ক্যান?



---আমার দিকে ঘুরে দাড়া দেখি তোর কি হয়েছে।



আমি ঘুরে দাড়ালাম। আম্মু আমার ঠোঁট কাটা দেখে বলল, "অমন করে তোর ঠোঁটে কি কামড় দিছে?



আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় বিথী এসে বলল," আন্টি অনিক ভাইয়াকে বড় পিঁপড়া কামড় দিছে। আমি নিজে দেখেছি।"



কি মিথ্যাবাদী মেয়েরে বাবা! নিজে ঠোঁট কামড়ে এখন বেচারা নির্দোষ পিঁপড়া কে দোষারোপ করছে। কিন্তু আম্মু কে যদি সত্যি টা বলে দেই তাহলে আমার কথা বিশ্বাস করবে না।আপাতত বিথীর কথায় সায় দেওয়াই উচিত মনে করলাম।



 এজন্য আমিও বললাম,"হ্যাঁ আম্মু একটু আগে একটা বড় পিঁপড়া সেই জোরে কামড় দিছে। পিঁপড়াটার একটুও দয়ামায়া নাই। দেখো কামড় দিয়ে  আমার ঠোঁটটা করছে কি?"



----তোদের দুজনের মাথা পাগল হয়ে গেছে। পিপড়া কখনও কামড় দিয়ে রক্ত বের করতে পারে? ((আম্মু)) 



----আম্মু কালো মোটা বড় পিঁপড়া।



---পিঁপড়া কাটুক আর যেই কাটুক রক্ত বের হচ্ছে। আমার সাথে আয়। ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি। 



আমি আর কোনো কথা না বলে আম্মুর সাথে রুমে আসলাম।বিথী ওর মতো দোতলায় চলে গেল। 



ওষুধ লাগিয়ে দিয়ে আম্মু বলল,"ওই হারামজাদা পিচ্চি মাইয়া তোর ঠোঁট কামড়ে রক্ত বের করে দিছে আর তুই কিছুই করতে পারিস নাই 😡😡



---আম্মু তুমি কি সব বলতেছো আমি কিছুই বুঝছি না।



---আমার কাছে নাটক করবি না। আমি তোর ঠোঁট দেখেই বুঝেছি এসব ওই বদমাইশ মাইয়ার কাম।



আম্মুর কথা শুনে মনে হলো আমি লজ্জায় মরে গেলাম। কি বলবো ভেবে না পেয়ে উঠে চলে এলাম।



ধুর মা ও টের পেয়ে গেল। এখন আম্মু যদি আব্বু কে বলে তাহলে আমার কপালে কি হবে আল্লাহ ভলো জানে।



উল্টাপাল্টা চিন্তা করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। রুমে বসে ফোন টিপছি এমন সময় তিথী এসে বলল রেডি হতে।



আমি ভাবলাম কি ড্রেস পড়ে যাওয়া যায়? কিন্তু কোনো ড্রেস সিলেক্ট করতে পারছি না।



আম্মু এসে বলল,"তিথীর সাথে কখন যাবি?"

---এইতো একটু পর। কিন্তু কোন ড্রেস পড়বো বুঝছি না।



---বোকা ছেলে পাঞ্জাবি পড়ে যা।



আম্মু আমার নীল পাঞ্জাবি টা দিয়ে বলল,"এটাতে তোকে সুন্দর মানাবে।"



আমি আর কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নিচে অপেক্ষা করতে লাগলাম।



একটু পর তিথী আসলো। তিথী নীল শাড়ি পড়েছে। নীল শাড়িতে তিথীকে নীল পরীর মতে মনে হচ্ছে। আমিতো কখনও পরী দেখিনি। হয়তো পরীরা এমন ই দেখতে।



আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিথী বলল,"ওই এভাবে না দেখে একটা রিকশা ভাড়া করো।



আমি একটা রিকশা ঠিক করলাম। এরপর দুজনে রিকশায় উঠে বসলাম।



তিথী আমার হাতে একটা উপহার বাক্স ধরিয়ে দিলো।

আমি বললাম,"এটা আমি ধরবো কেন?"



---চুপচাপ ধরে রাখো। আর বেশি কথা বলবে না।



---কি মেয়েরে বাবা। আমাকে শাসন করছে।



কিছুক্ষণ পর তিথীর বান্ধবীর বাসার সামনে চলে আসলাম।রিকশা থেকে নেমে ভাড়া টা আমি দিয়ে দিলাম।



এরপর তিথী আমাকে সঙ্গে করে ওর বান্ধবীর বাসায় নিয়ে গেল।



ভেতরে অনেক মানুষ। তবে সুন্দরী মেয়েদের আনাগোনা একটু বেশি।



তিথী আমাকে বলল,"ওই শোনো, কোনো মেয়ের দিকে তাকাবে না বলে দিলাম। যদি দেখি তাহলে গিয়ে আন্টিকে বলে দিবো।"



---তিথী এটা কিন্তু ঠিক না।


---কি ঠিক, কি ভুল সেটা আমি দেখবো। আপাতত এখন আমার সাথে চলো।



আমি আর কথা না বলে তিথীর সাথে যেতে লাগলাম।



দেখি সামনে একটা মেয়ে অনেক সেজেগুজে সবার সাথে কথা বলছে। আন্দাজ করলাম হয়তো ওটাই তিথীর বান্ধবী। 



আমার আন্দাজ সঠিক হলো।তিথী গিয়ে ওই মেয়েকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে উইশ করে গিফট বাক্স টা দিলো।



দেখলাম তিথীর সব বান্ধবীরা এসেছে। এতো মেয়ের মাঝে নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছে। 



আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। হাটতে হাটতে তিথীর থেকে কিছুটা দূরে এসেছি। এমন সময় একটা মেয়ে এসে বলল,"আপানাকে তো চিনতে পারলাম না?"



---আমি অনিক। আর আপনি?


---আমি রাইসা। নিপার ছোট বোন।


---এই নিপাটা আবার কে? (মনে মনে ভাবতে লাগলাম)

হয়তো নিপাটা তিথীর বান্ধবীর নাম হতে পারে। যার আজকে বার্থডে। তাই আমি আন্দাজে বললাম,"নিপার বার্থডে এ্যারেজমেন্ট টা সুন্দর হয়েছে।



---রাইসা বলল,"হুমমম।



এরপর রাইসার সাথে টুকিটাকি কথা বলতে লাগলাম। একটু পর দেখি তিথী এসে হাজির। 



আমাকে রাইসার সাথে কথা বলতে দেখে ও মনে হচ্ছে রাগে কটমট করছে। কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে আমার হাত ধরে বলল,"চলো তোমাকে আমার বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।"



এই বলে আমাকে নিয়ে ওর একঝাঁক বান্ধবীর সামনে নিয়ে গেল।


এরপর তিথী আমাকে দেখিয়ে ওর বান্ধবিদের কে বলল,"এটা আমার বনফ্রেন্ড। নাম অনিক। তোদের কে একটা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম, কেমন লাগলো সারপ্রাইজটা?"



তিথীর সব বান্ধবী আমাকে আর তিথীকে অভিনন্দন জানাতে লাগলো।



আমি তো পুরা অবাক হয়ে গেছি। কারণ তিথী বলেছিল ওর বান্ধবীরা সবাই আমাকে চেনে। কিন্তু এখানে এসে দেখি ওরা কেউ আমাকে চেনে না। উল্টো তিথী ওদেরকে বলেছে আমি ওর বয়ফ্রেন্ড।



যখন ওর বান্ধবী রা কেউ জানে না তখন এমন টা আমার সাথে না করলেও পারতো। ইচ্ছে হচ্ছে কষে থাপ্পড় দিতে। কিন্তু এতো লোকের সামনে বলে কিছু বললাম না।


রাস্তায় গিয়ে এর শোধ নিবো।


আর কিছুক্ষণ পর কেক কাটা হলো। এরপর খেয়ে ওখান থেকে তিথীর সাথে বেরিয়ে আসলাম।



---তিথী এমন মিথ্যা বলার কি দরকার ছিল?



---আমি কি মিথ্যা বললাম?



---এইযে তোমার বান্ধবীরা কেউ জানতো না তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে। কিন্তু শুধু শুধু আমাকে ওদের সামনে তোমার  বয়ফ্রেন্ড বানালে কেন?



---তিথী চুপ করে আছে। 



আমি আবার বললাম চুপ করে না থেকে আমার কথার জবাব দাও।



---তিথী আমার দিকে ঘুড়ে দাড়ালো। এরপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,"অনিক তোমাকে অনেককিছু বলতে চাই। এখন তুমি আমার সামনে আছো। কিন্তু কিভাবে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছি না।



আমার জীবনে অনেক ছেলে দেখেছি। কিন্তু তোমাকে সবার থেকে আলাদা মনে হয়েছে। যেদিন তুমি আমাকে প্রপোজ করেছিলে সেদিন থেকেই তোমাকে নিয়ে ভাবতে থাকি।



এরপর তোমার সাথে ভার্সিটি যাওয়া আসা, তোমার সাথে দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া করতে করতে কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও জানি না। আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। I Love You Onick.



বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তিথীর প্রপোজ করা দেখে আমি তো পুরা শকড হয়ে গেলাম। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।



গতকাল বিথী, আর আজকে তিথী। এরা দুই বোন মনে হয় পাগল হয়ে গেছে।



---ওই কথা বলছো না না কেন? ((তিথী)



---কি বলবো?



---আমি যা বলছি তার উওর দাও।


---আমার ভাবতে হবে।



---এতো ভাবাভাবির কি আছে?


---তুমি এসব বুঝবে না।



----ওই মাঝ রাস্তায় কি এভাবে দাড়িয়ে থাকবো নাকি বাসায় যাবে?



আমি আর কথা না বাড়িয়ে একটা রিকশা ভাড়া করে আনলাম।


রিকশা করে বাসার সামনে নেমে রিকশা ভাড়া দিয়ে  দিলাম।



দেখলাম তিথী এখনও যায়নি।


---আমি বললাম,"এখনো রুমে যাওনি ক্যান?"



---তোমাকে একটা কিছু দেওয়ার আছে।


---(প্যারা ছাড়া আমাকে আবার কি দিবে ভাবতে লাগলাম।কিন্তু ভেবে পেলাম না।)



---তিথী বলল, "তুমি আমার এক সিঁড়ি নিচে দাড়াও।"



আমি ওর কথা মত এক সিঁড়ি নিচে দাড়ালাম। ও আমার দিকে ঘুরে চোখের পলকে আমার ঠোঁটে কিস করে বসলো।প্রায় দুই মিনিট পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালালো।



এমন রোমান্টিক অত্যাচারে আমি তো পুরা অবাক হয়ে গেছি।মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। কিছুক্ষণ পর আমি রুমে ঢুকলাম।



আমাকে দেখেই আম্মু বলল,"তোর ঠোঁট তো একদিনেই বারোটা বাজিয়ে দিলো। বাকি দিন লুচ্চা মাইয়াদের হাত থেকে কিভাবে বাঁচবি? "



চলবে,,,,,,,,,,,,,,

 #banglastory143,

#bariwalir_meye_part_10,

#bangla_love_story,

#bangla_romantic_story,

#বাড়িওয়ালীর_মেয়ে

No comments

Powered by Blogger.