গল্প | বাড়িওয়ালীর মেয়ে - পর্ব-১১ | Bariwalir Meye - Part-11
লেখা | অনিক হাসান

১০ম পর্বের পর থেকে.......
এমন রোমান্টিক অত্যাচারে আমি তো পুরা অবাক হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। কিছুক্ষণ পর আমি রুমে ঢুকলাম।
আমাকে দেখেই আম্মু বলল,"তোর ঠোঁট তো একদিনেই বারোটা বাজিয়ে দিলো। বাকি দিন লুচ্চা মাইয়াদের হাত থেকে কিভাবে বাঁচবি? "
আম্মু কে কি বলবো ভেবে পেলাম না। তাই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম।
আম্মু বলল,"থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। এখন তোর রুমে যা।
আমি আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম।
পরদিন দেরিতে ঘুম থেকে উঠলাম। উঠে দেখি আকাশের ৩ টা মিসড কল।
---কল ব্যাক করতেই আকাশ বলল,"তুই যে মিমকে ওর বাসা থেকে নিয়ে আসছিস এটা ওর পরিবার জেনে গেছে।কিন্তু ওরা তোর নাম জানে না। গতরাতে মিমের ভাই তোর ফটো দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করছে তোরে চিনি কি না? আমি না বলে দিছি।
---আচ্ছা তুই ওসব চিন্তা নিস না। আমি সামলে নিবো।বলে কল কেটে দিলাম।
সকাল সকাল একটা বিরাট বাশ খেয়ে গেলাম। এখন কি যে করি মাথায় ঢুকছে না।
হ্যাঁ একটা বুদ্ধি পেয়েছি। রাফিকে কল করে সব প্ল্যান বলে দিলাম।
দেখলাম ফোন টা আবার কাঁপা-কাঁপি শুরু করছে।
দেখি তিথী কল করছে।
এমনিতেই টেনশন হচ্ছে। তারউপর আপদটা ফোন দিচ্ছে।
প্রথম বার রিং হয়ে কেটে গেল। তিথী আবার কল দিলো।বুঝলাম না ধরা পর্যন্ত থামবে না। এজন্য কল রিসিভ করলাম।
---তোমার এতোক্ষণ লাগে ফোন ধরতে?((তিথী))
---আমি কি তেমার জন্য সবসময় ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকবো?
--এভাবে বলছো ক্যান?
----তো কিভাবে বলবো শুনি?
---একটু ভালোবেসে বলতে পারো না?
---আমাকে দিয়ে ভালোবাসা হবে না।
---ওই শোনো, তোমার কিছুই করা লাগবে না। যা করার আমি করবো।
---আমি তোর সামনে গেলে তো কিছু করবি? ((মনে মনে বললাম)
---ওই চুপ ক্যান?
---এমনি। কোনো কাজের কথা হলে বলো। আমি বিজি আছি।
---শোনো আধা ঘন্টা পর ভার্সিটি তে যাবো। তুমি রেডি হয়ে নাও।
---আমি আজকে ভার্সিটি যাবো না। (তিথীর সাথে না যাওয়ার জন্য মিথ্যা বললাম)
---কেন যাবে না?
---আমার জ্বর আসছে। তুমি একাই যাও। বলে কল কেটে দিলাম।
যাক বাবা আপাতত একটার হাত থেকে বাঁচলাম।
তিথী ভার্সিটি যাওয়ার পর আমি রেডি হয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হলাম।
একটা রিকশায় উঠে বসতেই কোন মেয়ে যেন বলল,"এই চেপে বসো।"
তাকিয়ে দেখি বিথী দাড়িয়ে। আমি বললাম,"তুমি এখানে ক্যান?"
---আমি কলেজে যাবো। প্লিজ একটু আমাকে কলেজ পর্যন্ত নিয়ে যান।
---তুমি আরেকটা রিকশা করে যাও। লোকে দেখলে বাজে কথা বলবে।
---লোকজন কি বলল সেটায় আমি ধার ধরি না। আপনি আমাকে নিবেন নাকি সেটা বলেন।
---সাথে না নিলে আবার কি করে বসে। এরচেয়ে নিয়ে যাওয়াই ভালো। তাই বললাম নিতে পারি একশর্তে।রিকশায় বসে চুপচাপ বসে থাকতে হবে।
---বিথী মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো।
আমি রিকশার ডান ডিকে চেপে বসলাম।
বিথী রিকশায় বসলো।
কিছুদূর রিকশা যাওয়ার পর কয়েকজন লোক এসে আমাদের রিকশা ঘিরে ধরে।
আমি বললাম,"ভাই আপানরা কারা?এভাবে রিকশা থামালেন কেন?
ওদের ভেতর থেকে একজন বলল,"এই ছেলে রিকশা থেকে নামো। তোমার সাথে কথা আছে।"
---আমি তো আপনাদের চিনি না। আপনাদের সাথে কোনো কথা নেই।
---বেশি কথা বললে বাসায় জ্যান্ত ফিরতে পারবি না।ভালোই ভালোই রিকশা থেকে নাম। ((লোকটি বলল))
---আমি রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালা কে বললাম, "মামা ওকে কলেজে নামিয়ে দাও।"
---এই মেয়ে তুমি কোথাও যাবে না। এখানেই নামো বলছি।((লোকটি বলল))
---রিকশাওয়ালা কে আমি ভাড়া দিয়ে বিদায় করে বললাম,"এখন বলুন কি কথা বলবেন?"
---লোকটি আমাকে আমার ফটো দেখিয়ে বলল,"এটা তুমি না?"
আসলে ফটো টা যেদিন মিমকে ওর বাসা থেকে নিয়ে আসি সেদিনের। ফটোটায় দেখা যাচ্ছে আমি বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছি। কিন্তু এই ফটো পেলো কিভাবে? মনে হয় ওদের বাসার সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে।ওটার মাধ্যমে ফটো টা নিয়েছে।
আমার চুপ থাকতে দেখে লোকটা ধমক দিয়ে বলল," ওই চুপ করে আছিস ক্যান?"
---দেখুন ফটো টা তো আমার মতোই ই মনে হচ্ছে। তবে ওটা আমি না।
আমাদের বোকা পেয়েছিস নাকি যে ভুলভাল গল্প বললেই মেনে নিবো।
---মানবেন না কি মানবেন না সেটা আপনার ইচ্ছে। কিন্তু ওটা আমি না এটা আমি প্রমাণ করে দিবো।
---কিভাবে?
দেখুন ছেলেটা আমার মতোই এটা আমি মানছি। কিন্তু ছেলেটার বাইক আছে। কিন্তু আমার কোনো বাইক নাই আর চালাতেও পারি না। বিশ্বাস না হলে আমার আব্বু র নাম্বারে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
লোকটা আমার থেকে আব্বু র নাম্বার নিয়ে আব্বুর সাথে কথা বলল।
একটু পর লোকটার চেহারায় হতাশা দেখলাম। আমি বললাম, "দেখুন আপনারা কি জন্য আমাকে থামিয়েছেন সেটা আমি জানি না। যদি বিষয়টা ক্লিয়ার করে বলেন তাহলে হয়তো আপনাদের কোনো সহায্য করতে পারবো।"
লোকটা বলল,"কি আর বলবো। একটা বোন ছিল।কয়েকদিন পর ওর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুদিন হলো ও বাড়ি থেকে পালিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে ওদিন রাতে বাসার সামনে তোমার মতো কেউ ১০ মিনিটের মতো দাড়িয়ে ছিল। এরপর চলে যায়। হয়তো ভাবছিলাম যে দাঁড়িয়ে ছিল ওর সাথে পালিয়েছে।"
দেখুন আমি আপনার বোন কে নিয়ে পালালে এখানে থাকতাম না। আর আমি পালাবোই বা কেন? বিথীকে দেখিয়ে বললাম ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
আমার মুখে এমন কথা শুনে বিথী চোখ বড় বড় করে তাকালো। আমি ইশারায় চুপ থাকতে বললাম।
এরপর মিমের ভাই বলল,"আসলে এটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কিছু মনে করো না।"
আমি বললাম,"ভাইয়া ছোট হিসাবে একটা উপদেশ দিতে পারি কি?"
---কি বলো শুনি।
---আপনার বোন যার সাথেই পালিয়েছে তাকে অনেক ভালোবাসে। ওদের ভালোবাসার দিকে দেখে ওদেরকে ক্ষমা করে দেন। আর ওদেরকে বিয়ে দিয়ে দেন।
---আমার বোনের ফোনে কল ই যাচ্ছে না। হয়তো সিমটা ফেলে দিছে। যাতে ওর সাথে যোগাযোগ করতে না পারি।
---আপনি আবার চেষ্টা করুন।
মিমের ভাই মিমের নাম্বারে কল করলো। আমাকে বলল রিং হচ্ছে।
মিম কল রিসিভ করলো।
---আমি মিমের ভাইকে বললাম,"ভাইয়া লাউড স্পিকারে কথা বলুন। যাতে আমরাও শুনতে পারি।"
---হ্যালো(মিম)
---কোথায় তুই? তোকে দুদিন ধরে কত যায়গায় খুজেছি।(মিমের ভাই)
---ভাইয়া আমি তোমাদের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করতে পারবো না। আর হ্যা আমি যাকে ভালোবাসি তাকেই বিয়ে করেছি। আর কিছু বলার থাকলে বলো।
দেখলাম মিমের ভাই মিমের এমন কথা শুনে কষ্ট পেয়েছে। আমি উনাকে বললাম, "আমি কি আপনার বোনের সাথে একটু কথা বলতে পারি?"
উনি আমাকে ফোন টা এগিয়ে দিলো।
আমি মিমকে বললাম,"দেখুন আপনি যে কাজটা করেছেন সেটা মোটেও ভালো করেন নাই। পালিয়ে যাওয়ার আগে অন্তত আপনার পরিবারের কতা টা ভাবতেন।"
---ওরা আমাার হুট করে বিয়ে ঠিক করে দিবে আমার মত ছাড়াই। আমার তো পছন্দ থাকতে পারে। এটা তো উনারা জিজ্ঞাসা করেনি। তাহলে আমি কি করবো বলেন?
---মানলাম আপনার ফ্যামিলির মানুষ ভুল করছে। আপনি তো উনাদের বিষয়টা বলতে পারতেন।
---জানতাম ভাইয়া আব্বু কেউ মানবে না। তাই বাধ্য হয়ে পালিয়ে এসেছি। বলে মিম কল কেটে দিলো।
আমি মিমের ভাইকে বললাম,"ভাইয়া একটা উপায় আছে আপনার বোনকে ফিরিয়ে আনার।"
---কি সে উপায়?
---আপনি তো বলেছেন কয়েকদিন পর আপনার বোনের বিয়ে হওয়ার কথা।
---হ্যাঁ ছিল। কিন্তু পাত্র পক্ষ এটা শোনার পর বিয়ে ভেঙ্গে দিছে।
---শুনুন আপনার বোন যার সাথে পালিয়েছে তার সাথে ওই দিনে আবার বিয়ে দিন। এতে আমার মনে হয় এটাই ভালে হবে। কারণ বিয়ের তারিখ ঠিকই থাকবে। শুধু পাত্র পরিবর্তন হবে। আর বিয়ে না হলে আপনাদের মান সম্মান ও মনে না থাকবে। এখন আমার যা ভালো মনে হয় তা বললাম এখন এটা করবেন কি না বিষয় টা আপনাদের।
মিমের ভাই বলল,"তেমার কথায় যুক্তি আছে। আমি বাসায় গিয়ে আব্বুর সাথে মিলে ডিসিশন নিবো। তারপর যা করার করবো।
---ভাইয়া বিয়ে হলে দাওয়াত দিতে ভুলবেন না।
---আচ্ছা তোমার নাম্বার দাও। যদি আব্বু মানে তাহলে তেমাকে দাওয়াত দিবো।
মিমের ভাইকে নাম্বার দিয়ে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
এতোক্ষণ মিমের ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে বিথীর কথা ভুলেই গেছিলাম। দেখি বিথী একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আবার রিকশা ঠিক করে চলতে লাগলাম।
বিথী বলল,"আমি ভাবছিলাম ওরা আপনাকে মারবে।"
---ওদের এমন ব্রেন ওয়াশ করে দিছি মারার কথা মনেই করবে না। আর হ্যা তোমাকে তো বলাই হয়নি আমি ওর বোনকে ওদের বাসা থেকে নিয়ে পালাইছি।"
---আমার কথা শুনে বিথীর হাসিমাথা মুখটা মুহুর্তেই চুপসে গেল। ও বলল,"তারমানে উনার বোনকে আপনি ভালোবাসেন?"
---আরে ধুর ওর বোনকে আমার বন্ধু ভালোবাসে। তাই আমি ওদেরকে এক করতে এই কাজ করেছি।
---বিথী বলল,"তাহলে ভালোই হলো। আমার রাস্তায় কেউ নাই।"
--কি সব আবোল তাবোল বলছো?
---ওসব আপনি বুঝবেন না।
বিথীর কলেজের সামনে চলে আসছি। রিকশা থামলে বিথী নামার সময় আমার গালে একটা পাপ্পি দিয়ে চলে গেল।
এই মাইয়া কখন কি করে ঠিক নাই। কবে যে আমার ইজ্জত টা শেষ করে আল্লাহ জানে।
ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ক্লাস করে বের হয়ে আসলাম। আজকে আকাশ আসে নাই। হারামিটা ভয়ে গা ঢাকা দিছে।
ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আছি। দেখি তিথী ওর বান্ধবীদের সাথে সামনের টেবিলে বসে কফি খাচ্ছে। আমার দিকে চেখ পড়তেই বড় বড় করে তাকালো।
দেখালাম এখানে থাকলে আবার কেন ঝামেলায় পড়তে হবে এজন্য কেটে পড়াই ভালো।
এজন্য উঠে চলতে লাগলাম। এদিকে তিথী আমাকে দেখে আমার পিছু নিলো। ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে দাড়ালাম।
তিথী আমার সামনে এসে দাড়ালো।
--ওই তুমি বললা আজকে নাকি অসুস্থ? তাহলে ভার্সিটি তে আসছো কেন? এই বলে তিথী আমার কপালে গালে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে পরিক্ষা করতে লাগলো জ্বর আসছে কি না?
---এই এতো লোকের মাঝে এসব কি করছো?
---লোক কি বলবে? আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার যত্ন নেওয়া আমার অধিকার।
---কিন্তু আমি তোমাকে ভালেবাসি না।
---ওই চুপ..
চলবে,,,,,,,,,,
#banglastory143,
#bariwalir_meye_part_11,
#bangla_love_story,
#bangla_romantic_story,
#বাড়িওয়ালীর_মেয়ে
No comments