গল্প | বাড়িওয়ালীর মেয়ে - পর্ব-০৯ | Bariwalir Meye - Part-09

Writer | Onik Hasan


৮ম পর্বের পর থেকে.......

আকাশ আমাকে বাসার সামনে বাইক থেকে নামিয়ে দিলো।বাসাতে ঢুকতেই বড় রকমের শক খেলাম।  



দেখি আব্বু আম্মু দুজনেই জেগে আছে।



আব্বু আমার দিকে রাগি চেহারা নিয়ে বলল,"শয়তান এতো রাতে বাইরে কি করেছিস বল?"



আব্বুর ধমক শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেল। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আব্বুর ধমক শুনলে আমার মাথা কাজ করে না।



আমি কিছু বলছি না দেখে আবার আব্বু বলল,"ওই কথা বলছিস না ক্যান?"



---আসলে আব্বু....



আমার কথার মাঝখানে আম্মু আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,"ছেলেকে কেউ এভাবে ধমকায়?"



---তোমার ছেলে রাত দুটায় বাসায় ফিরবে আর আমি শাসন করতে পারবো না এটা তো হবে না।



---তুমি আমার ছেলেকে কিছুই বলতে পারবে না।



---এহ বলছে। ছেলে খালি ওর একার।



আব্বু আম্মুর এমন চলতে থাকলে একটু পর ঝগড়া লেগে যাবে। তাই আমি বললাম, 



"তোমরা দুজন ঝগড়া থামাবে নাকি আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো?" এই বলে আমি রুমে চলে আসলাম।



তারাতাড়ি দরজা আটকে শুয়ে পড়লাম। যাক আজকের মতো বেঁচে গেছি।



আসলেও এতো রাত করে বাসায় আসা ঠিক হয়নি। কিন্তু রাফির জন্য এসব করতে দেরী হয়ে গেল। কিন্তু এসব তো আর আব্বু আম্মুকে বলা যায় না।



আর কোনো কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম।



সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাংলো।


মা বলল,"বাজার করে আনতে।"



মায়ের বাধ্য ছেলের মতো বাজার করে আনলাম।



রুমে এসে দেখি তিথী দুবার কল করছে। এতো সকাল সকাল কেন কল করছে ভেবে পেলাম না। ভাবতে লাগলাম কল দিবো কিনা? একটু পর আবার তিথী কল করলো।


---হ্যালো। ((আমি))



---ওই ফোন ধরো না ক্যান? দেখো তো কতবার কল করছি।(তিথী রাগী গলায় বলল)



---মাত্র দুবার কল দিয়ে এতো ঝাড়ি দিচ্ছো ক্যান?


---জরুরি কথা আছে। এজন্য কল দিছি।



---তা কি তোমার জরুরি কথা শুনি?



---ফোনে বলা যাবে না। তুমি ছাদে আসো বলে কল কেটে দিলো।



কি আজব রে। কি এমন কথা যা শোনার জন্য আবার ছাঁদে যেতে হবে?



এতো ভেবে কি হবে? আগে গিয়ে শুনি কি বলে।



একটু পর ছাঁদে গিয়ে দেখি তিথী দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই বলল,"এতোক্ষণ লাগে আসতে?"



---মাত্র ৫ মিনিট দেরি হইছে। এজন্য এতো রিএক্ট করার কি আছে বুঝি না।



---অপেক্ষা করা কতটা কষ্ট তা তুমি কি বুঝবে?



---তোমার এসব ফালতু কথা বাদ দিয়ে বলো কিজন্য ডাকলে?



---আসলে আমার কথাটা কিভাবে নিবে সেটা নিয়েই টেনশনে আছি।



---আমার সাথে এতোকিছু করার পর ও আমাকে নিয়ে তোমার টেনশন হয়😂😂



---দেখো অনিক ফাজলামি করবে না।



---আমি হাসতে হাসতে বললাম,"আচ্ছা ফাজলামি করবো না।এখন বলো আমাকে কি করতে হবে।"



---তিথী বলল,"আমাকে প্রমিজ করো কাজটা করবে?"



---আচ্ছা আমি কি তোমার কোনো কাজ না করছি?



---আমি অতকিছু জানি না। প্রমিজ করো নাহলে আন্টিকে গিয়ে বলবো তুমি আমাকে প্রপোজ করছো।



---কিহ! এমন কাজ তুমি করতে পারো না। এসব আমি মানি না।



---প্রমিজ করো কাজটা করবে। তাহলে আন্টিকে এসব বলবো না।



---কি মেয়েরে বাবা। খালি ব্ল্যাকমেইল করে। কোন দুঃখে যে প্রপোজ করছিলাম। কোনো উপায় না পেয়ে বললাম,"আচ্ছা প্রমিজ করলাম কাজটা করবো।" এখন বলো কাজটা কি?



---তিথী বলল,"আজকে আমার বান্ধবীর বার্থডে। ওখানে তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।"



---এই সিম্পল কাজের জন্য আবার প্রমিজ করানো লাগে নাকি 😑😕



----আরে আসল কাজটার কথাটা তো ভুলেই গেছি।


---দেরী করছো ক্যান? ওটাও বলো।



---আমার বান্ধবী রা সবাই জানে তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড। তাই তোমাকে আমার বয়ফ্রেন্ডের অভিনয় করতে হবে।



---তিথীর কথা শুনে মনে হলো আমি আকাশ থেকে পড়লাম।মাইয়া বলে এসব বলে কি। আমি তিথী কে বললাম, "তোমার মাথা ঠিক আছ তো?"



---তিথী বলল,"আমার মাথা ঠিকই আছে।"



---তাহলে আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হলাম কখন?



---যেদিন কলেজে প্রপোজ করছো সেদিন থেকে।


---কতবার বলবো সেদিন ফান করে প্রপোজ করছি।



---আমি এতোকিছু বুঝি না। তুমি আমার কথা না শুনলে আমি সত্যি সত্যি আন্টিকে বলে দিবো। বলে তিথী ছাদ থেকে নামতে লাগলো।


---আমি বললাম,"কই যাও?"


---আন্টির কাছে। তার ছেলের কুকর্মগুলো গুলো বর্ণনা করতে।



তিথী আর থামলো না। সরাসরি নিচে গিয়ে আম্মু কে ডাকতে লাগলো।



তিথীর ডাক শুনে আম্মু বেরিয়ে এসে বলল,"মা তিথী কি হয়েছে? এভাবে ডাকছো কেন?"



---আপনার গুনধর ছেলে কি করছে শুনবেন? 



এই মনে হয় বাশ খেয়ে গেলাম। এখন তো মনে হয় সত্যি সত্যি প্রপোজ করার কথা বলে দিবে। যদি বলে তাহলে আম্মু আব্বু দুজনে আমাকে পিটিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করবে। আশু বিপদের কথা মাথায় রেখে বললাম,"ওই আমি কিছুই করিনি?"



আম্মু আমাকে চুপ করতে বলে তিথীকে বলল,"অনিক কি করছে বলো?"



---আসলে আন্টি আজকে আমার বান্ধবীর বার্থডে। এজন্য আমাকে ইনভাইট করছে। কিন্তু আম্মু আমাকে একা একা যেতে দিবে না। এজন্য আপনার ছেলেকে কত করে বলছি আমার সাথে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ও আমার কথা শুনছেই না।এখন যদি বান্ধবীর বাড়িতে না যাই তাহলে ও মন খারাপ করবে। এখন বলেন আমি কি করবো?



তিথীর কথা শুনে আম্মু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। এরপর বলল,"অনিক তিথীকে ওর বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যাবি আসবি। মনে থাকে যেনো।"



---কিন্তু আম্মু....

---তোর কোনো বাহানা শুনতে চাচ্ছি না। তুই তিথীর সাথে যাবি এটাই ফাইনাল।



আম্মু তো আসল কাহিনি না জেনেই তিথীর সাথে যেতে বলল। এখন আম্মু যখন বলেছে যেতেই হবে। ওখানে যে কি আবার হবে আল্লাহ ভালো জানে।



তিথী আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,"কি মিস্টার অনিক যাবে না বললে, এখন তো ঠিকই রাজি হলে। এরপর যদি আমার কথার অবাধ্য হয়েছো তাহলে তোমার খবর আছে।"


----দেখো তিথী কাজটা ঠিক করলে না।



---কি ঠিক আর কি ভুল সেটা আমি ভালো করে জানি। সো এটা আমাকে বুঝাতে আসবে না কেমন। আর হ্যাঁ সন্ধ্যায় রেডি থাকবে।



----তাহলে রাতে তো বিথীকে পড়ানো হবে না।



বিথীর পড়ানো নিয়ে তুমি এতো টেনশন করছো কেন?



---ওর তো সামনে পরিক্ষা। এটা তো তোমাকে মাথায় রাখতে হবে।



---একদিন না পড়ালে কিছুই হবে না বুঝলে।


আমি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে আসলাম।



একটু পর ভার্সিটিতে যেতে হবে। নাস্তা করে রেডি হয়ে তিথীর সাথে ভার্সিটিতে চলে আসলাম। আসার সময় একটা কথাও বলিনি।



ক্লাস শেষে তিথীকে ফোন দিলাম। তিথী বলল,"ওর যেতে দেরী হবে।"



আর আর ওর জন্য অপেক্ষা না করে বাসায় চলে আসলাম।


দুপুরে ঘুমিয়ে আছি। মনে হচ্ছে কে যেন আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। চোখ খুলে দেখি বিথী দাঁড়িয়ে আছে।



---আমি বিথীকে বললাম,"আমার রুমে কি করছো?"


---আপনার রুমে আসা মানা নাকি? 


---হুম মানা।


---তাও আমি আসবোই।



---এই সময় আম্মু যদি ওকে আমার রুমে দেখে তাহলে খারাপ কিছু ভাবতে পারে। এজন্য বিথীকে বললাম,"দেখো আম্মু দেখলে আবার মাইন্ড করবে। তুমি এখন যাও।"



---শ্বাশুড়ি আম্মা ই আমাকে আসার অনুমতি দিয়েছে। সো উনি আমাকে কিছুই বলবে না।



---ওই পিচ্চি মাইয়া তুমি আমার আম্মু কে শ্বাশুড়ি বলছো ক্যান?



---তো শ্বাশুড়ি কে কি বলবো?



---হুর, তোমার মাথাট তাঁর ছিড়ে গেছে। মাথার ডাক্তার দেখাও।



---আমার ডাক্তার তো আপনি। আপনি আমার হলে আমি এমনি ভালো হয়ে যাবো।



---বিথী তোমাকে গতকাল এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে মানা করছি। তারপরও শুনছো না ক্যান?



----এইযে মিষ্টার আমাকে আপনি বাঁধা দিতে পারবেন না। আমি আমার ভালোবাসা আদায় করে ছাড়বো।



---তোমাকে আমি আগেই বলছি আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।



---আমাকে মিথ্যা বলে লাভ নাই। তোমার বিষয়ে সব খোঁজ নেওয়া শেষ। আর এটাও জানি তোমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নাই।



---হায়! হায়!! এই মাইয়া এসব জানলো কিভাবে? (মনে মনে বললাম)



---ওই বিরবির করে কি বলেন?


---সেটা শুনে তুমি কি করবে?



---এখন থেকে আপনার সব কিছু জানার অধিকার আমার আছে বুঝলেন।



---দেখো বিথী তুমি একটা পিচ্চি মেয়ে। তোমার সাথে আমাকে মানায় না।



---ওই আমি পিচ্চি! দাড়ান দেখাচ্ছি আমি পিচ্চি না। এই বলে বিথী আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে আমার ঠোঁটে কিস করে বসলো।



টানা দুই মিনিট কিস করার পর আমাকে ছেড়ে দিলো।আরেকটু হলে আমার দম বন্ধ হয়ে যেত।



---বিথি বলল,"এবার তো মনে হয়েছে আমি পিচ্চি না।"



---লুচ্চা মেয়ে আমার ঠোঁট টা কামড় দিয়ে দাগ বসিয়ে দিছে।তোমাকে এর শাস্তি পেতেই হবে।



---কি শাস্তি দিবেন শুনি?


---ইচ্ছে করছে থাপ্পড় দিতে।



---থাপ্পড় দিতে হবে না। চাইলে আপনি আমাকে কিস করতে পারেন। বলে ওর ঠোঁট আমার দিকে এগিয়ে দিতে লাগল।



এই মাইয়ার সাথে আর কিছুক্ষন থাকলে আমার কিছু করা লাগবে না। ও সব কিছু করে ফেলবে। এর ভেতর মা যদি দেখে তাহলে এই পাগলি মেয়েকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিবে। এর চেয়ে রুম থেকে কেটে পড়া ভালো।



আমি বিথীকে বললাম,"দেখো আমার আম্মু দরজায় দাড়িয়ে সব দেখে ফেলছে।"



আমার কথা শুনে বিথী ঘুরে তাকালো। এই সুযোগে আমি লাফ দিয়ে খাট থেকে কেটে পড়লাম।



যাক বাবা এখনকার মতো বাঁচলাম। 



আয়নার সামনে গিয়ে দেখি আমার নিচের ঠোঁট টা হাল্কা কেটে গেছে। শয়তান রাক্ষস মাইয়া আমার ঠোঁট টা শেষ করে দিলো।



একটা পিচ্চি মেয়ে জোর করে আমাকে কিস করছে এটা কেউ জানলে আমার মান সম্মান সব চলে যাবে।



চলবে,,,,,,,,,,

 #banglastory143,

#bariwalir_meye_part_09,

#bangla_love_story,

#bangla_romantic_story,

#বাড়িওয়ালীর_মেয়ে





No comments

Powered by Blogger.