গল্প | বাড়িওয়ালীর মেয়ে - পর্ব-০৮ ◑ Bariwalir Meye - Part-08
লেখক | অনিক হাসান

৭ম পর্বের পর থেকে.......
---এই যে ম্যাডাম আসুন, রিকশা পেয়েছি।
তিথী রিকশায় উঠলো, তারপর আমি উঠলাম। রিকশা চলতে শুরু করলো ভার্সিটির উদ্দশ্যে।
আমি চুপচাপ হয়ে বসে আছি।
---নিরবতা ভেঙ্গে তিথী বলল,"আমাকে একটা সাহায্য করতে পারবে?"
---কি সাহায্য?
---তোমাকে বললে তুমি কেমন ভাবে নেবে?
----আমি আবার কেমন ভাবে নেবো?
---আমি তো তোমাকে সবসময় ব্ল্যাকমেইল করি। তাই তুমি যদি না করো?
---তোমার কথায় কখন না করলাম? তাছাড়া তুমিতো আমার মায়ের কাছ থেকে স্পেশাল অর্ডার নিয়েছো। যার কারনে আমি তোমার সব কথা শুনতে বাধ্য। (অভিমানি কন্ঠে বললাম)
---অর্ডার তো নিছি। কিন্তু তোমার উপর সবসময় তোমার উপর চাপ দেওয়া কি ঠিক?
---অন্যসময় আমার উপর যেকোনো কাজ জোর করে চাপিয়ে দাও আর এখন কি দরদ দেখেচ্ছো কারণটা কি জানতে পারি?
---তোমাকে দেখলে কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগে।
---কিহ! আমি বাচ্চা!
---তুমি তো মেয়ে মানুষ দেখে ভয় পাও। এজন্য তোমাকে বাচ্চা না বলে গাঁধা বলা উচিৎ।
---ওই আমি গাঁধা না।
---আমি যা বলি তুমি তা গাঁধার মতোই করে দাও। এজন্য তুমি একটা গাঁধা।
---আমাকে কিন্তু চরম অপমান করা হচ্ছে।
---হুম করছি, তুমিও পারলে করো।
---আমি বললাম,"আজকেই আন্টিকে গিয়ে সব বলে দেবো।"
---আমার আম্মুকে কি বলবে? (তিথী)
---যা বলার আন্টিকে বলবো। এখন তুমি বসে থাকো।
--- তুমি শুয়ে থেকো।
---তোমার সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছা করছে না।
---হুম ভালো।
ভার্সিটিতে পৌচ্ছানোর পর গতদিনের মতো আজকেও আমার রিকশা ভাড়া দেওয়া লাগলো। এরপর ক্লাসের উদ্দশ্যে চলতে শুরু করলাম। পেছন থেকে তিথী আমাকে ডাক দিলো।
---কিছু বলবে?
---হুম।
---কি?
---রিকশাতে বললাম না একটু সাহায্যর করার কথা।
---হুম বলেছিলে। তা আমাকে কি করতে হবে?
---আজ ক্লাস শেষ করে আমি শপিং করবো। তুমি যদি আমার সাথে যেতে তাহলে আমার উপকার হতো।
---শুনেছি মেয়েদের শপিং করতে অনেক সময় লাগে। আজ তাহলে কখন শপিং শেষ হবে আল্লাহ ভালো জানে। (মনে মনে বললাম)
---কিছু বললে না যে?
---এই কথা বলতে গিয়ে রিকশাতে আমার সাথে কতক্ষণ ঝগড়া করলে।
---তুমি তো ঝগড়া বাধিয়েছো।
---এখন যতো দোষ সব আমাকে দিচ্ছো।
---ওসব কথা বাদ দাও।আমার সাথে যাবে কি না?
---না গেলে আম্মুকে আবার কি সব উল্টাপাল্টা বলবে।এরচেয়ে সাথে যাওয়া ভালো। এজন্য বললাম,"আচ্ছা যাবো।"
---ওকে তাহলে আমি ক্লাসে গেলাম।
আমিও চললাম ক্লাসের দিকে। ক্লাসে গিয়ে দেখি রাফি মন খারাপ করে বসে আছে।
---এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস ক্যান?
---তোকে কি আবার সব কথা বলতে হবে?
---হায় আল্লাহ! দেখছি আমার বন্ধুর রাগও আছে। তবে আমার উপর রাগ না দেখিয়ে তোর ভিলেন হবু শ্বশুরের উপর রাগ দেখালে ভালো হতো।
---আমার হবু শ্বশুর হলো কোথায়? ওর মেয়েকে তো অন্য যায়গায় বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।
---বললেই কি বিয়ে দেওয়া হয়ে গেলো? এতো টেনশন করিস না। আমি তো আছি।
---তুই আমাকে শান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কি করতে পারবি?
---তুই আমার জানের দোস্ত। তোর জন্য সব করতে পারি।
তুই কি পারবি মিমকে আমার কাছে এনে দিতে?
---না পারলেও তোর জন্য আমাকে পারতে হবে। তুই মন খারাপ করিস না।
---ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আছি। এমন সময় তিথী ফোন করলো।
---হ্যালো কোথায় তুমি?
---এইতো ক্যান্টিনে বসে আছি।
---তুমি তারাতারি ভার্সিটি গেইটে চলে আসো।
---আচ্ছা আসছি।
---এই মেয়ের জন্য কোনো কিছুতে শান্তি নেই। দোস্ত তোরা থাক আমাকে এখন যেতে হবে।
---বন্ধুরা বলল,"আচ্ছা যা।"
মাথায় রাফির চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কি যে করি! তার উপর আছে ওরা দুই বোন। সব মিলিয়ে পাগল হওয়ার অবস্থা।
---আমাকে একটু দেরী করে আসতে দেখে তিথী বলল,"এইটুকু পথ আসতে তোমার এতো সময় লাগে?"
---আমার তো ডানা নেই যে তুমি ডাকা মাত্র সেখানে উড়ে হাজির হবো।
---ফালতু কথা বাদ দিয়ে রিকসায় উঠো। শপিং করতে যাবো।
আমি আর কোনো কথা না বলে রিকশায় উঠে বসলাম।
তিথী অনেক্ষণ ঘুরে ঘুরে শপিং করলো। শপিং শেষে বসায় আসলাম।
---আজ এতো দেরি করলি যে।
---আম্মু একটা কাজে আটকে গেছিলাম।
---কি কাজ?
---ওটা তোমার না জানলেও হবে।
---হাত মুখ ধুয়ে আয়।আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
---আচ্ছা আম্মু।
খাওয়া শেষ করে শুয়ে পরি। এখন মিমকে নিয়ে পালানোর একটা প্ল্যান করতে হবে। অনেক ভেবে একটা প্ল্যান করলাম।কিন্তু কাজটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাস্তবায়ন কাল রাতে করা যাবে।এখন কিছুটা সময় ঘুমিয়ে নেই। সন্ধ্যার সময় আবার বিথীকে পড়াতে হবে।
ঘুম থেকে উঠলাম সন্ধ্যার আগে।কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে এলাম যাতে মনটা ভালো থাকে।সন্ধ্যার পর গেলাম প্রাইভেট পড়াতে।
---আমাকে দেখে বিথী বলল,"স্যার আপনি দেখছি একদম ঠিক সময়ে চলে আসছেন।"
---আসলাম আরকি। আজেবাজে কথা বাদ দিয়ে পড়তে বসো।
---স্যার আমি তো পড়ার জন্য আপনাকে স্যার বানাইনি।
---তো কেনো আমার কাছে পড়তে জেদ করলে?
---আমার কেনো জানি সবসময় আপনার কথা মনে পরে।ইচ্ছা হয় সবসময় আপনার সাথে কথা বলি।
---ওই তোমার ফিল্মি কথা বাদ দিয়ে পড়তে বসো।
---স্যার আমি কিন্তু সত্যি বলছি।
---কি সত্যি হ্যা?(রেগে বললাম)
---আমি আপনাকে ভালোবাসি।
---ওই মেয়ে তোমার মাথা ঠিক আছে তো।
---আগে ঠিকই ছিলো কিন্তু যেদিন আমাকে থাপ্পর মারলেন সেদিন থেকে আমার মনে যায়গা করে নিলেন।
---হায় আল্লাহ! থাপ্পর খেয়ে কি কেউ প্রেমে পরে?
বিথী আমার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,
তবু তোমার প্রেমে আমি পরেছি,
বেঁচে থেকেও যেনো মরেছি।
থাপ্পর খেয়ে তোমার প্রেমে পরেছি.......
---ওই তোমার এই ফালতু গান বলা বন্ধ করো।
---কেনো স্যার? ভালো লাগছে না বুঝি?
---থাপ্পর খেয়ে কি কেউ প্রেমে পরে?
---আমি পরেছি।
---থাপ্পর দিয়ে তোমার ভালোবাসার ভূত ছাড়াতে হবে।
---ভালোবাসা কি অপরাধ?
---না, তবে ভুল মানুষকে ভালোবাসা অপরাধ।
---আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন?
---হ্যা ভালোবাসি। (মিতুর হাত থেকে বাঁচতে মিথ্যা বললাম।
---আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না।
----তোমার এই সব ন্যাকামি বাদ দিয়ে পড়তে বসো।
---আমি আজকে পড়বো না। আপনি এখন যেতে পারেন।
আমার ভালই হলো। আমি চলে আসলাম।
রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পরি। মাঝ রাতে স্বপ্নে দেখি বিথী সুইসাইড করেছে। এটা দেখার পর আমার ঘুম হারিয়ে যায়।
পড়ানোর সময় ওকে ওভাবে বলা ঠিক হয়নি। একটু বুঝিয়ে বললেই হতো। এখন যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে! তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
সারা রাত উল্টাপাল্টা চিন্তায় ঘুম হলো না।
সকালে নাস্তা করে চললাম ভার্সিটিতে। তিথীর আম্মু অসুস্থ। এজন্য তিথী আসেনি। এতে আমার ভালোই হয়েছে। শান্তিমতো যেতে পারছি। হঠাৎ বিথীর কথা মনে পরে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
ভার্সিটিতে এসে পরছি। কথামতো আকাশ আর রাফি গেইটে দাড়িয়ে আছে।
---রিকসা থেকে ওদের কাছে গেলাম।
---আকাশকে বললাম,"দোস্ত তোর বাইকটা আজ আমাকে দিবি।"
আকাশ-- আচ্ছা নিস।
---আকাশ আর রাফি তোরা দুই জন আজকে রাত এগারটার সময় বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করবি।
---কোনো? (আকাশ বলল)
---রাফির জন্য সারপ্রাইজ আছে।
---তাহলে আমাকে কেনো আসতে হবে?
---ওকে যে সারপ্রাইজটা দেবো তুই তার সাক্ষী হবি।
আচ্ছা আসবো।
---আমার কিছু কাজ আছে। এখনই যেতে হবে। তোর বাইকটা নিয়ে গেলাম।
---ফেরত দিবি কখন?
---রাত্রেই পাবি।
---আচ্ছা এই নে চাবি।
---বাইক নিয়ে চললাম মার্কেটে। কিছু ড্রেস কিনতে হবে।কেনাকাটা শেষ করে বাইরে আসলাম।
---ফোনটা বের করে মিমকে ফোন দিলাম।
---হ্যালো মিম কেমন আছো?
---ভাইয়া ভালো নেই।
---কেনো?
---আব্বু আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি রাফিকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। আপনি কিছু একটা করেন।
---তুমি কোনো চিন্তা করো না। আজ রাত দশটায় তুমি কি তোমার বাসার বাইরে আসতে পারবে?
---হুম পারবো।
---আমি ফোন দিলে তুমি চুপিচাপি বের হয়ে চলে আসবে।কেউ দেখলে বিপদ আছে।
---আচ্ছা আমি সাবধানে আসবো।
---আচ্ছা এখন তাহলে রাখি।
---রাত ৯টা ৫০ মিনিট, মিমের বাসার সামনে বাইক নিয়ে থামলাম।
ফোনটা বের করে মিমকে ফোন দিলাম।
ও ফোনটা কেটে দিলো।
আমি নিচে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর মিম কালো বোরকা পরে হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসলো।
---তুমি তো দেখছি একদম পালানোর প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়েছো।
---দুপুরে আপনার কথায় বুঝেছি পালাতে হবে।
---এখানে বেশি কথা বলা যাবে না। তারাতারি বাইকে উঠে বসো।
---মিম বাইকে বসলো। বাইক চালাতে লাগলাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে।
কিছুক্ষণ পর বাস স্ট্যান্ড পৌচ্ছে গেলাম।
আমার বলা মতো যায়গায় ওরা দুজন দাড়িয়ে আছে।
বাইক থামালাম।
আমাকে রাফি জড়িয়ে ধরলো। আমি বললাম,"এই ছাড় আমাকে। আগে নামতে দে।"
---দোস্ত তোর এই উপকারের কথা কোনো দিনই ভুলবো না।
---তুই ও তো দেখছি পালানোর সব প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিস।তোর মাথায় এতো বুদ্ধি এলো কোথা থেকে?
---মিম আমাকে সব বলেছে।
---তাই তো বলি। এখন এসব কথা বাদ দে। আগে তোদের বিয়ে পড়াতে হবে। এখন কাজী অফিসে চল।
দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হলো। ওদের হাতে দুপুরের কেনা জিনিসগুলো তুলে দিলাম।
---এখানে কি আছে?(রাফি)
---খুলে দেখ।(আমি)
---এসব কখন কিনলি?
---দুপুরে কিনছি। এখন বাস স্ট্যান্ডে চল। রাত ১ টায় তোদের বাস।
---আমাদের বাস মানে?
---তোরা হানিমুনে কক্সবাজার যাচ্ছিস। এই নে বাসের টিকিট।আর এটা তোদের হোটেলের টিকিট।
বাস স্ট্যান্ডে চলে আসছি। রাফির পকেটে পাঁচ হাজার গুজে দিলাম। এরপর ওদের বাসে তুলে দিলাম। একটু পর বাস চলতে শুরু করলো। দুজনকে একসাথে করতে পেরেছি ভেবেই মনের ভেতর অনেক ভালো লাগতে লাগলো।
---আমি আকাশকে বললাম,"রাত অনেক হয়েছে এখন বাসায় যাওয়া দরকার।"
---আকাশ বলল,"আমি তোকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে বাইক নিয়ে চলে যাবো।"
---আচ্ছা।
আকাশ আমাকে বাসার সামনে বাইক থেকে নামিয়ে দিলো।বাসাতে ঢুকতেই বড় রকমের শক খেলাম।
চলবে,,,,,,,,
#banglastory143,
#bariwalir_meye_part_08,
#bangla_love_story,
#bangla_romantic_story,
#বাড়িওয়ালীর_মেয়ে
No comments