অফিসের দেমাগি বস -পর্ব -১১ | Officer demagi boss -Part-11
অফিসের দেমাগী বস🖤
লেখকঃ অভি আহমেদ রাজ
পর্ব - ১১
আমি রিয়া নিয়ে বাইরে চলে আসলাম৷ মানে কেবিনটার বাইরে৷ তারপরও মেঘা ওখানে দাঁড়িয়ে আছে৷ এক পাও নড়েনি৷
আমি রিয়ার থেকে শুনলাম আন্টিকে কোন রুমে রাখা হয়েছে৷ ও ঠিকমতোই বলল৷
তারপরে আমি মেঘার হাত ধরে লাশ রাখার রুমে চলে আসলাম৷ ওখান একজন ছিল তাকে বললাম পারমিশন নিয়ে এসেছি তাই সে ঢুকতে দিলো৷
#অফিসের_দোমাগি_বস_পর্ব_১১
#banglastory143
মেঘা : এই তুমি এখানে আনলে কেন আমাকে?
আমি : আন্টি এই রুমেই আছে৷
মেঘা : তুমি কি পাগল হলে? মা এখানে কেন থাকবে?
আমি : হুম এখানে আছে সামনে চলো।
আমি : ধ্যাত লাশের রুমে মা কি করবে পাগল একটা৷ বাইরে চলো।
আমি : চলো।
ওর হাত ধরে নিয়ে আসলাম একটা টেবিলের উপর রাখা আছে আন্টির লাশ৷ আমার প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে৷ কিন্তু পারছিনা কাঁদতে৷ আন্টির মুখের উপর থেকে সাদা কাপড়টা টানতেই মেঘা একদম শক্ত কাঠের মতো দাঁড়িয়ে গেল৷ চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা নোনা পানি বেরিয়ে গেল ওর৷ আর আমারও পানি পড়তে লাগল চোখ দিয়ে৷ আন্টির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে৷ খুব কষ্ট হচ্ছিল ওভাবে আন্টিকে দেখতে৷
তখন হঠাৎ মেঘার দিকে চোখ পড়ল৷ ওর চোখ দিয়ে কোনো পানি পড়ছে না৷ এক নজরে তাঁকিয়ে আছে ওর মার দিকে৷ মনে হচ্ছে একটা রোবট দাঁড়িয়ে আছে যার কোনো অনুভূতি নেই৷ আমি ভেবেছিলেন কান্নাকাটি চিৎকার করতে শুরু করবে৷ কিন্তু না৷ এতো দেখি কিছুই বলছে না৷ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে পাগলি মেয়েটা৷ ওর মুখটা মলিন হয়ে আছে৷ ☹☹
#অফিসের_দোমাগি_বস_পর্ব_১১
#Officer_Demagi_Boss_Part_11
#banglastory143
আমি : মেঘা..
আমি : ওই মেঘা..
আমি : আজব তো? কথা বলছো না কেন?
আমি : কি হলো কথা বলো?..
আমি : ওই কথা বলো..
ওর কাছে যেয়ে গায়ে একটু হাত দিয়ে বললাম কথাটা৷ আর তখনই মেঘার শরীরটা আমার বুকে উপড় পড়ল৷ সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরলাম ওকে৷ না এ মেয়ে তো সজ্ঞানে নেই৷ এতোটা শক হয়তো সহ্য করতে পারেনি সেজন্য জ্ঞান হারিয়েছে৷ হুম এটা হওয়ার ই কথা৷ আচমকা (হঠাৎ) এমন কিছু ঘটে গেলে এমন হওয়াই স্বাভাবিক৷ আর যে মারা গেছে সে তো তার মা৷ যে মানুষটা ওকে ১০মাস ১০দিন গর্ভে ধারণ করে কতো কষ্টই না সহ্য করেছে৷
(খুব ভালোবাসি আমার মা'কে😘৷ দোয়া করবেন আম্মুর আগে যেন আমার মৃত্যু হয়😘৷ তবে এইটা শুধু আমার না, অনেক সন্তানের ই ইচ্ছা, যে তারা মারা যাওয়ার পরে যেন তাদের মা-বাবা মারা যায়৷ কারণ মা-বাবার মৃত্যু সহ্য করা এতোটা সহজ না৷😔)
#অফিসের_দোমাগি_বস_পর্ব_১১
#Officer_Demagi_Boss_Part_11
#banglastory143
বিগত ৩দিন যাবৎ মেঘার জ্ঞান ফেরেনি৷ খুব টেনশন হচ্ছে৷ আর আংকেলও তো উঠতে পারেনি৷ তাই আন্টির কবর দেওয়ার সকল ব্যবস্থা আমি ই করলাম৷ আর সময় নষ্ট না করে ওনার লাশ দাফন করলাম৷ কেন জানিনা খুব ভালোবেসে ছিলাম আন্টিকে কিন্তু সবতো নিমিষের মধ্যেই ধুলোয় মিশে গেল৷ আসলেই সবার কপালে সব কিছু সয় না৷ কিন্তু মানুষ সেটাই বেশি চায় যা তার কপালে নেই৷ তার যথেষ্ট উদাহরণ আমি৷ (বাস্তবেও🙂💔)
আজকে বিকেলে মেঘার জ্ঞান ফিরেছে৷ তারপর থেকেই পাগলের মতো করছে৷ শুধু মা মা বলছে চিৎকার করছে৷
--- "আমি মার কাছে যাবে..মাকে এনে দাও আমার কাছে"
এইসব কথা বার বার বলতেই আছে৷ তখন আংকেল আমাকে ওর কাছে যেয়ে শান্তনা দিতে বলল৷
আমিও গেলাম ওর কেবিনে যেয়ে দেখি নার্সকে এইসব কথা বলতেই আছে কিন্তু নার্স কিছুই বলতে পারছেনা৷ আমি কেবিনে যেয়ে নার্সকে ইশারা করে বেরিয়ে যেতে বললাম৷ নার্স চলে গেল৷ তখন আমি যেয়ে ওর পাশে বসলাম৷ তখনও ওমন পাগলের মতো করে বলতেই আছে মা মা৷ মা হারানোর বেদনা আসলেই অসহ্য৷
ওর এমন ব্যবহার দেখে আমারই কষ্ট হচ্ছে৷ কি করব,,কি করব কিছু ভেবে না পেয়ে ওকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলাম৷ আর তখনই মেঘাও আমার পিঠে হাত দিয়ে খুব শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরল৷ আর চোখের পানি ছেড়ে কাঁদতে লাগলো৷
মেঘা : কি করে হলো এসব বলোনা?
আমি : .......(আমার বলার ভাষা নেই)
মেঘা : আমাকে এতিম বানিয়ে চলে গেল মা৷ আমাকে বাবাকে বোনকে ছেড়ে একা একা যেতে পারলো?
আমি : চুপ থাকোনা একটু..(নয়তো আমিও কেঁদে দিবো ওর ব্যবহারে),,
মেঘা : জানো? মা না রিয়ার থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসতো৷ আমাকে রোজ খাইয়ে দিতো সকালে৷ কতো আদর যত্ন করতো আমার,,,,,,
আমি : উমম..😞😞
মেঘা : কতো ইচ্ছা ছিলো ওখান থেকে এসে মন খুলে মায়ের সাথে গল্প করবো৷ আর তোমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা মাকে বলব কিন্তু দেখ৷ কেমন স্বার্থপর মা আমাকে একা রেখেই চলে গেল৷ কষ্ট হয়না বুঝি আমার৷ পচাঁ মা আমার৷
#অফিসের_দোমাগি_বস_পর্ব_১১
#Officer_Demagi_Boss_Part_11
#banglastory143
আমি : তোমার মা তোমার সাথেই থাকবে তো সবসময়৷
মেঘা : কেনো চলে গেল আমাকে রেখে? আচ্ছা আমার মা কে তোমরা একা ওই অন্ধকার কবরে রেখে এসেছো কেন হুম?
আমি : চুপ..(এইবার আমার চোখ বেয়েও পানি ঝড়ছে)
মেঘা : উমমমম (ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আমাকে জড়িয়ে ধরেই)
আমি : এমন বলবেনা আর হুম৷ আল্লাহ্'র জিনিস আল্লাহ্ নিছে এতে কারো হাত নেই৷ যা হবার তা তো হয়েই গেছে৷
মেঘা : ............(জোরে জোরে কাঁদছে)
আমি : চুপ করোনা প্লীজ৷ তোমার বোন বাবা আছে৷ তুমি তো বড় ওদের দেখার দায়িত্ব তোমার৷
মেঘা : ................(ফুপিয়ে কাঁদছে)
আমি : তুমি যদি এভাবে ভেঙে পড়ো তাহলে কি করে হবে বলোতো?
মেঘা : হুম......(কাঁদছেই)
আমি : গুড গার্ল৷ আচ্ছা তুমি এখন থেকে স্ট্রং থাকবে কেমন?
মেঘা : হুম.......(এখনো কাঁদছে মেয়েটা)
আমি : তুমি দাঁড়াও আমি খাবার নিয়ে আসি৷
মেঘা : খাবো না আমি৷
আমি : না খেলে যে তুমি দুর্বল হয়ে যাবে৷
মেঘা : হই সমস্যা নেই আম্মুর কাছে যেতে পারবো৷
আমি : চুপ একদম বাজে কথা বলবিনা৷ সরি বলবানা৷ নয়তো মাইর দিবো৷
মেঘা : উমমম....(কাঁদছেই যে দেখো তো)
আমি : জানো আন্টি দূর তারা থেকে আন্টি তোমাকে দেখে কিন্তু তুমি যদি দুর্বল হয়ে রিয়া আর বাবাকে প্রেরণা না যোগাও তাহলে কি করে চলবে শুনি? এই সব ভেবে আন্টি কষ্ট পায়৷
#অফিসের_দোমাগি_বস_পর্ব_১১
#Officer_Demagi_Boss_Part_11
#banglastory143
মেঘা : সত্যি? তাহলে দাও খাবো আমি..(কিনচিৎ পরিমাণ খুশি হয়ে)
আমি : হুম হা করো আমি খাইয়ে দিই।
তারপরে অনেক কষ্টে কিছুটা ভাত খাওয়াই দিলাম৷ তারপরে ঔষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম৷ সকালে ভাত রান্না করে এনেছি তো তাই ভাত ই খাওয়ালাম৷
তারপরে আংকেলের সাথে এসে একটু কথা বললাম৷ রিয়াকে বসে ভাত বেড়ে দিলাম৷ ওকেও একটু ছোট মানুষি কথা শুনিয়ে দিলাম তাই খেয়ে নিলো৷ কেউ যেন বিশ্বাস করেত পারছিনা যে আন্টি আর আমাদের মাঝে নেই৷
এদিকে কেয়া ২দিন পর থেকে অফিসে জয়েন করতে বলতেছে আবার৷ তাই হ্যাঁ করে দিলাম৷ এই ২দিনে মেঘাকে অনেক বুঝ দিলাম যাতে করে নিজেকে শক্ত রাখতে পারে৷ আর আল্লাহ'র রহমতে আমি পাশও হয়েছি🙂৷ আর একটা বিষয় খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করলাম যে "ও আমাকে ভালোবাসে৷ আর এটা আন্টি জানে৷ ও বলেছে আন্টিকে৷" আমার এমনটা মনে হচ্ছে৷ কারণ এখানে কারো কথা শুনতে চায়না ও আমার কথা ছাড়া৷
কি আর করার ২দিন পর থেকে অফিসে জয়েন করতে লাগলাম৷ আর মন দিয়ে কাজ করতে লাগলাম৷ কারণ যেটার জন্য বিদেশে যাওয়া সেই ফাইলটা আর ১২ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে।
এদিকে আংকেল একটু একটু সুস্থ হতে লাগলো আর এতে সবার মনও অনেকটা ভালো হলো৷ আমি মেঘাকে কাজ করতে বারণ করে দিয়েছি৷ কারণ ওদের সবকিছু দায়িত্ব আমি নিজে নিয়েছি৷ তবে আংকেলের একটা দোকান থাকায় ওদের কোনো সমস্যা হয়না কিছুর ই৷ এখন আমি, মেঘা, আংকেল, রিয়া একসাথেই খাওয়া দাওয়া করি৷ আর মেঘা রান্না করে৷
এদিকে কেয়া আবার আমার সাথে ভালো ব্যবহার শুরু করেছে৷ হয়তো নিজের ভূল বুঝতে পেরেছে৷ যাক আমার তো ভালোই হলো যে আর তেমন অপমানিত হতে হবেনা৷
১১দিন পরে ফাইলের কাজ একদম শেষ৷ এখন শুধু ফাইলটা ওদের দিতে হবে৷ তাহলেই ওর যা আমাদের সাথে ১০বছরের চুক্তি করবে৷ আর ওদের সকল কিছু আমাদের কোম্পানী থেকে নিবে৷
কেয়া আর ওর বাবা ফাইলটা জমা দিয়ে এসে পুরো অফিসে মিষ্টি বিতরণ করলো৷ আর সবার স্যালারি ১হাজার করে বাড়তি করল কিন্তু আমার তো অন্য হিসাব এখন৷ কারণ কেয়া আর অপমান করেনা৷ অনেকটা বউ বউ ভাব চলে এসেছে ওর মধ্যে🤗৷ তাই আমার প্রমোশোন হলো+স্যালারিতে ৭হাজার টাকা যোগ হলো৷ টাকায় ছিনিমিনে করে মোর 🤗🤗
পুরো ২মাস পরে৷
রাত এখন ১১টা বেজে ৪৫মিনিট৷ আমি আমার নিজস্ব বাসাতে আছি৷ মানে ঢাকা না কিন্তু৷ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ছোট্ট একটা শহরে আমার বাসা৷ সেখানে পরিবারের কাছে৷
আমি আমার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি৷ ভেতরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না৷ কারণ ভেতরে আমার বউ আছে৷ আজই বিয়ে করলাম আর আজকে বাসর রাত তাই ভয় করছে ভেতরে যেতে৷ তবুও এক চামুচ সাহস💪 বুকে নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে গেলাম........
#অফিসের_দোমাগি_বস_পর্ব_১১
#Officer_Demagi_Boss_Part_11
#banglastory143
♦♦♦
♦♦
♦
চলবে...............................
লেখার ভূল ক্ষমার চোখে দেখবেন কিন্তু😘😘
বিঃদ্রঃ না বুঝে এখনই কেউ মাথার চুল ছিড়েন না৷ আগে পরের পর্ব পড়েন তারপরে 😇
No comments