জাফরিন - পর্ব-০৬ | Jafrin - Part-06
গল্প | #জাফরিন 💫
পর্ব | ০৬
লেখক | আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

আহিন বাহিরের বেঞ্চিতে এসে বসল, চোখ বুজে বড় একটা নিঃশ্বাস নিল। অনেকদিন পর শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে, ঘুমটাও ভালো হয়েছে।
#জাফরিন_পর্ব_০৬
#jafrin_part_06
#https://banglastory143.blogspot.com/
কক্সবাজারের একটা রিসোর্টে উঠেছে সে। এখানে জাফরিনের ভয়ে তাকে জড়সড় থাকতে হয়না ভেবেই মন টা হালকা হল। অবশ্য বাড়ির সবার জন্য একটু খারাপ লাগছে, সবাই নিশ্চয়ই অনেক টেনশান করছে। বাসে উঠেই ফোনটা বন্ধ করে দিয়েছিল।
আহিন উঠে সুইমিংপুলের ধার ঘেষে হাটতে লাগল, টলটলে পানি দেখে সাঁতার কাটতে ইচ্ছে হচ্ছে।
এই রাতের বেলায়ও সুইমিংপুলে নামার ইচ্ছে সংবরণ করতে পারলনা সে, স্লিভলেস গেঞ্জি আর থ্রি কোয়ার্টার পড়ে নেমে গেল।
সাঁতার কাটতে কাটতে আহিনের মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, অফিসে যোগাযোগ করে এখানে ট্রান্সফার হয়ে যাবে। আর কখনোই বাড়িমুখো হবেনা। জাফরিনের কাছে আর কিছুতেই ফিরবেনা।
হঠাৎ কেউ তার ঘাড় ধরে কয়েকবার পানিতে চুবানি দিল। চুবানির ঠেলায় দু-একবার আহিনের নাকে-মুখে পানি ঢুকে পড়ল। শেষবারের চুবানিতে কিছুক্ষণ তাকে পানির নিচে চেপে ধরে রাখল।
আহিনের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল তার মনে হচ্ছিল এখনি বোধহয় সে মরে যাবে। কিন্তু আল্লাহ সহায়, এর আগেই হাতটা তাকে ছেড়ে দেয়।
আহিন পানির উপর মাথা তুলে ঘন ঘন দম ফেলতে থাকে। একটু স্বাভাবিক হয়ে পিছনে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠে। "আপনি!!!"
জাফরিনকে দেখে অবাক হয় আহিন। জাফরিন পানিতে শোয়ার স্টাইলে ভেসে আছে। জাফরিন শাড়ির আচল দিয়ে আহিনের মুখ বরাবর এক ঝাপটা মারে।
"বুদ্ধু, কি ভেবেছিস? পালিয়ে গেলে আমি তোকে খুজে বের করতে পারব না! হি হি হি। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তুই এখনো কিছুই জানিসনা। বাড়ি চল আমার সাথে।"
আহিন রেগে গিয়ে বলল, "আমি কোথাও যাবনা। আপনি এখান থেকে চলে যান!"
জাফরিন ভ্রু কুচকে আহিনের দিকে চোখ গরম করে তাকাল। তারপর আহিনকে কাধে তুলে নিয়ে বলে,
"ভালো কথায় কাজ হবে না জানতাম। আমাকেও তুমি চিনোনা বাপু।"
#জাফরিন_পর্ব_০৬
#jafrin_part_06
#https://banglastory143.blogspot.com/
আহিন গলা ছেড়ে চিৎকার করতে লাগল। জাফরিন বিরক্ত হয়ে আহিনের মাথায় খুব জোরে একটা গাট্টা মারল। আহিন নিস্তেজ হয়ে মুখ থুবড়ে জাফরিনের কাধে পড়ে রইল।
জাফরিন কিছুটা দূরত্বে বসে আপেল কাটছে, আহিন গম্ভীরমুখে সেদিকে তাকিয়ে আছে৷ জাফরিন তাকে জোর করে বাড়িতে তুলে নিয়ে এসেছে। এই মেয়েটা থেকে নিস্তার পেতে এতকিছু করল, কিন্তু শেষ রক্ষে কিছুতেই হলনা।
আপেলগুলো কেটে সাজিয়ে আহিনের সামনে রেখে বলল~
"এগুলো খেয়ে নে।"
"আপনার সাথে আমার থাকা সম্ভব নয় আর। আমি আপনাকে ডিভোর্স দিতে চাই।" একনিঃশ্বাসে কথাটা বলল আহিন। জাফরিন দু-সেকেন্ড আহিনের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল "সেটা আবার কি!"
"আমি আপনাকে তালাক দিতে চাই।"
জাফরিন একলাফে আহিনের কোলে উঠে বসে বলল,
"সেটা এই জীবনেও হচ্ছেনা আর কখনো হবেওনা। তুই কবুল বলে সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে গেছিস।"
আহিন জাফরিনকে সরিয়ে দিয়ে বলল~
"কিসের কবুল! কিসের বিয়ে! একটা পরীর সাথে কখনো মানুষের বিয়ে হওয়া সম্ভব?"
একটু থেমে আবার বলল~
"আমার তো মনে হয় আপনি পরী ও নন। আপনার আচার-আচরণ সবই পেত্নী-শাকচুন্নির সাথে মিলে। আজীবন পরীদের সম্পর্কে যা শুনেছি আপনি সম্পূর্ণ বিপরীত।"
জাফরিন একটু চুপ থেকে হেসে হেসে বলল,
"আমি পরী হই বা পেত্নী, তোর আমার সাথেই থাকতে হবে।" বলে জাফরিন রুমের বাহিরে বেরিয়ে গেল।
আহিন রাগে নিজের চুল ছিড়তে লাগল, এসব সহ্য করা তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছেনা। এর থেকে পালিয়ে বাঁচা অসম্ভব বটে, যেভাবে হোক একে তার জীবন থেকে তাড়াতে হবে। নাহলে আহিন নিজেই এর অত্যাচারে মরে যাবে।
মিনিটেই জাফরিন ফিরে এসে আপেলের প্লেট হাতে নিয়ে বলল, "তোকে বলে কিছু করানো যায়না।"
বলেই আহিনের গাল চেপে ধরে মুখে আপেলের টুকরো ঠেসে দিল। আহিন বেশ ব্যথা পাচ্ছিল, সে রেগে গিয়ে জাফরিনকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে চলে এল।
রিফাত আহিনের পিঠে চাপড় দিয়ে বলল,
"এত ভাবিসনা।"
#জাফরিন_পর্ব_০৬
#jafrin_part_06
#https://banglastory143.blogspot.com/
"ভাববনা? এই মেয়ে আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। একে যতক্ষণ না আমার জীবন থেকে না বিদায় করতে পারি আমার শান্তি হবেনা।"
"তুই সবকিছু মুখ বুজে কেন সহ্য করিস! তুই চুপ করে আছিস দেখেই ওই পেত্নীর এত বাড় বেড়েছে। শোন, জ্বীন-পরী উলটো মানুষকে ভয় পায়, কিন্তু যখন দেখে ওদের কে মানুষ ই ভয় পায় ওরা সেই সুযোগ নেয়।
তুই আজকেই জোর গলায় এসবের ব্যাপারে কিছু বল। দরকার হলে বাড়ীর লোকদের জানা।"
"তাতে যদি কাজ না হয়!"
"তাতে কাজ না হলে হুজুর-ওঝা ডেকে এটার ব্যবস্থা করবি। এখন শান্ত হ, আর যা বলেছি তা কর।"
আহিন বাসায় ফিরে দেখে জাফরিন নিচু গলায় অহনাকে বেশ বকাঝকা করছে। কি নিয়ে বকছে সেটা ঠিক বুঝতে পারলনা।
আহিন এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে বাড়ীর সবাইকে খুজল কিন্তু মনে হল বাসায় কেউ নেই।
আহিনের মাথায় প্রচন্ড রাগ উঠে গেল।
"অহনা, ও তোকে বকছে কেন? আর বাড়ীর সবাই কই?" আহিনের কথা শুনে জাফরিন বকাঝকা বন্ধ করে চুপ হয়ে গেল।
অহনা ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল,
"মাকে কেউ ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে, সবাই মাকে নিয়ে হসপিটালে গেছে। ভাবী আমায় কেন বকছে আমি জানিনা ভাইয়া!"
আহিনকে জাফরিনের হাত টেনে রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর জাফরিনের গালে সজোড়ে একটা থাপড় দেয়। জাফরিন হতবাক হয়ে আহিনের দিকে তাকিয়ে রইল। আহিন চোখ গরম করে বলল,
#জাফরিন_পর্ব_০৬
#jafrin_part_06
#https://banglastory143.blogspot.com/
"তুই আমার মাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছিস তাইনা?"
"আমি কেন ফেলতে যাব!"
"চুপ, তুই ই ফেলেছিস। আমার উপরের রাগ তুই আমার মা-বোনের উপর ঝাড়ছিস সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। আমার ই ভুল তোকে ভয় পেয়ে চুপ করে ছিলাম, আর তুই সেটার সুযোগ নিয়ে আমার আর আমার পরিবারের ক্ষতি করার জন্য ওত পেতে আছিস।
কিসের এত রাগ তোর আমাদের উপর? কিসের জন্য বিয়ে করে পড়ে আছিস এখানে!" জাফরিন চোখ বড় বড় করে আহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে, সে আহিনের এমন আচরণে প্রচন্ড বিস্মিত হয়ে গেছে।
আহিন জাফরিনের হাত ধরে বলল,
"অনেক সহ্য করেছি আর নয়! এক্ষুণি তুই এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি, আর জীবনে এই বাড়ি মুখো হবিনা। যদি এখানে তোকে দেখি তাহলে হুজুর ডেকে ওকে ঝেটিয়ে বিদায় করব।"
বলে জাফরিন হাত ঝটকা মেরে ছুড়ে দিয়ে আহিন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। আহিনের দাদা-বাবা, কাকীরা এখানেই আছে। মায়ের অবস্থা এখন অনেকটা শংকামুক্ত জেনে আহিন কিছুটা আশ্বস্ত হয়।
রাতে আর বাড়ি ফিরেনি কেউ, সকালে আয়শা খানম কে হস্পিটাল থেকে রিলিজ করে বাড়ি ফিরে।
আহিন নিজের রুমে ঢুকতে যাবে এমন সময় আয়শা খানম ছেলেকে ডাকে। ডাক শুনে আহিন মায়ের কাছে বসে।
"মা হয়ে নিজের ছেলের জীবনটা নিজের হাতেই শেষ করে দিলাম।"
"এসব কেন বলছো মা?"
"তোর বউ এত খারাপ জানলে কখনোই তাকে এই বাড়ীতে নিয়ে আসতামনা। আমি বেশ বুঝতে পারছি এই মেয়ে তোর জীবন ও জাহান্নাম বানিয়ে ছেড়েছে।"
"ওসব ছাড়ো। তুমি ছাদ থেকে পড়লে কিভাবে?"
"জাফরিন ঠেলে ফেলে দিয়েছে।"
কথাটা শুনে আহিন কিছুটা বিস্মিত হয়, পরক্ষণেই স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
"তোমাকে ফেলে দিয়েছে!"
#জাফরিন_পর্ব_০৬
#jafrin_part_06
#https://banglastory143.blogspot.com/
"হ্যা, দুপুরবেলায় আমি ছাদে কাপড় দিতে গিয়ে দেখি ও চুল ছেড়ে ছাদের কিনারে বসে বাটিভর্তি হাসের মাংস হাতে নিয়ে হাড় চিবাচ্ছে। অল্পকিছুটা হাসের মাংস আমি শুধু তোর দাদার জন্য রান্না করেছিলাম, বাকি সবাই তো এলার্জির ভয়ে খায়না। ওই সবটুকু সে নিয়ে বসে বসে খাচ্ছে, এই নিয়ে কিছু বলতেই আমাকে ঠেলে ছাদ থেকে ফেলে দিল। ভাগ্য ভাল নিচে তোর দাদা খড় শুকাতে দিয়েছিল তাই বেশী খারাপ কিছু হয়নি।"
আহিন আর বসলনা, ভীষণ রাগ হচ্ছে ওর। জাফরিনকে আজ কয়েক ঘা লাগিয়ে শান্ত হবে সে। ছুটে রুমে এসে জাফরিনকে ডাকতে লাগল আহিন। রুমে কেউ নেই, কাল রাতে যেমন দেখেছিল তেমন ই আছে সব।
জাফরিনক্র ডাকতে ডাকতে বাহিরে বেরিয়ে আসে সে। অহনা ছুটে এসে বলল, "ভাবী তো বাড়ীতে নেই।"
"কোথায় গেছে?"
"সেটা জানিনা। কাল রাতে তুই বেরিয়ে যাওয়ার পর আর দেখিনি।"
আহিন চুপচাপ রুমে ফিরে আসে। আপদ নিজে থেকে বিদায় হয়েছে ভেবে অনেকটা শান্তি পায়। এমনটা হবে জানলে অনেক আগেই জাফরিনকে কড়া করে কথা বলে বিদায় করত। এত অত্যাচার-যন্ত্রণা সহ্য করতে হতনা।
#জাফরিন_পর্ব_০৬
#jafrin_part_06
#https://banglastory143.blogspot.com/
জাফরিনের চলে যাওয়ার সংবাদে আহিনের বেশ উৎফুল্লবোধ করতে লাগল.....।
🔰 🔰 🔰 চলবে 🔰 🔰 🔰
No comments