গল্প | উড়ান মেঘের দেশে - পর্ব-১৮ | Oran megher deshe - Part-18

লেখিকা-ওয়াসিকা নুযহাত 


অফিস কক্ষটি প্রভাত বেলার নবীন সূর্যের আলোক ছটায় উদ্ভাসিত হয়ে আছে। মাঝ বরাবর একটি ডিম্বাকৃতির মেহগনি কাঠের ভারী টেবিল। টেবিল সংলগ্ন রিভলভিং চেয়ারে ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বসে

আছে সমুদ্রকুঞ্জের সম্ভাব্য যুবরাজ তুর্যয় হংসমণি। গায়ে আকাশি নীল শার্ট। মাথায় আর্মিদের মতো ছোট ছাটের চুল। আজ ভোরে নাপিত এসে চুল কেটে দিয়ে গেছে। দাড়ি কামায়নি। ফর্সা কান্তিমান গালে গুঁড়িগুঁড়ি কালচে দাড়ির আস্তর। ঘন ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত। চোখে একাগ্রতা। এই মূহুর্তে তার সারা মুখে শাসক সুলভ গাম্ভীর্য বিদ্যমান। সামনে বসা কর্মচারিরা একটু তটস্থ হয়ে আছে। তুর্যয়ের মেজাজ বোঝা ভারী কষ্টকর কাজ। হাসতে হাসতে হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে যায়। তার ব্যক্তিত্ব অয়স্কান্তমণির মতো আকর্ষনীয় বটে, তবে ভীষণ অপ্রত্যাশিত এর প্রকাশ। কখন কী করে বসে তা ধারণার অতীত। বিস্ময়, ভাললাগা, ভয়, ভক্তি এই সমস্ত অনুভূতির বিচিত্র সংমিশ্রণ ঘটে এই যুবকের সংস্পর্শে এলে।  


যুবরাজের ব্যক্তিগত দপ্তরের কর্মী দলটি শিক্ষা দীক্ষায় পারদর্শি। মেধাবী দলটির সাথে মেহেরুকেও সভায় উপস্থিত হতে হয়েছে। একটি কালো রঙের সিল্ক শাড়ি তার পরনে। কালো পোশাকে যেন মোমের মতো মসৃণ ত্বক আরও বেশি রকম খুলে গেছে। তারার মতো জ্বলজ্বল করছে এই রমণী সারা ঘর আলোকিত করে। তবে তার মুখখানা বড় ম্লান। সে খেয়াল করে দেখেছে শিক্ষাগত যোগ্যতা জানার পর থেকে সহকর্মীরা কেউ তার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে না। একটু আগে চায়ের টেবিলে হাসি তামাশার হর রা উঠেছিল। মেহেরুর সেখানে ডাক পড়েনি। সহকর্মীদের আচার আচরণে মনে হয়েছে মেহেরু এই অফিসের ঝাড়ুদার। চায়ের টেবিলে নিমন্ত্রণ পাবার মতো যোগ্যতা তার নেই। এই আচরণে অবশ্য খুব একটা কষ্ট হয়নি। অবহেলা পেতে পেতে অভ্যাস হয়ে গেছে। এসব এখন আর গায়ে লাগে না। তবে রাগ হচ্ছিল তুর্যয়ের ওপর। গুরুত্বপূর্ণ লোকজনদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভা হচ্ছে। এখানে মেহেরুর মতো অযোগ্য অপ্রয়োজনীয় মানুষকে অযথা হেনস্থা করার জন্য ডেকে আনা কেন? ছেলেটা তাকে ক্রমাগতভাবে অপদস্ত করে কী আনন্দ পাচ্ছে? 


রাজ্যাভিষেককে কেন্দ্র করে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। উপদেষ্টাদের মতামত সাপেক্ষেই শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং গণপরিবহন সংক্রান্ত খাতে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করা হবে রাজকোষ থেকে। যে মেয়েটি তুর্যয়ের সাথে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছে সে খুব বেশিদিন এই চাকরি করবে না। বিলেতের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিসার্চার পদে ডাক পড়েছে তার। সেখানে উপার্জন কম হলেও গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা আছে। সমুদ্রকুঞ্জে গবেষণার পরিসর সীমিত। আজ সকালেই মেয়েটির চাকরি ছেড়ে দেবার তথ্য শুনে তুর্যয়ের মাথায় নতুন পরিকল্পনা এসেছে। তার ইচ্ছে হয়েছে কিছু বিজ্ঞান প্রকল্প হাতে নেয়ার। এর আওতায় পুরনো গবেষণাগার আধুনিকায়ন করা হবে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে অত্যাধুনিক সংবেদনশীল যন্ত্র আমদানি করা হবে। 


তুর্যয় ল্যাপটপের পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে আনল সামনে বসা সভাসদদের ওপর। একটু গম্ভীর ভাবে বলল, ‘বিজ্ঞান প্রকল্প সম্পর্কে আপনাদের মতামত চাই। দুদিনের মধ্যে খসড়া প্রতিবেদন দেবেন। চূড়ান্ত পরিকল্পনার পর আমি ন্যাশনাল সাইন্স ইন্সটিটিউটের সাথে আলাপ করব। এছাড়াও অন্যান্য কোন কোন খাতে বাজেট লাইন ঠিক রেখে বিনিয়োগ করা যায় সে ব্যাপারে ভেবে দেখুন।’ একটু থেমে সে আবার বলল, ‘কারো কোনও আইডিইয়া আছে?’ 


সামনে বসা ছেলেমেয়েগুলো তাৎক্ষণিক ভাবে উত্তর দিল না। সবাই নিশ্চুপ। তুর্যয় সুযোগ বুঝে মেহেরুকে প্রশ্ন করল, ‘আপনার কী মতামত?’  


মেহেরু আকস্মিক প্রশ্নটা শুনে একটু থতমত খেয়ে গেলো। উপস্থিত সকলেই এই মূহুর্তে তার দিকে চেয়ে আছে। প্রত্যেকের চোখে বিস্ময়। বাজেট পরিকল্পনায় রাজপুত্র একজন কলেজ পাশ স্বল্প শিক্ষিতা নারীর মতামত জানতে চাইছে এমন অদ্ভুত ঘটনা যেন পৃথিবীতে এর আগে কখনও ঘটেনি। এই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বড়জোর ফ্রন্ট ডেস্কের রিসিপশনিসট হওয়া যায়। রাজ দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ সভায় মতামত দেয়া যায় না। তুর্যয়ের তাকানোর ভঙ্গিটা অবশ্য অন্যরকম। তার মর্মভেদি চোখ মেহেরুর মুখের ওপর এমন গাম্ভীর্যপূর্ণ ভাবে ন্যাস্ত হয়ে আছে, যে এই দৃষ্টিপাত দেখে যে কেউ বুঝবে সম্মুখের রমণীটির বক্তব্য তার কাছে অত্যন্ত মূল্য এবং গুরুত্ব বহন করে। মেহেরু অত্যন্ত ক্ষীণ এবং আত্মবিশ্বাসহীন কণ্ঠে বলল, ‘পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করা যায়। ‘ 


-‘বিস্তারিত বলুন।’ কুনুই টেবিলে ঠেকিয়ে গালে হাত রেখে ঠাণ্ডা ভাবে বলল তুর্যয়। 


-’না মানে …’ প্রথমে একটু ইতস্তত করে মেহেরু। তারপর ওই ধূসর দুটি চোখের ওপর সরাসরি চোখ রেখে বলে, 


-’সমুদ্রের ধারে কিছু বিলাসবহুল রিসোর্ট করা যায়। শহরতলিতে থাকার ভালো ব্যাবস্থা আছে কিন্তু আমার ধারণা বিচ সাইড রিসোর্ট হলে টুরিস্টরা আরও বেশি আকৃষ্ট হবে। এছাড়া … আমার অনেকদিনের স্বপ্ন সমুদ্রকুঞ্জে একটা সি অ্যাকুরিয়াম হবে। মাননীয় রাজপুত্রের কাছে নিবেদন থাকবে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার জন্য। আমাদের সমুদ্রকুঞ্জ অনেক সুন্দর! বাইরের দেশ থেকে প্রায় সারা বছরই কম বেশি পর্যটকরা আসা যাওয়া করে। তাদের মূল আকর্ষণ থাকে রাজকীয় স্থাপনা দর্শন করা। সমুদ্র সৈকতে কিছু আধুনিক পর্যটন আকর্ষণ তৈরি হলে ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা আরো বেড়ে যাবে। এর পাশাপাশি আমাদের বন বিভাগেও পর্যটকদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো উচিত। মাইলের পর মাইল অরণ্য পড়ে আছে পরিত্যক্ত ভাবে। এমন ব্যবস্থা করা উচিত যাতে পর্যটকরা চাইলেই গভীর জঙ্গলে নিরাপত্তার সাথে ভ্রমণ করতে পারে। বন্য প্রানী দেখতে পারে। সেক্ষেত্রে জঙ্গলের মধ্যে কিছু ওয়াচটাওয়ার তৈরি করা যায়।’ অনেকগুলো কথা একসাথে বলে থামল মেহেরু। কে জানে উল্টাপালটা কিছু বলে ফেলেছে কিনা। সবাই কেমন ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে তার দিকে। তুর্যয়ের চোখে মুগ্ধতার আবছা রেশ পড়েছিল। কপালে প্রসন্নতার ভাঁজ। কিন্তু মুখ থেকে গাম্ভীর্যের ছায়াটা তখনও সরেনি। সে নিঃশব্দে ঠোঁট বাঁকিয়ে মাথাটা একটু অদ্ভুত কায়দায় নাড়ালো একবার। তারপর উপস্থিত কর্মচারিদের উদ্দেশ্যে মেহেরুকে ইঙ্গিত করে বলল, 


-’আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে ইনি কিন্তু একজন জিনিয়াস! আমার টিচার ছিলেন একসময়। '  


এটুকু বলে তুর্যয় কিয়ত ক্ষণ বিরতি নিল। তাকালো মেহেরুর দিকে। তাকাতেই মেহেরু চট করে মুখ নিচে নামিয়ে ফেলল। তার বুকটা প্রবল ভাবে কাঁপছে। বিস্ময়, সংকোচ এবং গর্ব মিলেমিশে এক আশ্চর্য অনুভূতির বুদবুদ তৈরি হয়েছে হৃদ মন্দিরে। উপস্থিত কর্মচারিদের মুখে খেলছে থমকানো ভাব। রাজকুমারের কথা যেন তারা বিশ্বাস করতে পারছে না। তাদের মুখ ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে, এই মাত্র পৃথিবীর কোন চিরায়ত সত্যের সূত্র পালটে দেয়া হয়েছে।


তুর্যয় বলল, ‘ইনি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা! তবে এখন আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের। ছাত্র- শিক্ষকের সম্পর্কর চাইতে আরো বেশি মজবুত এবং গভীর।’ তুর্যয় থামল আবার। তারপর মেহেরুর দিকে চেয়ে ভারী বিনীতভাবে বলল, ‘তাই না?’ 


মেহেরু কিছু বলতে পারল না। বুকের ভেতর বড্ড দাপাদাপি! তার কেন যেন কান্না পাচ্ছে খুব। জীবনে কেউ কোনদিন এতটা সম্মান দেয়নি। সুখের মতো কী যেন একটা বেজে যাচ্ছে মনের তারে। আবার একই সাথে ভীষণ ভয়ও হচ্ছে। ভয়টা শুধু সমাজের মানুষকে নিয়ে নয়, আজকাল সে নিজেকেও নিজে ভয় পেতে শুরু করেছে। গতরাতে রিয়ার মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিল। রিয়া বরফ শীতল গলায় প্রশ্ন করেছিল, ‘কী কাজ ছিল রাজকুমারের সাথে আপনার?’ 


মেহেরু এতটাই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল যে অনেকক্ষণ কোনও কথা বলতে পারল না। হা করে চেয়ে রইল শুধু সামনে দাঁড়ানো মেয়েটির দিকে। একটা সময় আমতা আমতা করে বলল, ‘কালকের স্কেজিউল নিয়ে কথা হচ্ছিল।’ 


উত্তরটা দিয়েই মেহেরু ছুটে পালিয়েছিল জায়গাটা ছেড়ে। তারপর সারারাত ঘুম এলো না। তুর্যয়ের মুখটা মনে পড়লেই তার বুক মোচড় দেয়। চোখ জ্বালা করে। সে ভেবেই পাচ্ছে না গত কয়েক বছর এই ছেলেটাকে না দেখে কীভাবে বেঁচে ছিল? শুধু যন্ত্রের মতো কাজ করে গেছে। নিজের মনের দিকে একটাবার চোখ মেলে তাকায়নি। সুযোগই হয়নি! আজ এতদিন পর মনের যান্ত্রিক আচ্ছাদন তুলে যখন নজর ভরে দেখল ভেতরটা, তখন আবিষ্কার করল, ওখানে একটিমাত্র নাম বড় বড় হরফে লেখা আছে সযত্নে।


তুর্যয়, তুর্যয়, তুর্যয়! 


------------- 


মেজো কুমারের মহল সংলগ্ন হেঁশেলখানাটি অত বিস্তৃত নয়। দুজন মাত্র বাবুর্চি নিয়োজিত আছে। গত তিনদিন যাবত তারা কিছুই রান্না করেনি। রাজকুমার জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর খাবারে রুচি নেই। রাশিকা যে রান্নার জন্য অনুমতি প্রাপ্ত এই কথাটা অন্যান্য বাবুর্চিদের বিশ্বাস করাতে বেশ বেগ পেতে হলো। রাশিকা অবশ্য কাউকে তেমন একটা পাত্তা দিল না। হইহই রইরই করে তিন চার পদ রান্না করে ফেলল। রান্না করতে পারলেই যেন সে বেঁচে যায়। রান্না তার জীবনের একমাত্র মুক্তির দিশারি।

অজয়ের সাথে ছোট দুই ভাই বোন দেখা করতে এসেছিল। ওরা যেতে না যেতেই একগাদা বন্ধুবান্ধব এসে হাজির। প্রতি অপরাহ্ণেই এই প্রাসাদে লোকজনের সমাগম হয়। গত দু তিনদিনের বিরতির পর আজকে যেন সমস্ত ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সংকল্প করেছে অতিথিরা। অজয় জানিয়েছে তার খেলাধুলা বা আড্ডায় আজ মন নেই। তবুও আগত অতিথিদের প্রস্থানের কোনও লক্ষণ দেখা গেলো না। অজয় দুপুরবেলা থেকেই নিজ কক্ষে অবস্থান করছে। বিরক্ত না করার কঠিন নির্দেশ দিয়েছে। ঘরে বসে প্লে স্টেশনে গেম খেলেছে লাগাতার অনেক ক্ষণ। এক পর্যায়ে টের পেয়েছে শরীর অতিশয় দুর্বল। প্রতিটি কোষ এবং শিরা উপশিরা খাদ্য চাই! খাদ্য চাই! বলে সরোষে দাবি জানাচ্ছে। 


কিছু কুকিজ আর চকলেট মজুত ছিল ঘরে। মুখে দেবা মাত্র বমি করে ফেলল। মাথা ঘুরছে। শরীরে অসহ্য ছটফটানি। আর বক্ষ জুড়ে কীসের যেন ডহর তৃষ্ণা! মনে পড়ছে সেদিন জঙ্গলে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা। নিহত হরিণটার রক্ত শুষে নিতেই শরীরের সব যন্ত্রণা থেমে এসেছিল, নিভে গিয়েছিল ক্ষুধার জ্বালা। নিস্তরঙ্গ দেহে যেন নতুন করে প্রাণের স্ফুরণ ঘটেছিল। তবে কি এই তৃষ্ণা রক্তের তৃষ্ণা? সে কি মানুষ থেকে রক্তচোষায় রূপান্তরিত হচ্ছে ধীরেধীরে? এটা কী করে সম্ভব? এমন অমূলক ঘটনাও পৃথিবীতে ঘটে? কুসংস্কারে অজয় বিশ্বাসী নয়। সে বেশ শক্তপোক্ত মনের মানুষ। তাবৎ দুনিয়ার চোখ রাঙ্গানি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবার সাহস রাখে। কিন্তু আজকে তার সাহসের পাল্লার ওজন কমেছে। ভয় মিশ্রিত তীব্র বিষাদে ভরে গেছে বুক! পাশাপাশি একটি সত্য উপলব্ধি ঘন কুয়াশার ভেতর থেকে যেন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। সে হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে মানুষের জীবনে একজন প্রকৃত বন্ধু কতটা প্রয়োজন। আশেপাশে যারা আছে প্রত্যেকে তাকে রাজপুত্র হিসেবে সমীহ করে। এতটা সময় একত্রে কাটাবার পরেও এদের কারো সাথেই হৃদ্যতা গড়ে ওঠেনি। জীবনে প্রথমবার সে একাকীত্বের নির্মম অস্তিত্ব প্রবল ভাবে টের পাচ্ছে। কেবলই মনে হচ্ছে এই দুর্বিষহ অলীক অভিজ্ঞতার কথা কাউকে খুলে বলা উচিত। এটা ভাবতে গিয়ে ভাই-রাজার মুখটাই বারবার ভেসে উঠছে চোখের সামনে। কিন্তু তিনি মাত্র দেশে ফিরেছেন। কাল বাদে পরশু তার রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠান। সারা দেশ এই একটা মানুষের দিকে চোখ মেলে চেয়ে আছে। তার কত কাজ কত দায়িত্ব! এমন গুরুতর সময়ে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে তার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটানো উচিত হবে না।


এদিকে রাশিকা রান্নাবান্না শেষ করে অজয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রাসাদের বাইরে অগণিত ছেলেমেয়ের ভিড়। তারা নিজেদের মধ্যে গান বাজনা করছে, খেলাধুলা করছে। বেশ উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করছে চারপাশে। রাশিকা অজয়কে কোথাও খুঁজে পেলো না। একজন দেহরক্ষী নিযুক্ত করা হয়েছে। রাশিকাকে পাহারা দেয়া এবং পালাবার চেষ্টা থেকে নিরস্ত করাই মূলত এই দেহরক্ষীর কাজ। অল্পবয়স্ক যুবাপুরুষ। নজর খারাপ। রাশিকার মেজাজ থেকে থেকে বিগড়ে যাচ্ছে। এর মাঝে কয়েকবার সে হুমকি দিয়েছে, ‘আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? অন্যদিকে তাকান। রাজপুত্রকে বলে দেব কিন্তু! ‘


আগে এরকম হতো না। কিন্তু গতরাতের দুর্ঘটনার পর থেকে পুরুষ মানুষ সম্পর্কে একটা অন্যরকম ভীতির সঞ্চার হয়েছে তার মনের ভেতর। ডাইনিং হলে খাবার সাজিয়ে একটা চেয়ারে বসে আছে সে। খানিক দূরে বডিগার্ড দাঁড়িয়ে আছে। তার পরনে আনুষ্ঠানিক পোশাক, হাতে বন্দুক। মুখ পাথরের মতো শক্ত আর চোখ ইতরের মতো নোংরা। গা ঘিনঘিন করছিল। সময় এগিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব গতিতে। অজয়ের দেখা মিলল না। একটা সময় রাশিকা নিরুপায় হয়ে বডিগার্ডকে বলল, ‘রাজকুমারকে একটু খবর দিন প্লিজ। মনে হয় তিনি ভুলে গেছেন আমার কথা।’

বডিগার্ড গমগমে কঠিন স্বরে বলল, ‘তাকে বিরক্ত করা যাবে না। নিষেধ আছে।’


অগত্যা চুপচাপ অপেক্ষার প্রহর গুণতে হল। বেলা পড়ে এলো একসময়। রাশিকা নিজের জন্য বরাদ্দ ঘরে ফিরে এলো। তার বুকটা অদমনীয় কষ্টে ভারী হয়ে এসেছে। প্রবল শূন্যতা তৈরি হয়েছে। খাঁচা বন্দি পাখির মতো ছটফট করে ঘুরে বেড়াতে লাগল সে পুরো ঘরময়। চক্ষু দুটি উদ্ভ্রান্ত। মাথার চুল উষ্কখুষ্ক। কী করে এই বন্দি দশা থেকে মুক্তি পাবে? কী করে ফিরবে নিজের দেশে? অজয়ই বা কেন সারাদিনের জন্য লাপাত্তা হয়ে গেলো? রাজপুত্ররা এরকমই হয় বুঝি? মানুষের ইমোশনের কোনও দাম নেই তাদের কাছে? ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল কে জানে! হঠাৎ একটা অনাহূত শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে দেখল চারপাশ নিকষ কালো আঁধারে ঢেকে আছে। উঠে বসার আগেই একটা কণ্ঠস্বর অস্ফুট ভাবে কানে প্রতিধ্বনির মতোএসে লাগল, ‘আমি ইন্দিরা, তুমি আমাকে মুক্তি দেবে?’ হৃৎপিণ্ডটা তড়াক করে কণ্ঠনালীতে পৌঁছে গেলো। মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে গেলো কনকনে শীতল ভয়ের স্রোত। ঝপ করে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। হাওয়ায় জানালার পর্দা উড়ছে। বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকার নিরবচ্ছিন্ন ডাক। আবছা ভাবে সমুদ্রের গর্জন ভেসে আসছে। সেই সাথে বাঁশির করুণ সুর। এতো সুন্দর করে কে বাঁশি বাজায় গভীর রাতে?


রাশিকার মনে হলো এই অন্ধকার ঘরে আর এক মূহুর্ত অবস্থান করলে সে নেহাত মরে যাবে।দৌড়ে ছুটে এলো দরজার কাছে। ভাগ্যিস দরজায় তালা নেই। খুলতেই ক্যাক করে বিশ্রী শব্দ হল। বিশাল লম্বা করিডোরে একটা ফিকে আলো জ্বলছে। সেই আলোটা যেন আরো বেশি রকম ভূতুড়ে করে তুলেছে চারপাশকে। উঁচু দেয়ালে টাঙ্গানো ছবিগুলো রাশিকার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে। একটি মূল্যবান বেলজিয়ান কাচের আয়না লাগানো আছে দেয়ালে। আবছা আলোতে সেই আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়ে নিজেই যেন চমকে উঠল রাশিকা। বুকটা এলোমেলো ভারী নিশ্বাসে উথালপাথাল করছে। কে এই ইন্দিরা? কেন বারবার তার স্বপ্নে এসে হানা দিচ্ছে? প্রথমদিন একটি মেয়ের অবয়ব চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল। আজকে শুধুই কন্ঠস্বর শুনেছে। এই মূহুর্তে কোথাও কেউ নেই। পিনপতন নীরবতার মধ্যে শুধু বাঁশির শব্দ পাক খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন নিশ্চুপ,শত বছরের পুরনো রাজবাড়িতে বুঝি অনায়াসে প্রেতাত্মারা অভিসারে নামে মাঝরাতে। কত কত ইতিহাস এই রাজবাড়ির সাথে জড়িত। কত জীবনের উত্থান হয়েছে, পতন হয়েছে, কত নিরীহ মানুষ অত্যাচারিত হয়েছে! সেইসব অতৃপ্ত প্রেতাত্মারা যে এমন নিষ্কলুষ নির্জনতায় জেগে উঠবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?

রাশিকার একবার মনে হলো মহলে বুঝি শুধু সে ব্যাতীত অন্য কেউ নেই। এরকম ভাবনা মাথায় আসতেই পাগলের মতো ছুটতে লাগল দিক্বিদিক শূন্য হয়ে। একটা সময় আবিষ্কার করল, সে আসলে বাঁশির সুরটাকেই অনুসরণ করছে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। এই মহলের কিছুই চেনে না। এতো গুলো বড় বড় ঘর! অতি পরিচিত লোকেরও রাতের অন্ধকারে ধাঁধা লেগে যাবে। রাশিকা তবুও মন্ত্রমুগ্ধা হয়ে ছুটে চলেছে। বাঁশির সুরটাই যেন তাকে পথ চিনিয়ে নিচ্ছে । এই সুরে কী আছে? কেন ওরকম চুম্বকের মতো টানছে?


সদর দরজাটা খোলা। সামনেই বাগিচা। বাইরে আজ ফুটফুটে জোছনা হয়েছে। নীল আলোয় থইথই করছে চারদিক। বাতাসে কী সুন্দর ফুলের গন্ধ! মেঘের পসরা বসেছে বাগিচার ওপর। নীল রঙের অলীক জোছনায় শ্বেতবর্ণ উড়ান মেঘের নিঃশব্দ বিচরণ প্রকৃতিতে স্বপ্নের মতো এক মিহি স্নিগ্ধতার উদ্রেক করেছে। সমূদ্র ডাকছে। সেই ডাক বহুদূর থেকে হাওয়ায় ভেসে এসে ধাক্কা খাচ্ছে শত বছরের পুরোনো রাজবাড়ির প্রতিটি ইট পাথরে। কাছেই জলের ফোয়ারা। ঝিরঝির শব্দে জল ঝরছে সেই ফোয়ারা থেকে। রাশিকার মনে হলো সে বুঝি বৃন্দাবন চলে এসেছে। তার কপাল ঘর্মাক্ত। শ্বাস পড়ছে বড় বড়। বাঁশির শব্দটায় নেশা আছে। যেকোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষকেও মূহুর্তে বশ করে ফেলতে পারবে এই সুর। হঠাৎ পশ্চিম কোণে বাগান প্রাচীরের পাশে একটি ছায়া দেখতে পেলো। লম্বা চওড়া সুঠাম আকৃতির এক মানুষ পা বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাথাটি ডানদিকে হালকা হেলানো। বাতাসে উড়ছে চুল। হাতে ধরা বাঁশি এমন ভঙ্গিতে বাজাচ্ছে,দেখে মনে হয় ঠিক যেন কৃষ্ণ ঠাকুর! রাশিকার মনে হলো স্বর্গলোক থেকে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ অবতরণ করেছেন মর্ত্যলোকে। তার বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত যন্ত্রণা হতে লাগল। বাঁশির সুরে জ্বলতে লাগল শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। নিশ্বাস এতো ভারী যেন বাতাস নয়, পাথর শুষে নিচ্ছে ফুসফুসে! দিশাহারা হয়ে বাঁশিওয়ালার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল পায়ে পায়ে। ওপাশে বকুলগাছ আর নীহারিকার ঝোপ। ঘাসযুক্ত মাটি নীল রঙের নীহারিকায় সয়লাব। পা বাড়ালে মনে হয় যেন ফুলের গালিচা। 

 

কয়েক পা এগিয়ে যেতেই বাঁশিওয়ালা ঘুরে তাকালো। নীল জোছনার সুষম ফিনফিনে আলোয় রাশিকা দেখতে পেলো একটি সবল চেহারা। ঈষৎ বঙ্কিম তীক্ষ্ণ নাসিকা, নিষ্ঠুর এবং তেজি ওষ্ঠ, দুর্ভেদ্য উগ্র দৃষ্টি সম্বলিত দুটি চক্ষু। এটা সৌন্দর্য কিনা জানে না রাশিকা, কিন্তু কী যেন একটা আছে ওই মুখে। এমন ক্ষুরধার পৌরুষব্যঞ্জক রুপ সে এর আগে কখনও দেখেনি। পূর্নিমার চাঁদের গায়ে এক টুকরো পাতলা মেঘ এসে ভিড়েছে। জোছনা এখন আরও বেশি ফিকে। আধো আলো অন্ধকারে অজয়ের চোখজোড়া রাশিকার সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের মতো বিধুর নরম মুখশ্রীর ওপর স্থিরবদ্ধ হয়ে আছে। বব চুল হাওয়ায় উড়ছে। চোখে নিষ্পাপ বিস্ময়রেখা। চাঁদের হালকা আলোয় টকটক করছে চিবুকের ডিম্পল। টিয়া পাখির মতো লালচে দুটো ছোট্ট ঠোঁট শুকনো, তবুও যেন অনেক বেশি প্রাণবন্ত! 

 

উড়ান মেঘের সাদা আস্তরণের ভেতর ডুবে আছে ওরা। বাতাসে অতীন্দ্রিয় এক স্পর্শ। রাশিকা স্তব্ধ চোখে চেয়ে আছে অজয়ের দিকে। এই মূহুর্তে যেন কোন কথা বলার নিয়ম নেই। কথা বললেই এই সময়টার অলৌকিক মাধুর্য বিনাশ হয়ে যাবে। অজয় বাঁশি বাজানোর কথা ভুলে গেছে। দুচোখে কেমন আবেশের প্লাবন। সে বাঁশি ফেলে দিয়ে দু পা এগিয়ে এলো। কোনো ভূমিকা ছাড়াই রাশিকাকে ভূজবন্ধনে আবদ্ধ করল। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যেন এমনটাই হবার কথা ছিল। পেটের যেমন ক্ষিদে আছে, শরীরেরও তো চাহিদা আছে। চাহিদার উদ্রেক হবা মাত্রই মেটাতে হয়, অজয় ছোটবেলা থেকে এটাই শিখে এসেছে। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো অজয় অত কাছে আসবার পরেও রাশিকা জোর গলায় কোনও প্রতিবাদ করতে পারল না। বুকের ভেতর প্রতিরোধের দেয়ালটা হাতড়ে বেড়াচ্ছিল সে। কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিল না। চাঁদের আলোর মতো স্নিগ্ধতায় মাখো মাখো হয়ে আছে মন। এমন স্নিগ্ধ ভালোলাগা নিয়ে তো প্রতিবাদের কঠোর শব্দ উচ্চারণ করা যায় না। তবুও কণ্ঠ থেকে অসম্মতির একটা চিকন সুর ঠেলেঠুলে উগরে দিতে চাইছে সে। কিন্তু তার আগেই অজয় ওর টিয়াপাখির মতো লাল ঠোঁটে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে ফেলল। রাশিকা নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার প্রাণপণ চেষ্টা করতে গিয়েও পারল না। প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে ওঠার আগেই ভেঙে পড়ল অনায়াসে তাসের ঘরের মতো। কয়েকটা এলোমেলো উষ্ণ চুম্বনের পর অজয় যখন ওকে কোলে তুলে মহলের ভেতর নিয়ে এলো, সিঁড়ি ভাঙতে লাগল নি:শব্দে, তখনও সে কিছুই বলতে পারল না। চুপটি করে বাকশক্তিহীন পুতুলের মতো চেয়ে রইল। অর্ধপরিচিত, দুর্বোধ্য এক প্রখর পুরুষের আশ্লেষে নিজেকে দ্বিধাহীন ভাবে সঁপে দিল। এই মোহময় চাঁদনি রাত যেন তাকে বশ করেছে। এই রাতে বুঝি কোনো কিছুই গর্হিত নয়। সবকিছুই সুন্দর! 


সম্বিৎ ফিরল ভোরের দিকে। খোলা বাতায়ন টপকে সূর্যের আবছা আলো এসে পড়েছে ঘরে। রাশিকা নিজেকে আবিষ্কার করল অজয়ের উন্মুক্ত বুকের ওপর। পুরো ঘটনা বুঝে নিতে খুব বেশি সময় লাগল না। বুঝতেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। গায়ে কাপড় জড়িয়ে নিয়ে সে অজয়ের তামাভ্র পরিপুষ্ট নিটোল হাতের পেশিতে একটা ঘুষি মারল সজোরে। 

 

-’এই রাজকুমার! তুই এত খারাপ কেন?’  

 

অজয়ের চোখে ঘুমের জোয়ার। অর্ধনিমীলিত ঘুমো আঁখি পল্লব মেলে সে নিজেকে দেখতে পেলো রাশিকার ঘরের বিছানায়। তার স্মৃতিপট ঝকঝকে পরিষ্কার। সবটাই মনে আছে। 


বিস্ময় নিয়ে বলল, ‘সমস্যা কী?’ 

 

রাশিকার গলায় দুনিয়ার তেজ, ‘সমস্যা কী তুই জানিস না? বাজে ছেলে কোথাকার!’ 

 

-’তুই তোকারি করছ কেন?’ 

 

-’তো কী করব? হুজুর হুজুর করব?' উত্তেজনায় রাশিকার কপালের রগ ফুলে উঠেছে।

 

অজয় কঠিন অথচ নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল, ‘তুমি তো ডিনাই করোনি। তোমার কনসেন্ট ছিল।’ 

 

-’মোটেও ছিল না।’ 

 

অজয় হাই তুলে বলল, ‘মিথ্যে বলো না।’ 

 

রাশিকা বালিশটা দুহাতে তুলে ধরে পাগলের মতো মারতে লাগল অজয়কে। চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘কী করেছ তুমি? কেন করেছ? কী সর্বনাশ করলে আমার!’ 

 

অজয়ের বিরক্তি তুঙ্গে উঠেছে। সে রাশিকার হাতজোড়া খপ করে খামচে ধরল, 'ইট ওয়াজ আ ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড। নো বিগ ডিল! যা হয়েছে ভুলে যাও। এত বাড়াবাড়ির কী আছে?’  

 

রাশিকা স্তব্ধ চোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ সম্মুখের নিষ্ঠুর, কঠোর, একরোখা তরুণটির দিকে। তারপর চট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘এখুনি চলে যাব আমি।’ 

 

-'শোন, পাগলামো করো না। আর দুটা দিন সময় দাও। মার্ডার কেসটা সল্ভ হয়ে গেলে আমি নিজেই তোমাকে পাঠিয়ে দেব বাংলাদেশে। তোমাকে এখানে বেঁধে রাখার কোনও ইচ্ছে নেই আমার। আজকের খবরের কাগজ জানিয়েছে জঙ্গলে খুঁজে পাওয়া লাশটা কোনো হিংস্র জন্তুর শিকার বলে ধারণা করছে পুলিশ। আশা করি আমরা এই যাত্রায় বেঁচে যাব।' 

 

রাশিকা কী যেন বলার জন্য মুখ খুলল, কিন্তু বলতে পারল না। ঠোঁট কেঁপে উঠল থরথর করে। কন্ঠস্বর রোধ হয়ে এলো কান্নার প্রাবল্যে। 


---------------------- 


---------


এই লেখা কেউ কপি করবেন না। যদি আমার অনুমতি ব্যতীত আমার লেখা কোথাও পোস্ট করা হয় তবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কপি কারীকে আমার লইয়ার সরাসরি লিগ্যাল নোটিশ পাঠাবে।

No comments

Powered by Blogger.