গল্প | অশরীরি প্রেম - পর্ব-০৬

লেখক | সোহেল রানা



শিহাব অবাক হয়ে বলল: ইভা, তুমি!!!!!!



--হ্যা শিহাব, আমি....... অতৃপ্ত হৃদয় নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমার আত্মাটা সারাক্ষণ তোমার কাছেই পড়ে থাকত।



একটু তৃপ্তি পেতে এসেছি, বিশ্বাস কর, অনেক ভালোবাসতাম তোমায়।




তোমাকে যখন চোখের সামনে সাদিয়ার সাথে হাসাহাসি, মাখামাখি করতে দেখতাম,, আমার বুকের ভেতর থেকে প্রাণটা বের হয়ে যেতে চাইত, খুব কষ্ট হত আমার, না পারতাম তোমার কাছে যেতে, আর না পারতাম দূরে যেতে।




এতটা ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমাকে। তুমি তখন মিথ্যে প্রেমের মোহে পড়ে আমার দিকে ফিরেও তাকাতে না। আমার খুব কষ্ট হতো জান?? আমি শুধু পারতাম না বুকের ভেতর থেকে হৃদয়টাকে বের করে তোমার সামনে রেখে বলতে: শিহাব, এই দেখ,, আমার হৃদয়টা সারাক্ষণ তোমারই সাধনা করে।




কিন্তু সেটা সম্ভব ছিলনা। আমার কাছে মনে হতো তখন মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা অনেক বেশি। তাই আমি মৃত্যুকে বেঁচে নিলাম।




একদিন খুব ভোরবেলায়, কেউ ঘুম থেকে জেগে উঠেনি তখনও, আমি তোমার বাসায় গিয়ে জানলা দিয়ে দেখলাম ঘুমন্ত তোমাকে। খুব ইচ্ছে হয়েছিল একবার তোমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে, কিন্তু আমি পারিনি, সেই অধিকারটুকু আমার ছিলনা, শেষবারের মতো তোমাকে দেখে চলে গেলাম।




তারপর বাসায় এসে অনেকগুলো স্লিপিং পিল খেয়ে বিরহের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি নিলাম। আমি মরে গিয়ে প্রমাণ করে দিলাম, অনেক ভালোবাসি তোমাকে শিহাব, অনেক বেশি ভালোবাসি।"




কথাগুলো বলতে বলতে হু-হু করে কাঁদতে লাগল ইভা।শিহাব জিজ্ঞেস করল:- কিন্তু তুমি এখন কেন এসেছ?



ইভা বলল:- আমি এখন মৃত। মরার পরেও কি আমাকে তোমার বিরক্তিকর লাগছে? বেঁচে থাকতে তো ফিরেও তাকাতে না। এখন মরার পরেও কি আমার জন্য এতটুকু মায়া জন্ম হয়নি তোমার বুকে?" ইভার চোখে অশ্রুর বেগ বেড়ে গেল।



শিহাব জিজ্ঞেস করল:- তুমি কি প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছ?"


--ছি শিহাব, এটা তুমি বলতে পারলে? প্রতিশোধ নিতে চাইলে আমি তোমাদের কাউকে বাঁচতে দিতাম না। তুমি আমাকে সহ্য করতে পারবেনা ভেবে তোমার সামনে আমি অদৃশ্য থাকতাম। কিন্তু যখন তোমাকে কান্না করতে দেখলাম, আর পারিনি আড়ালে থাকতে। সামনে এলাম তোমার।



আমি প্রতিশোধ নিতে চাইলে তোমাকে, সাদিয়াকে জীনের হাত থেকে বাঁচাতাম না। আমি শুধু একটু তৃপ্তি পেতে এসেছি। আমার অতৃপ্ত আত্মাটা একটু তৃপ্তি পেলে, আমি আবার চলে যাব, আর কখনও ফিরে আসব না। কিন্তু শিহাব, একটি কথা......



--হুমমম বল....



--সাদিয়া তো তোমাকে ভালোবাসে না আর।



--চুপ কর ইভা, আমি ঐ কথা শুনতে চাইনা।



--আমি জানি তুমি সাদিয়াকে অনেক ভালোবাস।



কিন্তু আমি তার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসতাম তোমাকে। তুমি বুঝলেনা শিহাব। আফসোস!



তবে একটা কথা, ঐদিন আমি সাদিয়াকে বাঁচিয়েছি শুধু তোমার জন্য। আমার ভালোবাসার ভালোবাসা সে।তার কিছু হলে তোমার অনেক কষ্ট হতো। তাই বাঁচিয়েছি। বিশ্বাস কর, আমি প্রতিশোধ নিতে ফিরে আসিনি।



আমার হৃদয়টাকে একটু তৃপ্তি দিতে ফিরে এসেছি। কাঁদতে কাঁদতে ইভা অদৃশ্য হয়ে গেল। তার কান্নার আওয়াজটা ধীরে ধীরে দূরে মিলিয়ে যেতে লাগল।



আর শিহাব সেখানেই বসে পড়ল মাথায় হাত দিয়ে।চোখের সামনে সেই ভ্যাম্পায়ারের লাশটা পড়ে আছে। সেদিকে তাকিয়ে শিহাব ভাবতে লাগল: খুব বড় ভুল করে ফেলেছিল সে তখন।



অশরীরী ইভার কান্নাজড়িত কথাগুলো শিহাবের কানে বাজতে লাগল। ইভার ভালোবাসাকে অবহেলা করাটা ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল।



সেদিন যদি সে সাদিয়াকে ভালো না বেসে ইভাকে ভালোবাসত, তাহলে ইভাকে মরতে হতো না...... আর আজ তাকেও এতো কষ্ট পেতে হতো না। আর ভাবতে পারলনা সে।



মাথাটা আবারও ঝিমঝিম করতে লাগল। মৃত ভ্যাম্পায়ারটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল সে। অজান্তেই চোখেরকোণ থেকে অনেকগুলো অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ল তার।



_________বিভীষিকা________


সকালে কিচেনে তার খাবার রেডি দেখে চারদিকে ইভাকে খুঁজল শিহাব, কিন্তু দেখতে পেলনা। চুপচাপ খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ল সে।



সাদিয়ার সাথে দেখা করতে হবে আজ। পার্কে বসে আছে শরীফ আর সাদিয়া। তাদের দিকে শিহাবকে এগিয়ে আসতে দেখে দু'জনে উঠে দাঁড়াল। শিহাব এসে সাদিয়ার মুখোমুখি দাঁড়াল।



সাদিয়া জিজ্ঞেস করল: তুমি?? কেন এসেছ এখানে??



--সাদিয়া, তোমার সাথে কথা আছে, একটু আড়ালে চল।



--যা বলার এখানেই বল।



--সাদিয়া, তুমি এমন করতেছ কেন? আমি কি দোষ করলাম। তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে।



--না, আমি ভালো বাসতামনা, আমি কেবল ইভার কাছ থেকে তোমাকে ছিনিয়ে নিয়েছি। আমি ওকে হিংসে করতাম।



যখন দেখতাম সে তোমার প্রতি দুর্বল, তখন আমি তোমাকে আমার করার চিন্তা ভাবনা করলাম এবং আমি সফলও হয়েছি।



--ছি সাদিয়া, ছি..... এই ছিল তোমার মনে? তোমার কারণে ইভার মতো নিষ্পাপ মেয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল। তখন যদি বুঝতাম তোমার মনে এই ছিল, তবে কখনও ভালোবাসতাম না।



--তবে এখন কেন পড়ে আছ আমার কাছে?



--এখন যে খুব ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে......তার কথা শেষ না হতেই কয়েকজন গুন্ডা টাইপের লোক এসে শিহাবকে মারতে লাগল।



সম্ভবত শরীফ চৌধুরীর ভাড়া করা লোক। সাদিয়ার সাথে শিহাব কথা বলার সময় শরীফ ওদেরকে মেসেজ করে দেয়। ওরা এসে শিহাবকে এলোপাথাড়ি মারতে লাগল।



কতক্ষণ মার সহ্য করতে পারে একটা মানুষ? বেচারা শিহাব অনেক মার খেয়ে অবশেষে সেখানেই লুটিয়ে পড়ল। পার্কের সবাই কেবল দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল। সাহায্যের হাত কেউ বাড়ালনা।



ওরা মার দিয়ে চলে যাওয়ার পর কয়েকজন এসে শিহাবকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।



পরদিন একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটল শহরে। যারা যারা শিহাবকে মেরেছিল, তাদের কেউ জীবিত রইলনা। সবাইকে পার্কে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। কেউ তাদেরকে মেরে এমন অবস্থা করেছে যে, চেহারা দেখে পরিচয় জানা সম্ভব হলনা।




অবশেষে ডি.এন.এ টেস্ট করে পরিচয় জানতে হল। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সবার ভয়াবহ অবস্থা। কেউ তাদেরকে মেরে সেখানে পিচ্ পিচ্ করে রেখে দিছে।



একজনের শরীরের টুকরোর সাথে আরেকজনের শরীরের টুকরো মিশে গেছে। আর তাদের রক্তের বন্যায় শরীরের টুকরো অংশগুলো একাকার হয়ে পড়ে আছে। দেখলেই গা শিউরে উঠে......




চলবে.........

#অশরীরি_প্রেম_পর্ব-০৬

#oshoriri_prem_part_06

No comments

Powered by Blogger.