গল্প | অশরীরি প্রেম পর্ব-০৭


লেখক | সোহেল রানা



ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে শিহাব হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসল। শুনেছে সে আজ সাদিয়ার বিয়ে।



কি করবে সে? গিয়ে বাধা দেবে? সে কি পারবে? নাকি আবারও মার খেয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকতে হবে? তবু চেষ্টা তো করতে পারে সে। তার ভালোবাসার মানুষ এভাবে হারিয়ে যেতে পারেনা.......



শিহাব পৌছবার আগেই সাদিয়ার বিয়ে হয়ে গেল। সে চোখের সামনে দেখল তার ভালোবাসার মানুষটি অন্যজনের হয়ে গেল। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে?



সে থাকবেনা আর এ শহরে। এখানে থাকলে সে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে। স্মৃতিগুলো তাকে শান্তিতে থাকতে দেবেনা।



সবকিছু গুছিয়ে নিল শিহাব। তারপর বাসা থেকে বের হল। শেষবারের মতো দেখে নিল প্রিয় রুমটাকে। আর কখনো আসবেনা সে এই শহরে। শহরের চারদিকে একবার চোখ বুলাল। শহরটাকে তার ধূ ধূ মরুভূমি মনে হল।



শূন্যতা যেন গ্রাস করে ফেলেছে শহরটাকে। তারপর জমে থাকা চাপা নিঃশ্বাসটা বাতাসে ছেড়ে দিয়ে হাটতে লাগল শিহাব বাস স্ট্যান্ডের দিকে।



বাসর রাত! শরীফ এবং সাদিয়া বসে আছে ফুলসজ্জার নিচে। একটু পর হয়তো দু'জন মধুর মিলনে আবদ্ধ হবে।



হঠাৎ ঠক ঠক ঠক! কে যেন দরজায় নাড়া দিল। উফ!! এই মাহেন্দ্রক্ষণে কে আবার বিরক্ত করতে এল? একপ্রকার বিরক্ত নিয়ে শরীফ দরজা খুলল। সাথে সাথে চমকে উঠল। ভয়ে পিছু হটতে লাগল। ভয়ংকর চেহারা নিয়ে ইভা তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।



ফুলসজ্জা থেকে সাদিয়া নেমে এসে স্বামীকে আড়াল করল। দু'হাত জোড় করে বলল: প্লিজ ইভা, আমাদের কোন ক্ষতি করিসনা তুই।"



ইভা সাদিয়াকে সরিয়ে দিল সামনে থেকে। ভয়ংকর রূপে এগিয়ে যেতে লাগল শরীফের দিকে। সাদিয়া চিৎকার করল: ইভা প্লিজ, বাসর রাতে আমাকে বিধবা করিস না।"



ইভা ভয়ংকর কণ্ঠে বলল:- ওরে পাপিষ্ঠা, তোকে যদি শিহাব ভালো না বাসত, তবে তোকেও বাঁচিয়ে রাখতাম না।" বলে আর অপেক্ষা করলনা। সে তার লম্বা লম্বা খুরের মতো নখগুলো বের করে শরীফের সারা শরীরে আঘাত করল।



সাদিয়া দেখল, তার সদ্য বিবাহিত স্বামী ছটফট করতে করতে মারা যাচ্ছে। তার সারা শরীর থেকে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কি ভয়াবহ দৃশ্য! একটা অশরীরী এসে তারই চোখের সামনে তারই স্বামীকে এমন যন্ত্রণা দিয়ে মারল!



শরীফের ডেডবডিটা বুকে নিয়ে ইভার নাম ধরে চিৎকার করে উঠল। প্রত্যুত্তরে ইভার শুধু একটা অদৃশ্য হাসি শুনা গেল। হাসিটা ধীরে ধীরে দূরে মিলিয়ে যেতে লাগল।



_______আরেক অশরীরী______

শিহাব গ্রামে ফিরে এসে একদম অস্বাভাবিক জীবন কাটাতে লাগল। সাদিয়াকে হারিয়ে যেন সে জীবনের সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছে। কারও সাথে মিশে না, কথা বলে না, সারাক্ষণ রুমের ভেতর দরজা বন্ধ করে বসে থাকে।



কিন্তু গভীর রাতে তাকে একা একা কথা বলতে শুনা যায়। সবাই ভাবল শিহাব বুঝি পাগল হয়ে গেছে। রুমের ভেতর সে একা কার সাথে কথা বলে। তার বাবা মা চিন্তায় পড়ে গেল। শিহাবকে জিজ্ঞেস করলেও সে কিচ্ছু বলেনা। তারা শিহাবকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলেও সে রাজি হয়না।



গভীর রাত। শিহাব জেগে উঠল। তারপর ডাক দিল: ইভা.....


অদৃশ্য প্রত্যুত্তর শুনা গেল: হুমমম......


--আড়ালে কেন? সামনে এস......


--আসব?



--হুমমম.....আস.....


--চমকে উঠবে না তো?


--কেন?


--আজ আমি সেজেছি তাই। তোমার জন্য।



--অশরীরীরাও সাজে নাকি?



--হুমম.....



--দেখি, সামনে আস তো.....



--যাহ....আমার লজ্জা করে।



--আরে, অশরীরীরা লজ্জাও পাই তবে?



--জানিনা, তবে এই মুহূর্তে খুব লজ্জা লাগতেছে আমার।



--ইস!! আস দেখি সামনে.......



ইভা হঠাৎ দৃশ্যমান হল। সত্যি তো, সে অনেক সেজেছে আজ। অপূর্ব লাগতেছে তাকে। যেন এক অশরীরি পরী। ইভা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, তাকাতে পারছেনা শিহাবের দিকে। ইস কি লজ্জা!


--এই..... শিহাব ডাক দিল।


--কি??


--ভালোবাসি তোমাকে.......



--এখন বলে কি হবে? বেঁচে থাকতে তো পাত্তা দিলে না.....



--বুঝিনি তো তখন, সাদিয়ার মিথ্যে প্রেমের মোহে পড়েছিলাম।



--এখন ভালবাসলে কেন? আমাদের তো কখনও মিলন হবেনা।



--আচ্ছা, আমি যদি মরে যাই.......



শিহাবের কথা শেষ করতে দিলনা, তার মুখে হাত দিয়ে ইভা বলল: চুপ কর। এত তাড়াতাড়ি মরবে না তুমি। তোমাকে নিয়ে তোমার বাবা মার অনেক স্বপ্ন। ওদের স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে কোথায় যাবে তুমি?



--কিন্তু....



--কোন কিন্তু না। কাল থেকে তুমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে।



--ঠিক আছে।



--ঘুমিয়ে পড় এবার। আদেশের সুরে বলল ইভা।


--পাশে শুইবে তুমি??


--নাহহ.....


--কেন??


--আমি তোমার বুকে শুইব।


--হুমমম.......আস।


তারপর শিহাব অশরীরি ইভাকে বুকে নিয়ে কাটাল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা রাত।



পরদিন থেকে শিহাব স্বাভাবিক জীবনযাপন করার চেষ্টা করল। সবার সাথে মিশে, কথা বলে, হাসি ঠাট্টা করে। তবে অপেক্ষা করে কবে দিন ফুরিয়ে রাত আসবে। কবে দেখা হবে ইভার সাথে। কারণ আত্মারা দিনের বেলায় দৃশ্যমান হতে পারেনা। অবশেষে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত রাত। শিহাব ডাক দিল: ইভা......



--হুমমমম.....


--সামনে আস......


ইভা সামনে এল, আজও সে সেজে এসেছে গতরাতের মতো।


--এত কার জন্য সাজ?


--তোমার জন্য.....


--তাই?


--হুমমম....


--চল আজ বাইরে ঘুরতে যাই।


--হুমম....চল.....



চাঁদের আলোয় দু'জন হাটতে লাগল দু'জনের হাত ধরে। হঠাৎ ইভা থমকে দাঁড়াল।



শিহাব জিজ্ঞেস করল: কি হল ইভা, এভাবে থমকে দাঁড়ালে যে?



--শিহাব, তোমাদের এলাকায় কি কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে?



--হুমমম.....মাঝেমাঝে এলাকার একটা কুয়া থেকে মহিলারা পানি আনতে গেলে কুয়াতে পড়ে মারা যায়। প্রথম প্রথম আমরা ভাবতাম হয়তো অসচেতনতার কারণে পড়ে যায়। কিন্তু গ্রামের অনেক মহিলা কুয়াতে পড়ে মারা যাবার পর এটাকে আর স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করেনা কেউ।



--হুমমম.....এটা কোন স্বাভাবিক ঘটনা না। আমি আমারই মতো অন্য একটা অশরীরির অস্তিত্ব অনুভব করছি এখানে।



--মানে?



--মানে তোমাদের এলাকায় আমি ছাড়া আরও একটা অশরীরি থাকে। কুয়াটা কি আশেপাশে?




--হ্যা, একটু সামনে গেলেই কুয়াটা পাওয়া যাবে।



--ঐ কুয়ায় থাকে সেই অশরীরিটা। আজ আসবে সে। কেউ একজনের প্রাণ নেবে.......




চলবে.....

#অশরীরি_প্রেম_পর্ব_০৭

#oshoriri_prem_07

#banglastory143

No comments

Powered by Blogger.