গল্প | বাড়িওয়ালীর মেয়ে - পর্ব-১৯ | Bariwalir Meye - Part-19

লেখা| অনিক হাসান


১৮ তম পর্বের পর থেকে.......


---আসলে আব্বু ঘুম আসছিল না তাই খেয়েছিলাম।


---তাই বলে ওতোগুলো একসাথে খাবি।


---ভুল হয়েছে। আর এমন হবে না।


মনটা তিথীকে দেখার জন্য আনচান করছে। কখন যে আসবে। যেনো আর নিজেকে আটকাতে পারছি না।


আম্মুর সাথে অনেক কথা বললাম। এর ভেতর জানতে পেরেছি আমি চার মাস কমায় ছিলাম। তবে বিথী তিথীর কথা বলেনি।


কিছুক্ষণ পর বিথী আসলো। আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।


---ছাড়ো আমায়, লাগছে তো।


---লগুক। এভাবে পাগলামি করছিলেন কেন বলেন?


ধ্যাত ভাল্লাগে না। বিথীকে দুই চোখে সহ্য হচ্ছে না। আম্মু আছে জন্য কিছুই বলতে পারছি না। তাও বললাম,"এখন বসো। পরে এ নিয়ে কথা হবে।"


বিথী আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার পাশে বসলো। এরপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আম্মু বিথীর কান্ড দেখে হাসতে লাগল। বিথী আম্মু কে বলল,"আন্টি আপনি এখন যান। আমি তো আছি।"


বিথীর কথা শুনে আম্মু হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।


আমি বিথীকে বললাম,"তিথী কেমন আছে? ও আসে নি?"


তিথীর নাম শুনে বিথীর মুখটা শুকিয়ে গেল। ও কিছু বলল না। চুপচাপ বসে রইলো।


---ওই কথা বলছো না ক্যান?


---ওহ হ্যা, আপু ভালো আছে। আসবে একটু পর।


যাক তিথী তাহলে আসবে। শুনে মনটা শীতল হলো।


বিথী মনে মনে ভাবলো যাকে ভালোবাসি সে আরেকজনকে চায়, আর সে আরেকজনকে। আসলে অধিকাংশ মানুষই সত্যিকারের ভালোবাসার মর্ম বোঝে না। তবে পরে ঠিকই বোঝে। কিন্তু ততদিনে ফিরে পাওয়ার কোনো উপায় থাকে না।


আচ্ছা তিথীর বিয়ে কি হয়েছে? নাকি এখনও আমার জন্য অপেক্ষা করছে? তিথী আমার ছাড়া কারো হতে পারে না। নাহ এতোকিছু ভাবতে পারছি না।


হাসপাতালে আরও দুদিন কেটে গেল। কিন্তু তিথীর দেখা পেলাম না। মনটা আর মানতে চাইছে না। ইচ্ছে করছে ছুটে যাই তিথীর কাছে। কিন্তু শরীর দূর্বল। হাটতে পারি না।


ডাক্তার এসে জানালো আর সাতদিন পর আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে।


এই সাত দিনে বিথী অনেক বার এসেছে। কিন্তু তিথী এলো না। তাহলে কি সত্যি সত্যি তিথীর বিয়ে হয়ে গেছে। যেজন্য আসে নি। মাথার ভেতর উল্টাপাল্টা চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল।


অবশেষে আমাকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। এখন মোটামুটি সুস্থ। বিকেলে রুমে সুয়ে আছি এমন সময় রাফি মিম আর আকাশ আসলো।


ওদেরকে দেখে অনেক ভালো লাগছে।


আকাশঃ পাগলামি করছিলি কেন বল?


আমিঃ অনেক ডিপ্রেশনে ছিলাম রে। তখন মাঠা ঠিক ছিল না কি করবো। আচ্ছা ওসব কথা বাদ দে। এখন বল কেমন আছিস?


ওরা তিনজন একসাথে বলল ভালো আছি।


---তো রাফি শ্বশুর বাড়িতে কেমন খাচ্ছিস?


রাফিঃ আর বলিস না। শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার সময় ই পাই না।


আকাশঃ শালা মিথ্যা বলিস ক্যান? গত সপ্তাহে ও তিনদিন শ্বশুর বাড়ি ছিলি।


রাফিঃ মনে ছিল না রে বলে হাঁসতে লাগল।

সবাই মিলে আরও আড্ডা দিলাম। ওরা রাতের খাবার খাইয়ে তবেই যেতে দিলাম।


অনেকদিন ভার্সিটিতে যাওয়া হয়না। আকাশ বলে গেল আর একমাস পর ফাইনাল পরিক্ষা। এতো পড়া কিভাবে শেষ করবো ভাবতেই মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। ধুর আজ আর পড়বো না। কাল থেকে পড়া শুরু করবো।😃😊 


সকালে ভার্সিটি গেলাম। দেখি আকাশ রাফি আগেই চলে এসেছে। ওদের সাথে ক্লাসে গেলাম। এতোদিন পর আমাকে ক্লাসে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেছে।


একজন বলল,"কিরে অনিক শুনলাম তুই নাকি কোন মাইয়াকে নিয়ে পালিয়ে গেছিলি?


আরেকজন বলল,"আরে মাইয়া নিয়ে পালাতে লাগছিল। পরে নাকি ধরে আচ্ছা মতো মাইর দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করছিল।"


ওদের আজগুবি কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গেল। ইচ্ছে হচ্ছে আবাল দুটোরে আচ্ছা মতো ক্যালানি দেই। আকাশ আর রাফি মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পেরে বলল,"আরে চুপ কর আমরা ওদের বোঝাচ্ছি। "


---চুপ করবো মানে, শালারা আগামাথা না জেনে পুরো ক্লাসে আমাকে ক্যারেক্টারলেস বানিয়ে দিল।


রাফিঃ আরে কুত্তা কামড় দিলে তাকেও কি কামড়াবি?


---আমি তো কুত্তা না যে কামড়াবো।


---তাহলে চুপচাপ থাক।


---তোদের জন্য ওরা বেঁচে গেল। নাহলে দুটাকে আজ দেখে নিতাম।


ক্লাসে স্যার এসেই আমাকে একবস্তা ঝাড়ি দিলো। এভাবে প্রতিক্লাসে আলাদা আলাদা স্যার এসে ঝাড়ি দিয়ে গেল।আমার ভার্সিটি লাইফে আজ কে সবচেয়ে বাজে দিন। এতো কথা জীবনেও শুনি নি।


ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে এলাম। আকাশ বলল,"তোরা কি খাবি বল?"


---তিনজনের জন্য তিনকাপ কফি আন।


আকাশ কফি আনতে গেল। একটু পর কফি আনলো। কফির মগে চুমুক দিয়ে বললাম,"অনেকদিন পর কফি খেলাম।"


রাফিঃ তুই ছিলি না বলে আড্ডাও জমে নি।


আকাশঃ শালা মিথ্যা বলিস কেন? ক্লাস শেষ হতে না হতেই চলে যাইতি। আড্ডা দিলি কখন?


---আরে তুই তো জানিস। অনিক তো জানে না।


আকাশঃ এসব কথা বাদ দে। এখন বল অনিক তোর বিয়ে কবে?


আরে আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল। মনেই নাই দেখছি।


রাফিঃ কিরে কথা বল?


---আরে আমি কি করে বলবো? এতোদিন কি হয়েছে আমি জানি নাকি?


আকাশঃ তবে যাই বলিস বিথী মেয়েটা মনে হয় তোকে সত্যি ভালোবাসে।


---ধুর ভালোবাসা না ছাই। ও এমনি অমন করে। আমি তিথীকে ছাড়া কেউকে বিয়ে করবো না।


আকাশঃ আমার যা ভালো মনে হয় তোকে বললাম। বাকিটা তোর ইচ্ছে। 


---আচ্ছা তোরা কেউ তিথীকে দেখছিস?


রাফিঃ ওরে তো প্রায় দিন ই ভার্সিটিতে দেখি।


---আচ্ছা চল তো দেখে আসি।


রাফি আর আকাশকে নিয়ে তিথীদের ডিপার্টমেন্টে গেলাম।দেখি ক্লাস হচ্ছে। কিন্তু জানালা দিয়ে তিথীকে দেখতে পেলাম না। এজন্য চলে আসলাম।


আকাশ বলল,"আরেকটু আড্ডা দিয়ে তারপর যাই। কি বলিস?"

এরপর বসে তিনজন আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় দেখি তিথী একটা ছেলের বাইকের পিছনে বসে আছে। ছেলেটা আমাদের সামনে দিয়ে বাইক নিয়ে গেল। অথচ তিথী আমার দিকে তাকালো না। আমার খুব রাগ হলো।


আকাশরে বললাম,"ওই ছেলেটার সাথে তিথীর কি সম্পর্ক? 


আকাশঃ তিনমাস ধরে ওই ছেলের সাথে তিথীর রিলেশন। 


---আরে এটা হতেই পারে না। তিথী এমন মেয়েই না।


---প্রথমে আমাদেরও বিশ্বাস হয় নি। পরে ঠিকই বিশ্বাস হয়েছে। এখন তোর বিশ্বাস না হলে নিজে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর।


আমি ওখান থেকে উঠে গিয়ে ওই ছেলের কাছে গিয়ে বললাম,"এই ছেলে তিথীর সাথে তেমার কি সম্পর্ক?"


ছেলেটিঃ আপনি শুনে কি করবেন?


---মাথা গরম করাবে না। যা বলছি তার উপর দাও।


---তিথী আমার গার্লফ্রেন্ড।


ছেলেটার কথা শুনে রাগ উঠে গেল। মেরে দিলাম ওর নাক বারাবর এক ঘুসি। ছেলেটা নাক ধরে বসে পড়লো। আমি ছেলেটাকে এলোপাতাড়ি লাথি দিয়েই যাচ্ছি। এমন সময় ঠাসসস ঠাসসস করে আমার গালে কে যেন থাপ্পড় দিলো।চোখ তুলে দেখি তিথী দাঁড়িয়ে.... 


চলবে.......।

No comments

Powered by Blogger.