গল্প | বাড়িওয়ালীর মেয়ে - পর্ব-১৮ | Bariwalir Meye - Part-18
লেখা | অনিক হাসান
১৭ তম পর্বের পর থেকে.......
সকালে আম্মু আমাকে ডাকতে লাগল। কিন্তু আজকে কোনো নড়াচড়া না দেখে আমার কপালে হাত দিলো।দেখে কপাল ঠান্ডা হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ ধাক্কা দিয়েও আমাকে তুলতে পারলো না।
হঠাৎ আম্মুর চোখ পড়লো টেবিলের উপর। দেখে প্রায় দু পাতার ১৫ টা ঘুমের ট্যাবলেট নেই। অনিক তো কখনও ঘুমের ওষুধ খায় না। নাকি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে সুইসাইড করলো?এটা ভেবেই আম্মু একটা চিৎকার দিলো।
আম্মুর চিৎকার শুনে আব্বু ছুটে এল।
আব্বুঃ অনিকের আম্মু কান্না করছো কেন?
আম্মুঃ দেখো আমার ছেলেটার কি হয়েছে। ও উঠছে না কেন? ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।
আব্বুঃ তোমার ছেলে এতো ঘুমের ওষুধ খাইছে কেন?
আম্মুঃ আমি কি করে বলবো? বেশি কথা না বলে এম্বুলেন্স ডাকো। ছেলেকে হাসপাতালে নিতে হবে।
কিছুক্ষণ পর এম্বুলেন্স এলো। এম্বুলেন্সের শব্দ শুনে বিথী তিথী ওর আব্বু আম্মু সবাই নিচে নেমে আসলো।
বিথীঃ আন্টি আমার অনিকের কি হয়েছে? এমনভাবে আছে কেন?
আম্মুঃ জানিনা মা, ওর রুমে খালি ঘুমের ওষুধের প্যাকেট পেয়েছি। মনে রাতে ওগুলো খেয়েছে।
---এখানে না কথা বলে তারাতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলুন। (এম্বুলেন্স চালক বলল))
বিথী মনে মনে ভাবতে লাগলো আমি অনিককে অনেক প্রেশার দিছি। যার জন্য ওর আজ এ অবস্থা। অনিকের কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
তিথী ভাবতে লাগল কি হয়ে গেল। অনিককে এতো চাপ দেওয়া ঠিক হয়নি। এখন ও যদি মারা যায়। তাহলে পুলিশ এসে আমাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে। যদি কোনোভাবে জানতে পারে আমি বিয়ের জন্য চাপ দিছি তাহলে আমাকে জেলে যেতে হবে।🐸
এদিকে আমাকে এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো। ডাক্তার এসে বলল,"কি হয়েছে এনার।"
আব্বুঃ অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়েছে। প্লিজ ডাক্তার সাহেব আমার ছেলেকে বাঁচান। "
ডাক্তারঃ দেখুন বাঁচা মরা সব আল্লাহর হাতে। আমরা তো শুধু মাধ্যম। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। নার্স দ্রুত এনাকে ওটি তে নিয়ে যান।
নার্স এসে আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল।
ডাক্তার বলল,"আপনারা চিন্তা করবেন না। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।"
অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আম্মু কেঁদে ই চলেছে।বিথী এসে আম্মু কে সান্ত্বনা দিতে লাগল।
বিথীঃ আন্টি এভাবে কাঁদবেন না। আল্লাহ নিশ্চয়ই আবার অনিককে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিবে।
আম্মুঃ মা রে আমার একটাই ছেলে ওর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো। আমার অনিককে ছাড়া কিছুই কল্পনা করতে পারি না।
----আন্টি নিজেকে শক্ত করুন। এখনও তো আশা শেষ হয়ে যায় নি।
প্রায় এক ঘন্টা পর ডাক্তার বের হয়ে আসলো। ডাক্তার কে দেখে আম্মু আব্বু বিথী দৌড়ে গেল।
আম্মুঃ আমার ছেলের কি অবস্থা? ওর জ্ঞান ফিরছে কি?
ডাক্তারঃ দেখুন আমাদের যা করার দরকার করেছি। কিন্তু...
আব্বুঃ কিন্তু কি ডাক্তার!
ডাক্তারঃ দেখুন অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ার জন্য আপনার ছেলে প্রায় মারা যাচ্ছিল। একটু দেরী হলে ওকে বাঁচাতে পারতাম না। কিন্তু এখন সমস্যা হলো আপনারা রোগী কে আনতে অনেকটা দেরী করে ফেলেছেন। এজন্য ওর জ্ঞান কখন ফিরবে সেটা বলতে পারছি না। এখন আপনাদের ছেলে কমায় আছে।
বিথীঃ কমা থেকে বের হবে কবে?
ডাক্তারঃ সেটা দুদিনের ভেতর ও হতে পারে। আবার দুমাস বা বছর ও লাগতে পারে। আবার জ্ঞান নাও ফিরতে পারে। এখন আল্লাহর কাছে ডাকুন। আমাদের আর কিছু করার নাই।
আম্মুঃ আমার ছেলেকে কি দেখতে পারি?
ডাক্তারঃ একটু পর রোগী কে কেবিনে শিফট করা হবে। তখন দেখতে পাবেন। আপাততঃ অপেক্ষা করুন।
ডাক্তার চলে গেল। আম্মু বিথীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল। বিথীর আম্মু আব্বু হসপিটালের আসলো।
এসে বলল,"এখন কেমন আছে?"
আব্বু ওনাদের সব খুলে বলল। বিথীর আব্বু বলল,"চিন্তা করবেন না। আমার বিশ্বাস শীঘ্রই অনিক আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।"
একটু পর আমাকে কেবিনে সিফট করা হলো।
আম্মু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। নার্স বলল এভাবে রোগীর সামনে কান্না করবেন না।
আন্টি আম্মুকে ধরে পাশের চেয়ারে বসালো।
তিথী এসে দড়জায় সামনে দাড়ালো। তিথীর আম্মু তিথীকে সবকিছু খুলে বলল।
তিথী ভেবেছিল অনিক হয়তো মারা গেছে। কিন্তু যখন দেখলো বেঁচে আছে তাহলে আর চিন্তার কারণ নাই।
এক মাস চলে গেল তাও আমার জ্ঞান ফিরলো না। আম্মু প্রতিদিন ই আমার জন্য কাঁদে। আব্বু তো শুকিয়ে গেছে। বিথী প্রতিদিন ই আসে আমাকে দেখতে। অনেক্ক্ষণ থেকে চলে যায়।
এভাবে আরও তিন মাস কেটে গেল। তিথী আর তেমন আসে না। কিন্তু বিথী প্রতিদিন ই আসে। হঠাৎ একদিন আমার জ্ঞান ফিরে যায়। চোখ খুলে দেখি আম্মু বসে আছে। আম্মু রোগা হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।
আমার চোখ খোলা দেখে আম্মু খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।
---আম্মু এভাবে কান্না করছো কেন? আর আমি এখানে কেন?
---তুই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে লাগছিলি কেন? যানিস না তোকে ছাড়া আমি বাচবো না রে বাবা।
ডাক্তার এসে বলল,"এভাবে রোগীর সামনে কান্না করবেন না।আর আপাততঃ এখন রেগীকে রেষ্ট নিতে দিন।"
আমিঃ আম্মুকে আমার কাছে থাকতে দিন।
---আচ্ছা থাকতে পারবে। তবে বেশি কথা বলবে না।
---আচ্ছা।
এদিকে আম্মু ফোন করে আব্বু কে খবরটা দিলো। কিছুক্ষণ পর আব্বু এলো। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
---আব্বু ছাড়ো, আমার লাগছে তো।
---লাগুক। আমাদের ছেড়ে চলে যেতে চাইছিলি কেন বল?
---আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। কারণটা বলা যাবে যাবে না।
---ওই চুপ কেন বল?
---আসলে আব্বু ঘুম আসছিল না তাই খেয়েছিলাম।
---তাই বলে ওতোগুলো একসাথে খাবি।
---ভুল হয়েছে। আর এমন হবে না।
মনটা তিথীকে দেখার জন্য আনচান করছে। কখন যে আসবে।
চলবে.......।
No comments