গল্প | বাড়িওয়ালীর মেয়ে - পর্ব-০৫ ◑ Bariwalir Meye - Part-05
লেখাঃ অনিক হাসান

৪য় অংশের পর......
---মেয়েটি আবার ডাক দিলো এইযে আমার হবু বর অনিক,"আমাকে ফেলে একা চলে যেওনা।"
মেয়েটা আমার নাম বলে কেনো? মেয়েটাকে দেখার জন্য পেছন ফিরে তাকালাম। হায় আল্লাহ! আমার চোখ একি দেখলো? এতো তিথী।
তিথী আমার দিকে দৌড়ে আসতে লাগলো।
--- এই মামা, রিকশা থামাও।
তিথী আমার কাছে চলে আসলো।
---এই আমাকে একলা করে চলে যাচ্ছো কেনো?
---তো তোমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে বুঝি।
---বারে দেখছি তোমার কিছুই মনে থাকে না।
----কি মনে রাখতে হবে হ্যা?
---আমি তোমার হবু বউ এটা তোমার মনে থাকে না কেনো?
---তোমার মাথা ঠিক আছে তো?
---আমার মাথা ঠিকই আছে। তোমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। এই সরে বসো। আমি তোমার পাশে বসবো।
----তুমি আমার সাথে যাবে এটা অসম্ভব।
---আমাকে না নিলে চিৎকার করবো কিন্তু।
এ কেমন মেয়ের পাল্লায় পরলাম রে বাবা। এখন যদি চিৎকার করে তাহলে মান সম্মান সব চলে যাবে। তার চেয়ে পাসে বসতে দেওয়া ভালো।
---রিকশার একপাশে সরে বসলাম। ওমনি তিথী আমার পাশে বসে পড়লো।
---এইতো আমার লক্ষি হবু বর।
---আচ্ছা তোমাকে কে বলেছে আমি তোমার হবু বর?
---তুমি তো বলেছো।
---আমি কখন বললাম?
---বারে তুমি তো দেখছি সবই ভুলে যাও। তবুও এটা কোনো সমস্যা না। বিয়ের পর থেকে আমি তোমাকে সব মনে করে দেবো।
--আল্লাহ এই পাগলি মেয়ের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করো। (মনে মনে বললাম)
---এই কি বললে?
---কিছু না তো। আচ্ছা তুমি আমাকে এটা বলো আমি তোমাকে কখন বলেছি তোমাকে বিয়ে করবো?
---সেদিন আমাকে প্রপোজ করলে তোমার মনে নেই।
---হ্যা করেছি। বিয়ের কথা কখন বললাম?
--- জোর করে বিয়ে করার কথা বলেছো। আমাকে জোর করে বিয়ে করতে হবে না। আমি তোমাকে এমনি বিয়ে করতে রাজি আছি।
---আমি তো তখন মজা করে বলেছিলাম।
---তাহলে আমিও মজা করে তোমার আব্বু আম্মুকে বলে দেই।
---এই খবরদার আব্বু আম্মুকে কিছু বলবে না।
---বলবো না এক শর্তে।
_---কি শর্ত?
---এখন থেকে আমি যা বলবো তাই করতে হবে।
--এটা আমার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। আমি এটা মানবো না।
---আমি আবারও বলছি আমার কথা শুনবে না বাড়ি ছাড়বে?
---কোনোটাই না।
---তাহলে তোমার আব্বু আম্মুকে সত্যি বলতে হবে। এই মামা রিকশা থামাও, আমি বাড়ি যাবো।
---এখন বাড়ি যাবে কেনো?
---তোমাদের বাড়ি ছাড়া করতে যাবো।
---এখন গিয়ে যদি সত্যি সত্যি বলে দেয় তাহলে তো আমাদের বাড়ি ছাড়া করতে পারে। আমাকে কিছু একটা করতে হবে।
---হ্যা বুদ্ধি পেয়েছি। আমার ডান হাত দিয়ে ওর বাম হাত চেপে ধরে বললাম এই প্লিজ যেও না। আমি তোমার সব কথা শুনবো। কিন্তু বাসার কাউকে কিছু বলো না।
---এইতো গুড বয়। এবার আমার হাতটা ছাড়ো।
---ওর হাতটা ছেড়ে দিলাম। আপাতত বাঁচা গেলো।
---শোনো তোমার ১ম কাজ হলো আমার সাথে ভার্সিটি যাবে আসবে।
---আমাকে আর কি করতে হবে?
---আপাতত এটাই তোমার কাজ।
---আচ্ছা ম্যাডাম।
---ভার্সিটি পৌচ্ছে গেছি। রিকশা থেকে নেমে তিথীকে বললাম ম্যাডাম ভাড়াটা দিয়ে দিন।
---একটা নিরীহ মেয়ের কাছে ভাড়া চাইতে তোমার লজ্জা করে না?
--অপমানিত হয়ে নিজেই ভাড়াটা দিয়ে দিলাম।
---এই তোমার ফোনটা দাও।
---আমার ফোন দিয়ে তুমি কি করবে?
---দিবে কি না বলো? (রেগে বলল)
এই মেয়ের এত সাহস আসলো কোথায় থেকে বুঝতে পারলাম না। বিপদে যেহেতু পরেছি তাই ওর কথা শুনতেই হবে। এজন্য ফোনটা ওকে দিয়ে দিলাম।
---কিছুক্ষণ ফোন টিপাটিপি করে আমাকে দিয়ে দিলো।
----এইযে ম্যাডাম আমি চললাম।
---এই শোনো।
---কি?
---যাবার সময় আমাকে নিয়ে যাবে।
---এই মেয়ে আমি তোমার বড়। তাই আমাকে আপনি করে বলবে।
---আমি তোমাকে তুমি করেই বলবো। তুমি কতো ভালো শোনা যায় তাই না?
---আসলে বিপদে পরেছি। তা না হলে থাপ্পর মেরে তোমার ভূত ছাড়াতাম।
---মারো থাপ্পর, দেখি কত জোরে মারতে পারো?
---তোমার সাথে ফালতু প্যাচাল করার আমার সময় নাই বলে চলে আসলাম।
বিপদের সময় হারামি বন্ধুগুলোকেও কাছে পাওয়া যায় না। ওদের এখন কোথায় খুজি?
ফোন দিলেই তো ওদের পাওয়া যাবে। আসলে বিপদের সময় বুদ্ধিগুলো পালিয়ে যায়।
---হ্যালো রাফি কোথায় তুই?
---আমি ভার্সিটির ছাদে আছি। তুই কোথায়?
---তুই ওখানেই থাক। আমি তোর কাছে আসছি।
---আচ্ছা।
প্রায় দৌড়ের মতো গিয়ে রাফির কাছে গেলাম।
---দোস্ত আমি তো একবারে শেষ।
---তোর আবার কি হলো?
---আর বলিস না ওরা দুই বোন আমাকে ব্লাকমেইল করছে।
---কিভাবে?
---সকাল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা ওদের বললাম।
---আমি বললাম, সব তোদের জন্য হয়েছে। সেদিন আমাকে দিয়ে ওসব না করালে আমার এই অবস্থা হতো না। এখন বল আমি কি করবো?
---দেরি করে ভাবতে হবে।
---আচ্ছা ভাব। কিন্ত আমি এর উপায় চাই।
---তুই এক কাজ কর, তিথীকে পটিয়ে ওর সাথে প্রেম কর। তাহলে অন্ত একটার হাত থেকে বাঁচবি।
--তোর মাথা ঠিক আছে তো? আমি করবো প্রেম?
_--এছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।
---তুই তো জানিস আমাকে কেউ উল্টাপাল্টা কিছু বললে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। আর মনে হয় ওই মেয়ের মাথার তাঁর ছেড়া আছে। কখন কি বলবে আবার যদি থাপ্পর মারি তাহলে আমার সব যাবে।
---আরে বিপদে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হয়।
--হুম তা জানি।
---তাহলে কাজ শুরু করে দে।
---কিন্তু দোস্ত প্রেম কিভাবে করতে হয় আমি তো জানি না।
---শোন ওর সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলবি, কথায়, আকার ইঙ্গিতে ওকে বোঝাবি তুই ওকে ভালোবাসিস।
---এ তো অনেক বড় কঠিন কাজ।
---হুম কঠিন, কিন্তু এই অসাধ্য সাধন করতে হবে।
---দোস্ত চল ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।
ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ ফোনটা বেঁজে উঠলো। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার।
কলটা কেঁটে দিলাম। একটু পর আবার ওই নাম্বার থেকে কল আসলো।
কলটা রিসিভ করলাম।
---আসসালামু আলাইকুম, কে আপনি?
---তোর জম। ওই তুই আমার ফোন কাটলি কোন সাহসে?
---(মেয়েটার কতবড় সাহস! তুই তুকারি করে কথা বলছে।) আপনি এতো অভদ্র কেনো? আপনার মা বাবা আপনাকে ভদ্রতা শেখায় নাই?
----অনেক শিখাইছে।
----তাহলে অভদ্রের মতো কথা বলছেন কেনো? আর কেউ সালাম দিলে তার জবাব দিতে হয়।
---ওহ সরি। রাগে এমন হয়েছে। আর হবে না।
---সরি বললেই সব অপরাধ মাফ করা যায় না।
---আপনাকে কাছে পেলে থাপ্পর দিয়ে শিক্ষা দিতাম।
---ওই তোমার হাতে কি বেশি জোর হয়েছে যে মেয়েদের খালি থাপ্পর দাও?
---হ্যা হয়েছে।
---তাহলে আসো আমাকে থাপ্পর মেরে যাও।
---মেয়েটার এমন কথা শুনে পাগলি টাইপের মনে হলো।তাই বললাম বাই পাগলি আপনার সাথে ফালতু কথা বলার সময় নেই।
----ওই আমি পাগলি! আজ তুই বাসায় আয় আমি তোর মাথা ফাটাবো।
---এ তো দেখছি সত্যিকারের পাগলি। পাগলিকে ক্ষেপিয়ে লাভ নেই। তাই ফোনটা কেটে দিলাম।
---কি হয়েছে দোস্ত?
---আর বলিস না। কোথাকার এক পাগলি ফোন করছিলো। বাদ দে ওসব কথা। এখন আমাকে বাসায় যেতে হবে।
---আচ্ছা যা। তবে আমার কথামতো কাজ করিস কেমন।
---আচ্ছা করবো।
আমি বাসার উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করলাম।
চলবে.......
#baraiwalir_meye
#bangla_romantic_story
#banglastory143
No comments