জাফরিন - পর্ব-১৩ (শেষ) | Jafrin - Part-13 (End)

গল্প | #জাফরিন 💫
পর্ব | ১৩ এবং শেষ
লেখক | আস্থা রাহমান শান্ত্বনা 


জাফরিনের চোখ পানিতে টলমল করছে, তা দেখে আহিন জাফরিনকে কাছে টেনে নিল। দুহাতে মুখটা জড়িয়ে ধরে বলল, "সব ঠিক আছে, চিন্তা করোনা।"
জাফরিন নিজেকে সামলাতে না পেরে আহিনের বুকে মাথা ঠেক দিয়ে কান্না করতে লাগল। 
#জাফরিন_পর্ব_১৩
#jafrin_part_13_end
#https://banglastory143.blogspot.com/



আল্লাহর রহমতে, আহিন সম্পূর্ণ ঠিক আছে। কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল সে আহিনকে হারিয়ে ফেলেছে। আহিনের ছদ্মবেশে জঘন্য জ্বীনটা এসেছিল জাফরিনের উপর হামলা করতে। কিন্তু রিফাত কে দেখে হতবিহ্বল হয়ে যায়, কিছু বুঝে উঠার আগেই রিফাতের বিশেষ ছুরিতে তার প্রাণ যায়। 


জাফরিনের মনটা খচখচ করছিল যে তার উপর কেউ হামলা করতে পারে। তাই সে সবসময় আয়াতুল কুরসীর অংশ নিজের সাথে রেখেছিল। আর সেরাতে শাড়ির আচলে তার সত্যি দম বন্ধ হয়ে আসছিল, কোনো উপায় না পেয়ে কিছুসময়ের জন্য দম আটকে রেখে গলা আড়ষ্ট করে রাখে। তাই গলায় কোনো চাপ পড়েনি, কেবল মৃতের অভিনয় করে ছিল মাত্র। কিন্তু রিফাতকে সে ছাড়বেনা। 


রিফাতের কথা ভেবেই তার চোখ-মুখ রাগে লাল হয়ে গেল। "আমি ওই ব্যাটাকে কিছুতেই ছাড়ব না। দু'বার ও আমার হাত থেকে বাঁচলেও এইবার আর বাঁচবেনা।" 


"শান্ত হও। তোমাকে কিছু করতে হবেনা। আমি চাইনা, আমাদের বেবি আর তোমার কোনো ক্ষতি হোক। তুমি এখন নিজেকে নিয়ে একটু সচেতন হও।" 


"ওই জানোয়ারটাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিব?" 


"ওর ব্যবস্থা আমি করব। এই বাচ্চাটা আমাদের কতদিনের প্রতীক্ষা ছিল, ওর জন্য তুমি সবকিছু ত্যাগ করে শক্তিবিহীন একটা সাধারণ পরী হয়ে বেঁচে আছো। তুমি ওর সাথে এখন কিছুতেই পারবেনা। ও হয়ত জানত তোমার মাঝে আর কোনো অশরীরী শক্তি নেই, তাই এভাবে আক্রমাণ করার সাহস দেখিয়েছে।" 


জাফরিন একটু চুপ থেকে বলল,
"আমার তা মনে হয়না। ও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেও আমার উপর হামলা করতে পারত, করেনি। কারণ, সে আমাকে তখনও পরী ই ভেবেছিল। তার হাতে যে ছুরিটা ছিল তা কোনো সাধারণ ছুরি ছিলনা। 


বেচারা, বরাবর ই খেলায় কাঁচা। আমাকে ছুরি দিয়ে মারতে এসে আচল জড়িয়ে মেরে চলে যায়। সে ভুলেই গিয়েছিল, ছুরিটা ছাড়া সে আমার মত পরীকে মারতে পারবেনা।" 


"ওকে আমি ছাড়বনা, এর শাস্তি ওকে ঠিক পেতে হবে।" 

#জাফরিন_পর্ব_১৩
#jafrin_part_13_end
#https://banglastory143.blogspot.com/

"ওই ব্যাটা ভীষণ একরোখা। তুই কি ওর সাথে পারবি! আমাকে একটা সুযোগ দে, আমি ওকে একটা উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে আসি।" 


"না তুমি কিছু করবানা। কেন বুঝতে পারছোনা, এতে বিপরীত হতে পারে। তুমি শক্তিহীন জানলে ও তোমাকে কিছুতেই বাঁচিয়ে রাখবেনা, সাথে আমাদের বাচ্চাকেও না।" 


"কিন্তু তুই কি করবি?" 

"পুলিশে দিব ওকে।" 


"তোর মনে হয় ওকে পুলিশ সোজা করতে পারবে? এসব কিছুতে ওর শিক্ষা হবেনা। তুই ওকে আমাদের চল্লিশার দাওয়াত পাঠানোর ব্যবস্থা কর। বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।" 


আহিন কিছু বলতে চাইলে জাফরিন বাধা দেয়,
"ইনশাআল্লাহ, আমার কিচ্ছু হবেনা।" 


রিফাত আহিনের বাড়ীতে ঢুকে দেখে পুরো বাসায় নীরবতা বিরাজ করছে। কয়েকবার ডেকেও কারো সাড়া-শব্দ পাওয়া গেলনা। রাতের বেলায় আয়শা খানম তাকে ডাকল কেন সেটা ও বুঝতে পারলনা। 


আচ্ছা কোনোভাবে কি সবাই ওকে সন্দেহ করছে? ভেবে রিফাত থমকে দাঁড়ায়। পরক্ষণে ভাবে,
তাকে তো কেউ খুন করতে দেখেই নি। উপরন্তু যদি তেমন ই হত, সবার আগে পুলিশ ই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করত। এসব ভাবতে ভাবতে রিফাত বাসায় ভিতরে ঢুকে। 


ঢোকার সাথে সাথে বাহিরে থেকে কেউ দরজা বন্ধ করে দেয়। রিফাত ঢোক গিলে চেচাতে থাকে, কে ওখানে! 


এমনসময় বাসার সব আলো নিভুনিভু করতে করতে বন্ধ হয়ে যায়। রিফাত সামনে তাকিয়ে দেখে জাফরিন সাদা শাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে, তার মুখে রক্ত লেগে আছে। 


জাফরিন জোরে জোরে হেসে বলে,
"চল্লিশা খেতে এসেছিস তাইনা? আজ তো আমি তোর চল্লিশা খাব তোর মাংস দিয়ে। মরে গিয়ে ভালোই হয়েছে, তোর ঘাড় মটকে মাংস খাওয়ার সুযোগ পেলাম।" 


রিফাত ভয়ে ঠকঠক করে কাপতে লাগল। সবকিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। জাফরিন মরে গিয়েও তাকে মারার জন্য ফিরে এসেছে। এইবার তো জাফরিন তাকে নিশ্চিত ছাড়বেনা। পালাতে যাবে এমন সময় তার গায়ে  নাড়িভুড়ি, রক্ত এসে পড়ল। সে আর স্থির থাকতে পারলনা, অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল। 

#জাফরিন_পর্ব_১৩
#jafrin_part_13_end
#https://banglastory143.blogspot.com/


জাফরিন এসে রিফাতকে ভালো করে দেখল, ব্যাটা ভয়েই অজ্ঞান হয়ে গেছে। এইটুকু সাহস নিয়ে এতবড় একটা কাজ করতে এসেছিল! আহিন জাফরিনের পাশে এসে দাঁড়ায়। 


"মারা গেল নাকি?" 


"নাহ, ভয়ে অজ্ঞান হয়েছে মাত্র। বাসায় সবাই ফেরার আগে একে কোথাও ফেলে আসতে হবে!" 


"কোথায় ফেলবে?" 


"যেখানে সে আমাকে মারার চেষ্টা করেছিল। লোক ডাকিয়ে একেও সেখানে ফেলে দিয়ে আয়। তার আগে লোকদের কে বলবি একে যেন পাগলের ইঞ্জেকশন দিয়ে দেয়। লুচ্যা ব্যাটা!" 


আয়শা বেগম বিমর্ষচোখে হসপিটালের করিডোরে বসে আছেন। জাফরিন গর্ভবতী কথাটা শুনে উনি যত টা না খুশি হয়েছেন, তার চেয়ে বেশী দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। জাফরিনকে বাহিরে থেকে দেখে কেউ বুঝতে পারবেনা, সে গর্ভবতী। 


তার উপর মাত্র ৬ মাসের মাথায় কারো প্রসব বেদনা উঠতে পারে এমনটা তিনি কখনোই শুনেননি। 
সন্ধ্যাবেলায় জাফরিনের প্রসব ব্যাথা উঠার সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে আহিন। 


আহিনের খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে, এইবারে যেন তার বাচ্চাটার কোনো ক্ষতি না হয়। জাফরিন এই বাচ্চাটার জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছে, এবার যদি কোনো দুঃসংবাদ শুনে ও হয়ত ভেঙ্গে ই পড়বে।


কিছুক্ষণ পর নার্স এসে খবর দিল, একটি সুস্থ-স্বাভাবিক মেয়েবাবু হয়েছে। আহিন খুব খুশি হলেও, আয়শা খানম কেন জানি খুশি হতে পারছেননা। তার মনে হচ্ছে, এসব কোনো কিছু স্বাভাবিক নয়। 


জাফরিনের কাছে এসে দেখলেন, তার সবেমাত্র জ্ঞান ফিরেছে। তিনি জাফরিনের পাশে বসলেন, নার্স এসে দোলনায় বাচ্চাটাকে রেখে গেলেন। 


আয়শা খানম সেদিকে একবারো তাকালেননা, জাফরিন কিছু বলার আগে তার হাত ধরে বলতে শুরু করলেন, "তুই যদি আমাকে সত্যিই তোর মা ভেবে থাকিস, তবে বল এসবের পিছনে কারণ কি? কেন ৬ মাসের মাথায় তোর ডেলিভারী হল?" 
#জাফরিন_পর্ব_১৩
#jafrin_part_13_end
#https://banglastory143.blogspot.com/


জাফরিন আয়শা খানমের এই অবস্থা দেখে থ হয়ে গেল। কি বলবে বুঝতে পারছিলনা, তাও এই মানুষটিকে সে মা ভেবেছে তাকে তো মিথ্যা বলতে পারেনা।
"আসলে মা আমি মানুষ নই, একজন পরী। তাই অস্বাভাবিকভাবেই এসব ঘটেছে।" 


আয়শা খানম ৪২০ ভোল্টের শক খাওয়ার মত চেহারা করে বললেন, "তার মানে এই মেয়েটা পরীর মেয়ে। আমার বংশধর কিনা আমাদের ভিন্ন এক জাতি!" 


জাফরিন কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললেন,
"তুমি আমার ছেলের জীবনে থাকবেনা, আমি কখনোই এমন নাতনীকে মেনে নিতে পারবনা। তাকে দেখলে আমার ভয় করবে, শরীর ঘিনঘিন করবে। এর চেয়ে তুমি আমার ছেলেকে ছেড়ে যেখান থেকে এসেছো তোমার মেয়েকে নিয়ে সেখানে চলে যাও। 


বেঁচে থাকতে তোমার আর তোমার মেয়ের মুখ যেন আমি না দেখি। তুমি আমাদের সবাইকে ঠকিয়েছো।"
জাফরিন কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটাকে কোলে নিল। 


মাশা-আল্লাহ দেখতে পরীর মত সুন্দর, আহিনের মত চেহারা হয়েছে একদম। এর মুখ কেন এরা দেখতে চায়না? পরী তো সে, দোষ তো তার! এরজন্য বাচ্চা মেয়েটাকে কেন দূরে সরিয়ে দিবে। 


আহিন আয়শা খানমের পাশে দাড়িয়ে বলল,
"মা তাহলে তো আমিও তোমাদেরকে ঠকিয়েছি। আমি তো প্রথম দিন থেকে জানতাম জাফরিন একজন পরী, শুধু পরী নয় খারাপ ধরণের পরী। 


তাও আমি ওর সাথে এতবছর সংসার করেছি, কারণ ও খারাপ নয়। এই বাচ্চাটাকে যে তুমি এত কটু কথা বলছো, এই মেয়েকে পৃথিবীতে আনার জন্য ও সবকিছু ত্যাগ করেছে। এমনকি নিজের শক্তি, স্বভাব সব। 


বাচ্চাটার উপর কোনো প্রভাব পড়তে দেয়নি।"
"তুই কেন বুঝতে পারছিসনা, এই মেয়েও তার মায়ের মত হবে। ও পরীর মেয়ে জানার পর আমার আর ওকে নাতনী বলে মানতে ইচ্ছে হবেনা।" 


"তাহলে তুমি তোমার ছেলেকে হারানোর প্রস্তুতি নাও। আমরা এখান থেকে অন্য কোথাও চলে যাব।" 


"বউমা, (অপ্সরীর) খাবার টা দিয়ে যাও। আমি ই খাইয়ে দিব। তুমি বরং খেয়ে একটু ঘুমাও।" 
#জাফরিন_পর্ব_১৩
#jafrin_part_13_end
#https://banglastory143.blogspot.com/


জাফরিন খাবারটা আয়শা খানমের পাশে রেখে আচলে হাত মুছতে মুছতে হাসি দেয়। তার ৬ মাসের মেয়েটিকে এখন শ্বাশুড়ি ই দেখাশোনা করেন, এক মূহুর্তের জন্য কোলছাড়া করতে চাননা। অন্য নাম রাখা হলেও উনি পরীর মেয়ে অপ্সরী রেখেই ডাকেন। 


আহিন জাফরিনকে বসে বসে পা দোলাতে দেখে বলে,
"এত খুশি কি নিয়ে?" 


জাফরিন আহিনের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
"জানিস, মা আমাদের মেয়েকে আস্তে আস্তে করে পুরোপুরি ই মেনে নিয়েছেন।" 


"সেদিন নিজের ছেলেকে হারানোর ভয়ে মানতে বাধ্য হলেও এখন তার নাতনীকে খুব ভালোবেসে মেনে নিয়েছে। আসলে আমাদের মেয়েটা ই এমন যাকে ভালো না বেসে থাকা যাবেনা। অবশ্য তার মা পরীটাও এমন ই।" 


জাফরিনের আগের মতই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে,
"আমাদের মেয়ের তো আকীকা করতে হবে।"
"কি দিয়ে করা হবে?" 


জাফরিন একগাল হাসি দিয়ে বলে, "বকরী"। এইবার কিন্তু ডাবল। একটা মেয়ের জন্য, আরেকটা মেয়ের মায়ের জন্য। আর রান্না করবে কিন্তু মেয়ের বাপ। 


"আর চাইলে সেও আমাদের সাথে খেতে পারে! " 


আহিন নিজের মুখ চেপে ধরে বলে, "শান্তি দিবানা!" 


জাফরিন আগের মত বাচ্চাদের মত হেসে উঠে। আহিনকে জ্বালাতে তার যে ভীষণ ভালোলাগে! আর তার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন ই যাবেনা। 
#জাফরিন_পর্ব_১৩
#jafrin_part_13_end
#https://banglastory143.blogspot.com/


꧁♦💠🖤💠♦꧂ 

(সমাপ্ত) 

꧁♦💠🖤💠♦꧂

No comments

Powered by Blogger.