জাফরিন - পর্ব-১২ | Jafrin - Part-12

গল্প | #জাফরিন 💫
পর্ব | ১২
লেখক | আস্থা রাহমান শান্ত্বনা 


আহিন আর জাফরিন পাশাপাশি বসে আছে ছাদের রেলিং এ। জাফরিন অভ্যাসমত ই পা দোলাচ্ছে আর মাথাটা আহিনের কাধের উপর রেখে গুনগুন করছে। আহিন পিঠের পিছনে হাত দিয়ে জাফরিনকে শক্ত করে বুকের কাছে জড়িয়ে রেখেছে। জাফরিনের দিকে যতবার তাকায় নিজেকে খুব সুখী একজন মানুষ মনে হয়। 
#জাফরিন_পর্ব_১২
#jafrin_part_12
#https://banglastory143.blogspot.com/



জাফরিন আহিনের কথায় নিজের খারাপ সত্ত্বাকে ত্যাগ করে খুব মন দিয়ে সংসার করতে ব্যস্ত হয়ে গেছে। আগের মত বাচ্চামী খুব একটা করেনা, তবু আহিনকে ভয় দেখানোর জন্য মাঝে মাঝে বকরী খাওয়ার কথা বলে। 


ছেলেটার মুখের অবস্থা যা হয় তা দেখে ওর প্রচন্ড হাসি পায়। এত ভীতু কেন তার স্বামীটা! ভেবেই খিলখিল করে হেসে উঠে জাফরিন। আহিন হাসির শব্দে জাফরিনের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়, হাসলে মেয়েটার বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা ফিরে আসে।
"হাসছো কেন?" 


"তুই কি ভীতু রে বুদ্ধু!"
"উম, একসময় ছিলাম বটে। এখন পরীর সাথে থেকে থেকে সাহসী হয়ে গেছি, নাহলে কি রাত ৩টা বাজে কেউ পরীর সাথে ছাদে উঠে বসে থাকে!"
জাফরিন কৃত্রিম রাগ দেখায়। পরী পরিচয়টা তার এখন আর ভালো লাগেনা, শুনলেই অতীত মনে পড়ে যায়। কত মানুষের ক্ষতি করেছে এই পরিচয়ে। 


"পরী পরী করিস কেন সবসময়? আমি এখন পরী নই, তোর বিয়ে করা বউ। বারবার বারণ করার পরও কেন ডাকিস আমাকে ওই পরিচয়ে।" 


আহিন বেশ মজা পায় জাফরিনের রাগ দেখে। অথচ এই পরিচয়ে বিয়ের প্রথম রাত থেকে তাকে ভয় দেখিয়ে এসেছে, করুণ অবস্থা করে ছেড়েছে। এখন কিনা এই পরিচয় শুনলেই রাগ করে। 


আহিন জাফরিনের কপালে ঠোট ছুয়ে বলে,
"এত রাগ করো কেন? এই পরিচয় তো তুমি ই প্রথম রাতে দিয়েছিলে। কতদিন ভয় দেখিয়েছো বলো!" 


জাফরিন গোমড়া মুখ করে আহিনের দিকে তাকায়। তারপর হাসি প্রসারিত করে বলল, "পরী পরী যখন করিস, আমাকে বকরী এনে খাওয়া।" 


কথাটা শুনে আহিনের মুখ কালো হয়ে গেল। জাফরিন খিলখিল করে হাসতে থাকে, আহিন পানসে মুখ করে বলে, "এসব বলে খুব মজা নাও নাহ!" 


"তোর চেহারাটা না দেখার মত হয় বুঝলি!" আহিন ও জাফরিনের হাসির সাথে তাল মিলায়, মেয়েটার সহ্য ক্ষমতা প্রচুর। কোনোকিছুতেই মন বেশীক্ষণ খারাপ করে থাকেনা, সময় যত যাচ্ছে তার জাফরিনের গুণগুলো বেশ ভালোলাগছে। 


১ বছর আগে অজানা কারণবশত জাফরিনের গর্ভের বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে। তারপর থেকে সে বেশ চেষ্টা করছে আবার ঘর আলো করার জন্য। কিন্তু এখনো কোনো সুসংবাদ আসেনি। তাও এই ২ বছরের সংসারে দুজনের ভালোবাসার কোনো ঘাটতি নেই। অনাগত বাচ্চার কথা ভেবে যখন আহিনের মনটা ভার হয়ে আসত, জাফরিন বুঝতে পারত । 


আহিনের টি-শার্ট টা খামচে ধরে বলত, "পরীর গর্ভে কখনো মানুষের বাচ্চা জন্ম নেয়না। শুধু শুধু আশা করে আছিস।" 

#জাফরিন_পর্ব_১২
#jafrin_part_12
#https://banglastory143.blogspot.com/

আহিন হাসিমুখে বলত, "আল্লাহ চাইলে কিনা সম্ভব বলো। যদি ভাগ্যে না থাকে তবে আফসোস নেই। আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি হয় তুমি। আর কিছুর প্রয়োজন নেই।" 


তারপর থেকে জাফরিন আর কখনো এসব বলতনা। আহিন ভেবে নিয়েছিল, জাফরিন হয়ত কথাটায় বেশ সান্ত্বনা পেয়েছে। 


জাফরিন অবাকদৃষ্টিতে আহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আহিন বকরীর মাংস রান্না করতে ব্যস্ত, বেশ যত্নসহকারে সব নিজের হাতে করছে। ক্ষীরের পায়েস ও বসিয়ে দিয়েছে বাহিরের ইটের চুলায়। 


জাফরিনকে সামনে বসিয়ে রেখেছে, কিছুতে হাত লাগাতে দিচ্ছেনা। জাফরিনের চোখ দুটো বারবার ছলছল করে উঠছে। এই মানুষটা তাকে এত ভালোবাসে, কখনো খারাপ পরী ভেবে ভালোবাসায় খামতি রাখেনি। হঠাৎ তার নাকে পোড়া পোড়া গন্ধ ভেসে আসে। 


"রান্না কি পুড়ে যাচ্ছে? পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি!"
আহিন চোখ তুলে জাফরিনের দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠে। চুলা থেকে জাফরিনের শাড়ির আচলে আগুন লেগে গেছে। আহিন দ্রুত এসে জগের পানি ঢেলে জাফরিনকে বুকে টেনে নেয়। 


ভয়ে তার বুক এখনো ধুকপুক করছে, ভাগ্যিস সময়মত দেখতে পেয়েছে৷ "আরেহ বুদ্ধু এত ভয় পাচ্ছিস কেন?" "দেখলেনা, শাড়ীতে আগুন লেগে গেছে। ঠিকসময় যদি...." 


"কিচ্ছু হতনা, সাধারণ আগুনে আমাদের কিছু হয়না।" 


"কিন্তু সেদিন তো রিফাত তোমাকে আগুন দিয়ে পুড়াতে চেয়েছিল!" 


"হ্যা তাই আমার কিছু হয়নি, কাঁচের বোতল গলে যাওয়ার পর আমি সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। আর ও তাজা রক্ত ঢালার কথা ভুলে গিয়েছিল, তাই শুধু সাধারণ আগুন আমার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।" 


"আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তোমাকে আর এখানে বসতে হবেনা, বাসায় যাও। আমি রান্না শেষ করে নিয়ে আসছি।" 


"বাসায় খাবনা, বাশঁঝাড়ে বসে খাব।"
"এসব কি পাগলামী জাফরিন!" কথাটা শুনে জাফরিন মুখ গোমড়া করে ফেলে। 
#জাফরিন_পর্ব_১২
#jafrin_part_12
#https://banglastory143.blogspot.com/


আহিন তা দেখে অগত্যা বলল,"আচ্ছা আচ্ছা, তাই হবে। আমি রান্না শেষে ডাকব।" 


বাশঁঝাড়ে বসে পা দোলাতে দোলাতে জাফরিন আহিনের হাত থেকে খাচ্ছে আর মাঝে মাঝে বাচ্চামী করছে। জাফরিনের মুখ মুছিয়ে দিয়ে আহিন বলল,
"খাওয়া শেষ, এখন চলো বাসায় যাবে।" 


"আরেকটু থাকিনা, দেখ আজকের চাঁদটা কত বড় করে উঠেছে। বেশীক্ষণ না মাত্র ১০ মিনিট থাকব।" 


"ঠিক আছে, তুমি বসো। আমি এইগুলো চট করে রেখে আসছি।" 


আহিন চলে যাওয়ার পর হঠাৎ একটা বড় ছুরি এসে জাফরিনের পাশ দিয়ে একটা বাশের মাঝামাঝি ঢুকে বাশঁ দুখন্ড হয়ে যায়। জাফরিন ভয় পেয়ে উঠে চারিদিকে তাকাতে থাকে, কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা সে। তবে মনে হচ্ছে তার আশেপাশে কেউ আছে, কারো পায়ের তলায় বাশেঁর শুকনো পাতাগুলো দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার শব্দ কানে আসছে। 


জাফরিন চিৎকার করে আহিনকে ডাকতে ডাকতে ছুটে যায়। কিন্তু কেউ তাকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। এর মধ্যে আহিন চলে আসে, জাফরিনকে মাটিতে পড়ে কোকড়াতে দেখে অস্থির হয়ে যায়। 


জাফরিনের কাছাকাছি আসতেই কেউ বড় বাশ দিয়ে তার মাথা বরাবর আঘাত করে। আহিন নিস্তেজ হয়ে মাটিতে চিৎ হয়ে পড়ে থাকে। 


জাফরিন প্রানপণে চিৎকার করছে কিন্তু আওয়াজ তত বের হচ্ছেনা। ঠোটের কাছে এসে শুণ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। আহিনের শরীরের উপর বসে মুখোশধারী লোকটা শান দেওয়া ছুরি দিয়ে আস্তে আস্তে আহিনের গলা কাটতে থাকে যেন কুরবানীর গরু জবাই করছে। 


আহিনের রক্তে মাটি ভিজে যাচ্ছে, তার গলা দিয়ে হোস হোস শব্দ বের হচ্ছে। জাফরিন এই দৃশ্য নিজের চোখে সহ্য করতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠে। 


বারবার মাটি থেকে উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করে।
কিন্তু পারছেনা, মনে হচ্ছে তার উপর বিশাল আকৃতির পাথর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। 


আহিনের সদ্য তাজা রক্ত মাখানো ছুরি নিয়ে মুখোশধারী জাফরিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। তার চুলের মুঠি ধরে দাড় করায়, ততক্ষণে চেহারা থেকে মুখোশ সরে যায়। জাফরিনের চিনতে দেরী হয়না, এই সেই রিফাত। কিন্তু সে তো শুনেছিল রিফাত মারা গেছে, তাহলে!!! 


বিশ্রী একটা হাসি দেয় রিফাত। জাফরিনের রাগে গা থরথর করে কাপছে, রিফাতের পেট বরাবর ঘুষি মারে সে। রিফাত টাল সামলাতে না পেরে বাশঁঝাড়ের ভিতর পড়ে যায়। 
#জাফরিন_পর্ব_১২
#jafrin_part_12
#https://banglastory143.blogspot.com/


জাফরিন ছুটে পালিয়ে যেতে চায় কিন্তু দুভার্গ্য ইটের সাথে হোচট খেয়ে পড়ে যায়। রিফাত উঠে এসে জাফরিনের শাড়ির আচল তার গলায় পেচিয়ে দিয়ে টানতে থাকে। 


জাফরিনের দম বন্ধ হয়ে আসছে, মনে হচ্ছে এক্ষুনি নিঃশ্বাস আটকে মরে যাবে। আলতো করে হালকা ফোলা পেটটার উপর হাত রাখে সে। মনে মনে বলে,
"এবারো তোকে বাঁচাতে পারলামনা, আর তোর বাবাকেও না।" 


নিজের অনাগত সন্তানের কথা ভেবে মৃত্যুর যন্ত্রণা টা আরো বেশী হচ্ছে তার। তার সাথে এখন তাদের ভালোবাসার চিহ্ন ও বিলুপ্ত হতে চলেছে। কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে জাফরিনের ছটফটানিও বন্ধ হয়ে যায়, রিফাত জাফরিনের নাকের কাছে হাত নেয়, জাফরিনের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। তারপর শিস বাজাতে বাজাতে নিজের পথে হাঁটা দেয়। 


আবছা অন্ধকারে পড়ে থাকে জাফরিন আর আহিনের মৃত শরীর।
#জাফরিন_পর্ব_১২
#jafrin_part_12
#https://banglastory143.blogspot.com/




🔰 🔰 🔰 চলবে 🔰 🔰 🔰

1 comment:

Powered by Blogger.