জাফরিন - পর্ব-০৪ | Jafrin - Part-04

গল্প | #জাফরিন 💫

পর্ব | ০৪

লেখক | আস্থা রাহমান শান্ত্বনা


বাহিরে প্রচুর চেচামেচির আওয়াজ শুনে আহিন শোয়া থেকে উঠে বসল। শরীর টা ভীষণ দূর্বল লাগছে। কোনোমতে গায়ে টি-শার্ট জড়িয়ে রুমের বাহিরে বেরিয়ে এল। 

#জাফরিন_পর্ব_০৪
#jafrin_part_04
#banglastory143

আয়শা খানম জাফরিনকে উচু গলায় ভীষণ বকাঝকা করছেন। জাফরিন আগের মতই পাত্তা না দিয়ে মাথা নিচু করে পায়ের নখ দিয়ে মেঝে খুটতে ব্যস্ত। আহিন গিয়ে জাফরিনের পাশে দাড়াতেই আয়শা খানম তাকে টেনে তার পাশে দাড় করিয়ে গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, "তোর শরীর এখন ঠিক আছে তো?" 


"হ্যা মা, ঠিক আছি এখন। কি হয়েছে?"


"কি হয়নি! কত বড় সাহস তোকে দিয়ে বকরী রান্না করায়! সেটার গন্ধ সহ্য করতে না পেরে তো তুই বমি করে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি। মেয়েটা তোকে কোলে বয়ে এনে আমাকে জিজ্ঞেস করে কোথায় রাখব এটাকে!" 


কথাটা শুনে আহিন জাফরিনের দিকে তাকায়। আয়শা খানম আবার বলতে শুরু করে, "কেমন আক্কেল এই মেয়ের! তুই এর সাথে সারাজীবন সংসার করবি কি করে?" 


"এসব কথা এখন থাক। তোমরা ঘুমাতে যাও, দাদা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। এখন ঘুম ভেঙ্গে চেচামেচি শুনলে রেগে যাবে।" 


আয়শা খানম জাফরিনকে বকতে বকতে নিজের রুমে ঢুকে যায়। জাফরিন এখনো একইভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। আহিন একবার তাকিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। 

#জাফরিন_পর্ব_০৪
#jafrin_part_04
#banglastory143


খানিকবাদে জাফরিন রুমে ঢুকে আহিনের পাশে বসে। আহিন ল্যাপটপে কাজ করছিল, ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে জাফরিনের দিকে তাকিয়ে বলল,

"কিছু বলবেন?" 


খাবি?" আহিন আতকে উঠল। জাফরিন কি তাকে এখন আবার তার চাটা বকরীর মাংস সাধবে! সাধার মেয়ে ও নয়, জোর করে গিলিয়ে দিবে। 


আহিন উঠে বেরিয়ে যাবে এমনসময় জাফরিন শক্ত করে আহিনের হাত চেপে ধরে। আহিন থমকে দাঁড়িয়ে যায়। জাফরিন চোখ বড় বড় করে বলে, 


"কোথাও নড়বিনা! এখানে বস।"


আহিন না বসে একিভাবে দাঁড়িয়ে রইল। জাফরিন আরো দু'বার আহিনকে বসতে বলল, কিন্তু আহিন ভয়ে বসলনা। তার ভাবনা বসলেই নিশ্চয় জাফরিন তাকে জোর করে মাংস গিলাবে, এমন হলে বমির ঠেলায় তার নাড়িভুড়ি সব বেরিয়ে আসবে। জাফরিন আহিনের হাত ছেড়ে সামনে গিয়ে তার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। চড় খেয়ে আহিন চুপচাপ বিছানায় গিয়ে বসল। 


জাফরিন মস্ত বাটিতে চামচ নাড়তে নাড়তে বলল,

#জাফরিন_পর্ব_০৪
#jafrin_part_04
#banglastory143


"বেশী বাড় বাড়তে মানা করেছি না! আমার কথা না শুনলে চড়ের উপর রাখব, এভাবে একদিন বধির হয়ে যাবি। তখন আর কারো কথা ই শুনতে হবেনা।" 


তারপর চামচে স্যুপ তুলে আহিনের মুখের কাছে ধরল। আহিন কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নিল। 


জাফরিন টেবিলের উপর পা গুটিয়ে বসে আচারের বয়ামে হাত ঢুকিয়ে অনেকটা আচার তুলে নিয়ে মজা করে খাচ্ছে, আহিন আড়চোখে কয়েকবার জাফরিনের দিকে তাকাল। বাচ্চা মেয়ের মত খাবলা খাবলা তুলে সারামুখে মাখিয়ে খাচ্ছে। 

"আচার কোথায় পেলেন?" 


"পাশের বাড়ীর ছাদ থেকে।" আহিন হতাশ হয়ে কপাল চাপড়াল। এই মেয়ে শেফালি দাদীর শুকাতে দেওয়া আচার নিয়ে এসেছে, দাদী তো এইবার পুরো বাড়ীতে তুমুল যুদ্ধ বাধিয়ে ছাড়বে। আচারের এক টুকরো চুষে খেতে খেতে বলল 


"ভাবিসনা, কেউ দেখেনি। উড়ে গিয়ে টুপ করে নিয়ে এসেছি! 


জাফরিনের কথা শেষ হতেই শেফালি দাদী চিৎকার করতে করতে রুমে ঢুকে গেল। জাফরিনের হাতে বয়াম টা দেখে উনি অবাক হলেন না উলটো আয়শা খানমকে ডেকে বললেন, "আমি বলেছিনা, আমার চোখ খারাপ হয়নি। এই মেয়ে দুপুরবেলায় উড়ে ছাদে গিয়ে আমার আচারের বয়াম নিয়ে পালিয়ে এসেছে।" 


আয়শা খানম রাগান্বিত চোখে জাফরিনের দিকে এগিয়ে বয়াম টা কেড়ে নিয়ে বলল, "আচারের বয়াম টা তুমি চুরি করেছো?" 


জাফরিন উত্তরে এইপাশ ওপাশ একবার মাথা হেলায়। পাশ থেকে শেফালি দাদী চেচায়, 


"এই মেয়ে ভুত-পেত্নী আমি হলপ করে বলতে পারি।"

আহিন আমতা আমতা করে বলল, "এসব কি বলছেন দাদী? ও চুরি করেছে সেটা ঠিক কিন্তু উড়ে গিয়ে চুরি করেছে কিভাবে সম্ভব! 


আপনার বয়স আসলেই বেড়ে গেছে, এইজন্য বলি চশমা পড়েন।" এসব ভুজংভাজাং দিয়ে আহিন ব্যাপারটা সামলে নিল। 


সবাই চলে যাওয়ার পর রুমের দরজা আটকে দিয়ে জাফরিন কাছে গিয়ে বলল,

"আপনার যা খেতে ইচ্ছে করবে আমায় বলবেন। অন্যের জিনিস চুরি করতে যান কেন!" 

#জাফরিন_পর্ব_০৪
#jafrin_part_04
#banglastory143


জাফরিন মূহুর্তে বড় হাসি দিয়ে বলল,

"সত্যি এনে খাওয়াবি? তাহলে আমাকে ১২কেজি রসগোল্লা এনে দে।" আহিন বিরক্ত নিয়ে তাকায়, জাফরিন খিলখিল করে হাসতে থাকে।

ছাদের এককোণায় বসে জাফরিন গোগ্রাসে মিষ্টি খাচ্ছে, ছানার রস মুখ বেয়ে তার চিবুক অবধি চলে এসেছে। সেদিকে তার কোনো হুশ নেই। 


আহিন সিগারেটে একটান দিয়ে ধোয়া ছাড়ে আর কাঁশতে থাকে। জীবনে সিগারেট ছুয়ে দেখেনি সে, আজ খাওয়ার চেষ্টা করেছে কারণ সে শুনেছি সিগারেট খেলে নাকি টেনশান কমে। জাফরিন তাকে যেমন টেনশান দিচ্ছে তাতে তার রুহ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। 


গভীর রাতে ১২কেজি মিষ্টি নিয়ে পাইপ বেয়ে ছাদে উঠেছে সে, সামনের দরজা দিয়ে এত মিষ্টি নিতে দেখলে আবার বাসায় ঝামেলা বাধবে। মেয়েটাকে ডেকে এনে বসিয়ে দিয়েছে মিষ্টির সামনে। ভাবতে ভাবতে আহিন জাফরিনের পাশে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে। 


"আপনি সারাক্ষণ এলোমেলো ভাবে চুল ছেড়ে রাখেন কেন? সুন্দর করে বাধতে পারেননা?"

জাফরিন মিষ্টিভর্তি মুখ নিয়ে আহিনের দিকে তাকিয়ে কিসব বলে। আহিন বুঝতে না পেরে বলে~ 


"খাওয়া শেষ করে বলুন।"

জাফরিন মুখ পুরে রাখা সব মিষ্টি গিলে নিয়ে বলল,

"তাহলে কি তুই আর আমাকে ভয় পাবি!" বলে আবার খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে। আহিনের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, মূহুর্তে সে ছাদ থেকে নিচে নেমে চলে আসে। 


"আমি বোধহয় এবার পাগল হয়ে যাব, দোস্ত!"

রিফাত উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করে, "কেনরে? কি হয়েছে?" 

#জাফরিন_পর্ব_০৪
#jafrin_part_04
#banglastory143


"এই মেয়েটা দিন দিন আমাকে যেভাবে অত্যাচার করছে তাতে আমি পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম। একটা না একটা বায়না লেগেই আছে। কথা না শুনলে চড়-আচড় মাঝে মাঝে কিল-ঘুষি তো আছেই।" 


এসব শুনে রিফাত হাসে আর ভাবে, "আহিনকে বোকা বানিয়ে জাফরিন ভালোই মজা নিচ্ছে, কিন্তু আমার সাথে এসব পারবেনা। কিন্তু এই মোক্ষম সুযোগ টা তো আমার কাজে লাগানো উচিত।" 


রিফাত মুখে চিন্তাভাব এনে বলল,

"খুব ই দুশ্চিন্তার ব্যাপার। তবে আমার কাছে এর একটা সমাধান আছে।" 


আহিন মূহুর্তেই আশান্বিত হয়ে বলল,

"কি সমাধান বল! যা বলবি তাই করব, তাও আমি এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই।"


"তুই জাফরিনকে আমার বাসায় নিয়ে আয়। আমার এক মামা আছে, খুব নামকরা ওঝা। ও যদি পরী হয়েই থাকে, মামা খুব ভালো করে টাইট দিতে পারবে। দেখবি এই জীবনে সে আর তোর কিংবা তোর পরিবারের আশেপাশে ও যাবেনা।" 


"সত্যিই কাজ হবে?"

"আমার উপর ভরসা রাখ। তুই শুধু কাল ওকে আমার বাসায় নিয়ে আয়, বাকিটা আমি দেখব।" 


পরের দিন সন্ধ্যায় আহিন জাফরিনকে নিয়ে রিফাতের বাসায় আসে। জাফরিনকে ভেতর ঘরে বসিয়ে রিফাত আর আহিন বেরিয়ে আসে। 


"দোস্ত, তোর মামা কোথায়?"


"একটু বাদেই চলে আসবে।"


"অনেক কষ্টে এখানে নিয়ে এসেছি। দেখিস, কাজটা যেন হয়।"

#জাফরিন_পর্ব_০৪
#jafrin_part_04
#banglastory143


"কিন্তু একটা কথা আছে দোস্ত। মামা বলল, আমি আর মামা ছাড়া বাসার আশেপাশে যেন আর কেউ না থাকে। কারণ, বুঝিস ই ভুত-প্রেতের ব্যাপার সেপার। তুই বরং বাসায় চলে যা। কাজ হয়ে গেলে আমি তোকে কল দিয়ে জানাব। এই পরীকে এই দুনিয়া থেকে তার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিব।" 


আহিন একটু চুপ থেকে আমতা আমতা করতে থাকে। রিফাত তা বুঝতে পেরে বলল~ 


"তুই কি আবার ওকে তোর বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাস? ও কিন্তু তোর পরিবারের বড় ধরণের ক্ষতি করার অপেক্ষায় আছে।" 


আহিন হকচকিয়ে উঠে বলল~


"না, অসম্ভব। আমি চলে যাচ্ছি। তুই কাজ হয়ে গেলে আমাকে জানাস।"


আহিনকে বিদায় দিয়ে রিফাত ভেতরের ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয়। তারপর সব নিস্তব্ধ.....

#জাফরিন_পর্ব_০৪
#jafrin_part_04
#banglastory143


🔰 ❣️ 🔰 ❣️ 🔰 ❣️ 🔰

🔰 ❣️ 🔰❣️ 🔰

🔰 ❣️ 🔰

🔰 ❣️

চলবে,,,,,,,,,,,


(#রোমান্টিক + #থ্রীলার + #রহস্যময়ী + #গোয়েন্দা   টাইপের আরো গল্প পড়তে চাইলে আমাদের সঙ্গে থাকুন।)

No comments

Powered by Blogger.